ঢাকা: ক্ষমতা পরিবর্তনের এমন ক্রান্তিলগ্নে জেলায় জেলায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, ধর্মীয় উপসনালয়, মন্দির ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে হামলা এবং নির্বিচারে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় গভীর হতাশা প্রকাশ ও তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব প্রাণহানি, ত্যাগ ও তিতিক্ষার বিনিময়ে বৈষম্যহীন, ন্যায়বিচার ও সুশাসিত রাষ্ট্র বিনির্মাণের যে শুভক্ষণ আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছে, এ জাতীয় স্বার্থান্ধ ও সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ড তা নস্যাৎ, ভূলুণ্ঠিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য যথেষ্ট বলে মনে করছে সংস্থাটি।
মঙ্গলবার (০৬ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানায় সংস্থাটি।
বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সাম্য, সম্প্রীতি ও সকলের সমান অধিকারের দাবিতে পরিচালিত আন্দোলনে শত শত ছাত্র-জনতার রক্তে রঞ্জিত অভূতপূর্ব বিজয়ের মাহেন্দ্রক্ষণে এসে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্ট ও লুটপাট থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাতে হচ্ছে-যা খুবই বেদনা ও হতাশার। চলমান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন জাতি-ধর্ম-শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে সাধারণ জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের ফলেই সফল হয়েছে। এই আন্দোলনে ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেছেন! শহীদ হয়েছেন! আহত হয়েছেন! তাঁদের পরিবারকে আমরা কী জবাব দিব? সংখ্যালঘুদের ওপর এরূপ আক্রমণ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মূল চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কার স্বার্থ রক্ষায়, কোন বিবেচনায় এ জাতীয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে? ছাত্র-জনতার ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত রাষ্ট্র বিনির্মাণের এই অভাবনীয় সুযোগ যেন কোনোভাবেই সাম্প্রদায়িক শক্তি ও সংকীর্ণ স্বার্থের চোরাবালিতে আটকে না যায়, সে ব্যাপারে সকলকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের উদাত্ত আহ্বান জানাই। ’
সংসদ ভবন, আদালত প্রাঙ্গণ ও প্রধান বিচারপতির বাসভবন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা, থানা, বাসাবাড়ি ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলছেন, ‘যে কোনো রাষ্ট্রীয় সম্পদ এদেশের জনগণের, সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত সম্পদের করের টাকায় এসব প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হয়েছে। আজ যারা প্রতিশোধ-প্রবণ হয়ে এই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ ধ্বংস করছে, তাদেরকে ভাবতে হবে, যে সরকারই আসুক না কেন, দেশ পরিচালনা করতে হলে এইসব স্থাপনাগুলো অবশ্যই পুনর্নির্মাণ করতে হবে। আর তাই যে কোনো ধরনের রাষ্ট্রীয় স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানে অংগ্নিসংযোগ করা অর্থই হবে-আমরা আমাদের সম্পত্তি ধ্বংস করছি। এ জাতীয় আত্মঘাতী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে যারা দায়িত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছেন, তাঁদের পাশাপাশি সকল জনগণকেই সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। ’
ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব বিজয়ের মাহেন্দ্রক্ষণে সেনাবাহিনী প্রধানসহ দায়িত্বশীলগণ শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাসহ সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিতের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আমরা তার কার্যকর প্রতিফলন দেখতে চাই। যে কোনো মূল্যে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, মন্দির, উপসনালয় ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানান ড. জামান।
তিনি বলেন, ‘ফুটন্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত উনুনে পতিত হওয়ার ঘটনা যেন না ঘটে। শ্বাসরুদ্ধকর বাকস্বাধীনতাহীন, অসিহষ্ণু, বৈষম্যপূর্ণ ও অগণতান্ত্রিক একটি রাষ্ট্রকাঠামো থেকে আমরা কোনোভাবেই যাতে একটি বিশৃঙ্খল ও অরাজক পরিস্থিতির মুখোমুখি না হই, সে ব্যাপারে আমাদের সকলকেই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের জোর দাবি জানাচ্ছি। একইসঙ্গে, সমগ্র দেশবাসীকে ব্যক্তি ও সংকীর্ণ স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে প্রতিহিংসা-পরায়ন মনোভাব পরিহার করে ন্যায় ও সাম্যের ভিত্তিতে ধর্ম-বর্ণ ও শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে সকলের জন্য একটি সুশাসিত ও সমঅধিকার-ভিত্তিক প্রিয় স্বদেশ বির্নিমাণে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের উদাত্ত আহ্বান জানাই। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০২৪
এসএমএকে/এমজেএফ