ঢাকা, রবিবার, ১৭ ভাদ্র ১৪৩১, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৬ সফর ১৪৪৬

জাতীয়

স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের খবরে হাজির স্ত্রী, এলাকায় তোলপাড়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০২৪
স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের খবরে হাজির স্ত্রী, এলাকায় তোলপাড় ইনসেটে ইতালীপ্রবাসী আলআমিন

মাদারীপুর: মাদারীপুরে প্রথম স্ত্রীকে না জানিয়েই ইতালীপ্রবাসী আবার বিয়ের পিঁড়িতে বসছিলেন। খবর পেয়ে বাবার বাড়ি থেকে ছুটে আসেন প্রথম স্ত্রী অনার্স পড়ুয়া ছাত্রী।

শ্বশুরবাড়িতে তিনি হাজির হলে ভন্ডুল হয়ে যায় বরযাত্রা।  

এতে ক্ষুব্ধ হয়ে টেনে-হিঁচড়ে স্বামীর বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয় অনার্স পড়ুয়া সেই ছাত্রীকে। মারধর করায় অসুস্থ হয়ে পড়ে মেয়েটি। এদিকে প্রথম স্ত্রী আসার খবরে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় ইতালীপ্রবাসী আলআমিন।  

মাদারীপুর সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়নের উত্তর শিরখাড়া গ্রামের শুক্রবার (১২ জুলাই) এই ঘটনা ঘটে। এতে এলাকাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।  

অভিযুক্ত আল আমিন ওই এলাকার মোহাম্মদ আলীর ছেলে।

জানা গেছে, স্ত্রীকে না জানিয়েই দ্বিতীয় বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন আলআমিন, বিয়ের গেট নির্মাণ করেন বাড়ির সামনে। আলোকসজ্জাও করা হয় বিয়েবাড়িতে। আসতে শুরু করেন আত্মীয় স্বজন ও পাড়াপ্রতিবেশীও। শুক্রবার দুপুরে বরযাত্রা যখন রওনা হবে, ঠিক তখনই হাজির হন আল আমিনের স্ত্রী। খবর পেয়ে সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থলে গেলে তেড়ে আসেন আল আমিনের স্বজনরা।

জানা যায়, তিন বছর আগে অনার্স পড়ুয়া এক মেয়ের সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয় ইতালীপ্রবাসী আল আমিনের। এরপর প্রেমের সম্পর্ক হলে, দুজনের পরিবারকে জানানো হয়। সবার সম্মতিতে গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি মেয়েটির বাড়িতে আসে বরপক্ষ। সেখানে বসে আল আমিন ইতালী থাকা অবস্থায় মোবাইলফোনের মাধ্যমে দুজনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর মেয়েটিকে নিয়ে আসা হয় স্বামীর বাড়িতে। এর কিছুদিন পর মেয়েটি বাবার বাড়িতে চলে আসে। এক মাস আগে ইতালী থেকে বাড়িতে আসে আল আমিন। স্ত্রীকে না জানিয়ে অন্যত্র বিয়ে করবে, এমন খবরেরই শুরু হয় হট্টগোল। পরিস্থিতি সামাল দিতে ছুটে আসে পুলিশও।

ভুক্তভোগী মেয়েটি জানায়, ‘পারিবারিকভাবে আল আমিনের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে। আমাকে কিছুই না জানিয়ে আল আমিন অন্যত্র বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমি কিছুতেই তা মেনে নিতে পারছি না। আমি প্রয়োজনে থানায় যাব, থানা পুলিশ সহযোগিতা না করলে, আমি আদালতের দ্বারস্থ হব। আমি আমার স্বামীর স্বীকৃতি আদায় করেই ছাড়ব। ’

অভিযুক্ত আল আমিনের বাবা মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমার ছেলের সাথে ওই মেয়েটির বিয়ে হয়েছে। কিন্তু এখনো ডিভোর্স হয়নি। সেই ডিভোর্স দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আমার ছেলেকে আমরা অন্যত্র বিয়ে করাতে চাই। সেই প্রস্তুতিও ঠিকভাবে নেওয়া হয়েছে। মেয়েটি খারাপ, এজন্য তাকে আমার বাড়িতে আর তুলব না। ’

শিরখাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য ও আল আমিনের চাচাতো ভাই নুর হোসেন বলেন, ‘আল আমিন ভুল বুঝে ওই মেয়েটিকে বিয়ে করেছিল। পরে মেয়েটি আরেকটি ছেলের সাথে চলে যায়। শুনেছি সেই ছেলের সাথে আবারো মেয়েটির বিয়ে হয়েছে। এজন্য এই বাড়িতে মেয়েটিকে আর গ্রহণ করা হবে না। ’

আল আমিনের পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য জানান, প্রয়োজনে মামলা হবে। আইনগতভাবে সমাধান হবে। তবুও ওই মেয়েটিকে আমরা আর কখনই মেনে নেব না।

মাদারীপুর সদরের শ্রীনদী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক (আইসি) মো. বাবুল আক্তার বলেন, একটি উত্তেজনার খবর পেয়ে আল আমিনের বাড়িতে যায় পুলিশ। সেখানে প্রথমে আল আমিনের বাবা মোহাম্মদ আলী উপস্থিত থাকলেও পুলিশের উপস্থিত টের পেয়ে তিনিও পালিয়ে যান। এছাড়া মেয়েটি বাড়িতে হাজির হওয়ার খবরে আল আমিন সঙ্গে সঙ্গে পালিয়ে যায়। মেয়েটিকে মারধর করা হয়েছে, এমন অভিযোগে মামলা করলে আসামি ধরে আদালতে পাঠানো হবে।

মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএইচএম সালাউদ্দিন জানান, ‘ভুক্তভোগী থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া মারধরের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ’

বাংলাদেশ সময়: ২৩২৬ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০২৪
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।