যশোর: কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে যশোরের চাঁচড়ার ত্রিমুখী সড়ক অবরোধ করেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। এতে বেনাপোল স্থলবন্দর সড়কেও যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুর ১২টা থেকে যশোরের চাঁচড়া গোল চত্বরে বেনাপোল-খুলনা-কুষ্টিয়া-রাজশাহী-ঢাকা সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে এ কর্মসূচি পালন করছে যবিপ্রবির কোটা বিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
তারা জানান, সোমবার (১৫ জুলাই) সারা দেশে ঢাবি, চবি, জাবিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নির্মম নির্যাতনের কারণে আজকের অবরোধে যশোরের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা কোটার বিরুদ্ধে সম্মিলিত কণ্ঠে ‘কোটা না মেধা? মেধা মেধা’, আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘আঠারোর পরিপত্র, পুনর্বহাল করতে হবে’, ‘কোটাপ্রথা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটাপ্রথার কবর দে’, ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হল থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। সোমবার (১৫ জুলাই) রাত সাড়ে ৮টার দিকে মালামালসহ হল থেকে বের করে দেওয়া হয় সামিউল আজিম নামে ওই শিক্ষার্থীকে। সামিউল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
আন্দোলনকারীদের সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী আন্দোলনে অংশ নিয়ে প্রতিদিন নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুল ইসলাম হৃদয় এবং সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক কামরুল হাসান শিহাবের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের ৪২২ নম্বর কক্ষে যান। এ সময় তারা আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকায় এবং কর্মসূচিতে রাজাকার বলে স্লোগান দেওয়ায় সামিউল আজিমকে মারপিট করে মালামালসহ হল থেকে বের করে দেন।
ভুক্তভোগী সামিউল আজিম বলেন, ‘সোমবার দুপুরে কর্মসূচি শেষে হলে ফিরে দেখি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হলের গেটে তালা মেরে স্লোগান দিচ্ছেন। আমি বিষয়টি স্বাভাবিকভাবেই নিই। সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের তিন নেতাকর্মী আমার রুমে ঢোকেন। এরপর দরজা-জানালা বন্ধ করে দেন। তারা জিজ্ঞেস করেন এখানে কোটা সংস্কার আন্দোলন কারা করছেন। আমি উত্তর দিলে বলেন, রাজাকার স্লোগান কেন দিয়েছিস? এরপর তারা আমাকে খুব মারধর করেন। এমনকি ঝাঁটাপেটাও করেন। আমাকে মারধর করেছে ছাত্রলীগের হৃদয়, শিহাব ও রাকিব। এভাবে মেরে শিক্ষার্থী সমাজকে দাবিয়ে রাখা যাবে না। আমরা আন্দোলন করছি, সেটা চালিয়ে যাব। ’
সামিউল আজিম জানান, মারধর ও হল থেকে বের করে দেওয়ার বিষয়টি তিনি হল প্রভোস্টকে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন।
তবে শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মো. তানভীর ইসলাম বলেন, ‘আমি হলেই আছি। শিক্ষার্থী বের করে দেওয়ার কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে অন্য শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন সামিউল আজিম নিজেই হল থেকে চলে গেছেন। ’
যবিপ্রবিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সক্রিয় কর্মী ও অ্যাগ্রো প্রোডাক্ট প্রসেসিং টেকনোলজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তিতাস মেহেদী বিন ইবরাহীম বলেন, ‘গতকাল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আবাসিক হলের শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের কর্মী সামিউলকে মারধর করেছেন। এরপর তার মোবাইল ফোন চেক করেন। তাকে বিভিন্ন হুমকিও দেওয়া হয়েছে। ছাত্রলীগ নেতারা মারধর করে হল থেকে বের করে দিয়েছেন তাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে রাত ১২টা পর্যন্ত অবস্থান করেছেন সামিউল। এখন তিনি কোথায় আছে আমার জানা নেই। এ ঘটনায় আমরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০২৪
ইউজি/আরআইএস