ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

রায়পুরে ৭ পুলিশ সদস্যের নামে মামলায় পিবিআই’র প্রতিবেদনেও বাদীর নারাজি 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩২ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০২৪
রায়পুরে ৭ পুলিশ সদস্যের নামে মামলায় পিবিআই’র প্রতিবেদনেও বাদীর নারাজি 

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে সাত পুলিশ সদস্যের নামে করা মামলায় আদালতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দিয়েছেন বাদী রিনা আক্তার।  

এতে মামলাটি তৃতীয় বারের মতো তদন্তের জন্য জেলা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

 

মঙ্গলবার (৯ জুলাই) দুপুরে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি অঞ্চল রায়পুর আদালতের বেলায়েত হোসেন এ আদেশ দেন।  

সন্ধ্যায় সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি অঞ্চল রায়পুর আদালতের বেঞ্চ সহকারী আবদুল মান্নান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আদালত সূত্র জানান, আবদুর রহিম রনি নামে এক আসামিকে আটকের পর রায়পুর থানা পুলিশ কর্তৃক মারধরের ঘটনায় তার স্ত্রী রিনা আক্তার বাদী হয়ে ওই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন।  

গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর আদালতে দায়েরকৃত মামলার আসামিরা হলেন রায়পুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আবু হানিফ, নুরুল ইসলাম, মো. আবু হানিফ, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সফিক মিয়া, সাখাওয়াত হোসেন, কনস্টেবল আতিক উল্যা ও ইউসুফ ঢালি।

ভুক্তভোগী রনি রায়পুর উপজেলার চরপাতা ইউনিয়নের পূর্ব চরপাড়া গ্রামের মো. শহিদুল্লাহর ছেলে।

আদালতের বেঞ্চ সহকারী আবদুল মান্নান জানান, মামলাটি প্রথমে লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপারকে (এসপি) তদন্ত দেওয়া হয়। জেলা পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ১৫ জানুয়ারি বাদী আদালতে নারাজি দেয়। এতে ফের পিবিআই নোয়াখালী কার্যালয়কে মামলাটি তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়। পিবিআই তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দেয়। এবারও বাদী প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দেয়। এতে তৃতীয় বারের মতো মামলাটি তদন্তের জন্য সিআইডিকে দায়িত্ব দিয়েছেন আদালত। আদেশ কপি খুব শিগগিরই সিআইডির কাছে পাঠানো হবে।

বাদীর আইনজীবী আবদুল আহাদ শাকিল পাটওয়ারী বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামিদের কল-ডাটা রেকর্ডিং (সিডিআর) সংগ্রহ করেননি। হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজের হার্ডডিস্ক জব্দ করেনি এবং ফরেনসিকে না দেওয়ায় তদন্তে গাফিলতি ছিল। এতে বাদী পিবিআইর তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দেন। আদালত বাদীর আবেদন মঞ্জুর করে মামলাটি পুনরায় সিআইডি লক্ষ্মীপুরকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

এজাহার সূত্র জানায়, ১৭ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার চরপাতা ইউনিয়নের বর্ডার বাজার রায়পুর-চাঁদপুর সড়ক থেকে পুলিশ রনিকে আটক করে। তখন তার সঙ্গে গরু বিক্রির ৯০ হাজার টাকা ছিল। ওই টাকা অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা নিয়ে গেছেন। পরে তাকে থানায় নিয়ে এসে মারধর করে এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে সেখানে পানি খেতে চাইলে টিউবওয়েলের সঙ্গে তার মাথায় আঘাত করা হয়। আটকের খবর পেয়ে রনির স্ত্রী রায়পুর থানায় বার বার গেলেও স্বামীর সন্ধান পাননি। পরে তিনি সদর থানা, জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কার্যালয় ও জেলা কারাগারেও খোঁজ নিয়ে স্বামীর সন্ধান পাননি। ফের রায়পুর থানায় গেলে সেখানে রনির মোটরসাইকেল দেখতে পান তিনি। সেখানে স্বামীর সন্ধান চাইলে বিভিন্ন কথা শুনতে হয় তাকে। পরে তিনি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হানিফকে কল দিয়ে স্বামীর সন্ধান চান। হানিফ তার স্বামীকে ছাড়তে ২ লাখ টাকা দাবি করেছেন। এতো টাকা নেই বললে জানালে রনিকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে বলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা তাকে জানিয়ে দেন।

এদিকে, ঘটনার পর থানা পুলিশ জানায়, ১৮ ডিসেম্বর ডাকাতির প্রস্তুতিকালে রনিসহ দুজনকে একনলা বন্দুক, ২ রাউন্ড কার্তুজ, দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, ১৮০টি ইয়াবা ট্যাবলেট ও ২০০ গ্রাম গাঁজাসহ আটক করা হয়। পরে পুলিশ বাদী হয়ে ডাকাতির প্রস্তুতি, অস্ত্র আইন ও মাদকদ্রব্য আইনে মামলা দায়ের করে আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠায়।

বাদী রিনা আক্তার বলেন, দিনে-দুপুরে আমার স্বামীকে আটক করা হয়। পরে সাজানো ঘটনায় আমার স্বামীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। অভিযুক্তরা আমরা স্বামীকে মারধরও করেছেন। এতে আমি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। মামলার ঘটনা প্রমাণের জন্য যেসব আলামত সংগ্রহ করার জন্য আবেদন করেছি। তা তদন্তকারী কর্মকর্তারা সংগ্রহ না করেই আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন। পুলিশ ও পিবিআই তদন্তে ত্রুটি রেখেছে। এজন্য আমি নারাজি দিয়েছি।  

বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০২৪
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।