ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সড়কে ফিরেছে ট্রাফিক পুলিশ, আছে ছাত্র-জনতাও

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ও স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০২৪
সড়কে ফিরেছে ট্রাফিক পুলিশ, আছে ছাত্র-জনতাও

ঢাকা: দীর্ঘ বিরতির পর অবশেষে সড়কে ফিরেছে ট্রাফিক পুলিশ। শৃঙ্খলার সঙ্গে যানবাহন চলাচল নিশ্চিতে করছেন দায়িত্ব পালন।

সোমবার (১২ আগস্ট) ভোর সাড়ে ৬টা থেকে রাজধানীর সড়কগুলোতে দায়িত্ব পালন শুরু করেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। এতদিন পর নিরাপদে কর্মস্থলে ফিরতে পেরে উচ্ছ্বসিত তারা।

তবে ট্রাফিক পুলিশ সড়কে ফিরলেও, ঘরে ফেরেননি এই কয়দিন ট্রাফিকের কাজ করা ছাত্র-জনতা। বরং ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি তাদেরও সড়কের শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।

রাজধানীর খামাড়বাড়ি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, শাহবাগ, মৎস্যভবন এবং শিক্ষাভবন মোড় ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারে পতনের পর পুলিশের চেইন অব কমান্ড পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় থানা ও ট্রাফিক পুলিশের স্থাপনাগুলোয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। আহত ও নিহত হন পুলিশের অনেক সদস্য। এমন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাহীনতায় কর্মস্থলে ফিরতে অনীহা ছিল ট্রাফিক ও পুলিশ সদস্যদের।  

এতে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটাই ভেঙে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সম্প্রতি ট্রাফিক ও পুলিশ সদস্যদের নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়ে কর্মস্থলে ফেরার নির্দেশ দেয় ডিএমপি। তারই প্রেক্ষিতে সোমবার ভোর থেকে রাজধানীর সড়কে দায়িত্ব পালনে নামেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। ভোর সাড়ে ৬টা থেকে দুপুর আড়াইটা এবং দুপুর আড়াইটা থেকে রাত ১১টা এই দুই শিফটে কাজ শুরু করেছেন তারা।

খামারবাড়ি মোড়ে তেঁজগাও ট্রাফিক জোনের কনস্টেবল মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, সকাল সাড়ে ৭টা থেকে তারা দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। এখন আরো কোনো ভয় নেই তাদের। সবাই তাদের সহযোগিতা করছেন। স্বাভাবিকভাবেই তারা কাজ করছেন।

এদিকে ট্রাফিক পুলিশের অনুপস্থিতিতে গত কয়েকদিন সড়কে শৃঙ্খলার কাজ করেছেন শিক্ষার্থী ও জনতা। ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন শুরুর পরও তাদের সড়কে শৃঙ্খলার কাজ করতে দেখা গেছে।

এ বিষয়ে কথা হয় খামারবাড়ি মোড়ে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করা ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আশরাফ উদ্দিন সরদারের সঙ্গে।  

তিনি বলেন, ট্রাফিক পুলিশরা এখনো ভয়ে আছে। যে কারণে তারা যথাযথভাবে সড়কের শৃঙ্খলার কাজ করতে পারছেন না। তাদের সাহস দিতেই শিক্ষার্থীরা সড়কে আছেন। ট্রাফিক পুলিশ নির্ভয়ে কাজ শুরু করলে তারা চলে যাবেন বলে জানান।

সেগুনবাগিচার কদম ফোয়ারা মোড়ে আরেক শিক্ষার্থী মাসুম বিল্লাহ বলেন, আজকে যে ট্রাফিক পুলিশ সড়কে নামবে তা আমরা জানতাম না। যেহেতু এখন ট্রাফিক পুলিশ সড়কে আছে, তাই আমরা আগামীকাল থেকে আর আসবো না। তবে যদি প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের কোনো সহযোগিতা প্রয়োজন হয়, সেটি দিতে আমরা প্রস্তুত আছি। আপাতত আমরা তাদের সহযোগিতা ও তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছি।

ফার্মগেট মোড়ে কথা হয় তেঁজগাও ট্রাফিক জোনের সার্জেন্ট মো. সোহরাব হোসেনের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সবাই খুবই ভালো রেসপন্স করছে। আমরা উচ্ছ্বসিত। যে ভয় ছিল সেটা কেটে গেছে। এখন শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার মনোনিবেশ করা প্রয়োজন। যদি স্বেচ্ছাসেবক প্রয়োজন হয় তাহলে নীতি নির্ধারকরা সেটার নির্দেশ দেবেন।

প্রসঙ্গত, শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেশব্যাপী পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনার পর পুলিশে সংস্কারের দাবিতে গত ৬ আগস্ট থেকে কর্মবিরতির ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ পুলিশ অধস্তন কর্মচারী সংগঠন। এরপর থেকে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা সড়কে দায়িত্ব পালন না করে বিরতিতে ছিলেন।  

রোববার (১১ আগস্ট) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকের পর আন্দোলনকারী পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ক পরিদর্শক জাহিদুল ইসলাম ও কনস্টেবল শোয়াইব হাসান সোমবার থেকে কাজে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দেন।

তারা গণমাধ্যমে জানান, ‘আমরা সরকারের কাছে যেসব দাবি জানিয়েছিলাম তার বেশিরভাগই মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তাই আমরা কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিচ্ছি। আশা করি সবাই সুন্দরভাবে নিজ নিজ দায়িত্বে ফিরবেন। ’

বাংলাদেশ সময়: ১০২২ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০২৪
এসসি/ইএস/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।