কুমিল্লা: কুমিল্লায় টানা বৃষ্টি ও উজানি ঢলে ১০ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে শত শত মাছের ঘের, আউশ ধান ও আমনের বীজতলা।
কুমিল্লার দক্ষিণাঞ্চলের উপজেলা নাঙ্গলকোট, মনোহরগঞ্জ ও চৌদ্দগ্রামের অধিকাংশ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আদর্শ সদর, লাকসাম, বুড়িচং, বরুড়া, দেবিদ্বার, মুরাদনগর ও দাউদকান্দির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় নিদারুণ কষ্টের মধ্যে পড়েছেন ওইসব এলাকার মানুষ।
গোমতীর সদর অংশে বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া নদী তীরবর্তী অন্যান্য অঞ্চলে পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে। ডাকাতিয়া নদীর কুমিল্লা অংশে পানি বেড়েছে। এছাড়া কুমিল্লার অন্যান্য নদীতেও পানি বেড়ে তীরবর্তী অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর কুমিল্লার টেলিপ্রিন্টার অপারেটর ছৈয়দ আরিফুর রহমান জানান, কুমিল্লায় গত তিন দিনে ২৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যে অনুপাতে বৃষ্টিপাত হয়েছে তাতে এ ধরনের বন্যা হওয়ার কথা নয়। বাংলাদেশ লাগোয়া ভারতের ত্রিপুরাসহ আরও বেশ কয়েকটি রাজ্যে বন্যা হচ্ছে। ত্রিপুরার ডাম্বুর লেক এলাকায় গোমতীর উৎস মুখের গেট খুলে যাওয়ার খবর পেয়েছি। ভারত থেকে নেমে আসা উজানি ঢলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের কাশিপুর গ্রামের বাসিন্দা বেলাল হোসেন বলেন, আমাদের পুরো গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বেশির ভাগ বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। বন্যা আগেও দেখেছি। তবে এমন বন্যা কখনো দেখিনি।
নাঙ্গলকোট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সুরাইয়া আক্তার লাকী জানান, এ উপজেলার প্রায় শতভাগ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আমরা দুর্গতদের তালিকা করার চেষ্টা করছি। উপজেলা আশ্রয়কেন্দ্রগুলো চালু করা হয়েছে। তালিকা করা শেষ হলে ত্রাণ সহায়তা শুরু হবে।
ডাকাতিয়া নদী তীরবর্তী চৌদ্দগ্রামের গুণবতী গ্রামের বাসিন্দা আলা উদ্দিন জানান, এ গ্রামের কিছু বাকি নেই। বাড়িঘর, মাছের ঘের, ফসল সব পানির নিচে।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, এ উপজেলার মানুষের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা এমন বন্যা মোকাবিলা করেনি। আকস্মিক এমন বড় বন্যায় মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এলাকাগুলো থেকে বিচ্ছিন্নভাবে খবর পাচ্ছি। চেয়ারম্যানরা অধিকাংশ কাজে যোগ না দেওয়ায় ইউপি সচিবদের থেকে তথ্য নিচ্ছি। তথ্য পেলে ত্রাণসহ অন্যান্য সহায়তা শুরু করব।
বুড়িচংয়ের বাজেবাহেরচর গ্রামের বাসিন্দা সুমন মিয়া জানান, আমাদের গ্রামসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি নিচু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ঘরে থাকতে ভয় পাচ্ছি। সাপ-বিচ্ছু ঘরে ঢুকে পড়তে পারে।
আদর্শ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রোমেন শর্মা বলেন, গোমতী নদীর সদর অংশের পানি বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উপজেলার পাঁচথুবি ও আমড়াতলি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, নদীর পানি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। আশাব্যঞ্জক কোনো খবর নেই। গোমতীর বেশ কয়েকটি বাঁধে ফাটল ধরেছিল। গতরাত থেকে সেগুলো টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছি। পানি বাড়লে আর কিছুই করার থাকবে না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক আইউব মাহমুদ বলেন, এবার ২০ শতাংশ জমিতে আউশ ধান চাষ হয়েছে। এর অধিকাংশই প্লাবিত হয়ে গেছে। নিচু অঞ্চলের শাকসবজি একদম শেষ। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করতে মিটিংয়ে বসেছি। বাস্তব অবস্থা জানার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত পুরো জেলার বন্যার চিত্র জানা যায়নি। জেলার ১৭ উপজেলা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তথ্য সংগ্রহ শেষ হলে জেলা প্রশাসন থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা শুরু হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২৪
আরএ