ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ময়মনসিংহে আলোচিত সৌরভ হত্যায় চাচাসহ গ্রেপ্তার ৩

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৮ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০২৪
ময়মনসিংহে আলোচিত সৌরভ হত্যায় চাচাসহ গ্রেপ্তার ৩

ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহে চার টুকরো করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ওমর ফারুক সৌরভ (২৪) হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা তার চাচা অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ইলিয়াছ আলীসহ (৫৫) তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এছাড়া এঘটনায় মরদেহ গুমের জন্য ব্যবহৃত প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৪ জুন) দুপুর ২টায় ময়মনসিংহ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার (এসপি) মাছুম আহম্মেদ ভূঞা।

এর আগে এদিন ভোরে ঢাকা ও দেশের সীমান্তবর্তী ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলায় জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) ও থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।  

গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন- ইলিয়াসের শ্যালক আহাদুজ্জামান ফারুক (৩০) এবং মৃতদেহ বহনকারী গাড়ির ড্রাইভার আব্দুল হান্নান আকন্দ (৬৫)।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, আসামি ইলিয়াছ আলী নিহত ওমর ফারুক সৌরভের আপন চাচা। চলতি মাসের ১২ মে প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে ইলিয়াস আলীর মেয়ে ইসরাত জাহান ইভাকে গোপনে বিয়ে করেন সৌরভ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে ইলিয়াস। এর আগে তিন বছর আগে আব্রাহাম নামে এক কানাডা প্রবাসী শিক্ষার্থীর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল ইভার। তিনি বর্তমানে কানাডায় স্টুডেন্ট ভিসায় পড়াশোনা করছেন। তার সঙ্গে ডিভোর্সও হয়নি তার। কিন্তু সম্প্রতি সৌরভ গোপনে তার চাচাতো বোনকে বিয়ে করেন। এই বিষয়টি ইভার পরিবার ভালোভাবে নেয়নি।

এ নিয়ে ইলিয়াসের সঙ্গে তার আপন বড় ভাই ইউসুফ আলীর বিরোধ চরম আকার ধারণ করলে সৌরভকে মেরে ফেলার হুমকি দেন ইলিয়াস। এরই মধ্যে গত ১৬ মে ইভাকে কানাডা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এরপর গত ২ জুন বিকেলে নিহত সৌরভ ময়মনসিংহ আসেন ইভার প্রথম স্বামী আব্রাহামের এক আত্মীয়র সঙ্গে দেখা করতে। এই খবর পেয়ে ইলিয়াসের ছেলে মৃদুল (১৭) সৌরভকে ফোন করে নগরীর গোহাইলকান্দি (প্রাইমার স্কুল সংলগ্ন) তাদের বাসায় ডেকে নেয়। সেখানে ইলিয়াছ বাসার নিচ তলার একটি কক্ষে নিয়ে হাত-পা বেঁধে রেখে তার শ্যালক আহাদুজ্জামান ফারুককে ফোন করে বাসায় ডেকে আনেন। পরবর্তীতে তারা দু’জনে মিলে সৌরভকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে মরদেহ বাথরুমে রেখে দেন।  

মরদেহ গুম করার উদ্দেশ্যে পূর্বপরিকল্পিতভাবে নগরীর গাঙ্গীনারপাড় থেকে একটি ট্রলি ব্যাগ (লাগেজ), পলিথিন ও হ্যান্ডগ্লাভস কিনে বাসায় নিয়ে যায়। পরে তারা বাথরুমে রাখা সৌরভের শরীর থেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথা এবং দুই পায়ের ঊরু বিচ্ছিন্ন করে পলিথিনে প্যাকেট করে লাগেজের মধ্যে রাখে। এ সময় তারা মাথাটি স্বচ্ছ পলিথিনে মুড়িয়ে একটি শপিং ব্যাগে রাখেন।

পরে গত ২ জুন রাত সাড়ে ১২টার দিকে লাগেজ ও শপিং ব্যাগে রাখা মরদেহ গুম করার উদ্দেশ্যে একটি প্রাইভেটকার ভাড়া করে সদর উপজেলার মনতলা ব্রিজের ওপর থেকে সুতিয়া নদীতে ফেলে দেন তারা। পরদিন সকালে স্থানীয়রা নদীতে মরদেহ দেখে থানায় খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহত সৌরভের চার খণ্ডের মরদেহ উদ্ধার করে।  

এসপি আরও জানান, নিহত সৌরভ ঢাকাস্থ প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল। তার বাবা ডাক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী। বর্তমানে তিনি পরিবার নিয়ে ঢাকায় বসবাস করলেও তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার তারাটি গ্রামে।   

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামীম হোসেন, রায়হান, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মো. ফারুক হোসেন, কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মাঈন উদ্দিনসহ জেলা পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৮ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।