ঢাকা: চাকরি জাতীয়করণের এক দাবি নিয়ে আনসার সদস্যদের আন্দোলনে টানা ৯ ঘণ্টা অবরুদ্ধ হয়ে আছেন প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে কর্মরত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের অনেকেই এখন ক্ষুধায় কাতর।
রোববার (২৫ আগস্ট) রাত ৯টায় সচিবালয়ে বিভিন্ন গেট ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাজার-হাজার আনসার সদস্য সকাল থেকে সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছে। একপর্যায়ে দুপুর ১২টা থেকে তারা সচিবালয়কে অবরুদ্ধ করে রাখে। এরপর দুপুর একটার দিকে আন্দোলনের একাংশ সচিবালয়ের তিন নম্বর গেট দিয়ে সেনাবাহিনীর বাঁধা উপেক্ষা করে ভেতরে প্রবেশ করে স্লোগান দেন। কিছুক্ষণ পর তাদের জোর করে বের করে দেওয়া হয়। এরপর সব গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিকেল ৫ টায় অফিস ছুটি হলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বের হতে পারছেন না।
এদিকে, অবরুদ্ধ থাকা অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়েছেন। সচিবালয়ের ভেতরে থাকা ক্যান্টিনগুলো খালি হয়ে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা বলছেন, বাসায় গিয়ে রান্না করার প্রয়োজন। অনেকের বাসায় ছোট বাচ্চারা রয়েছেন। তাদের পরিবার চিন্তায় আছেন।
এদিকে রোববার চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে সকাল থেকে সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ করছিলেন তারা। এক পর্যায়ে দুপুরে ১ টার দিকে সচিবালয়ে ঢুকে পড়েছেন বিক্ষোভকারী আনসারদের একাংশ। তারা সচিবালয়ে তিন নম্বর গেট দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধা উপেক্ষা করে ঢুকে পড়েন।
অর্ধশতাধিক আনসার ঢুকে পড়ার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গেটটি দ্রুত বন্ধ করে দেয়। আনসাররা ভেতরে ঢুকে চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তারা বলছেন, হয় আমাদের চাকরি জাতীয়করণ করেন না হয় আমাদের মেরে ফেলেন। তারা দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্যের শিকার। তাদের আশ্বাস দেওয়ার পরও চাকরি জাতীয়করণ করা হয়নি। দাবি না আদায় হওয়া পর্যন্ত সচিবালয় থেকে কাউকে বের হতে দেবেন না এবং কাউকে প্রবেশ করতে দেবেন না বলেও ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারী আনসাররা।
রোববার রাতে সচিবালয়ে কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, সেই সকালে অফিসে এসেছি। এখন রাত সাড়ে ৮টা বাজে। এখনো বাসায় যাওয়ার জন্য বেরই হতে পারিনি। দুপুরে খাবার খাওয়ার পর আর কিছু খাইনি। ক্যান্টিনগুলোও সব ফাঁকা হয়ে গেছে। আমরা অনেক ক্ষুধার্ত। এভাবে আন্দোলনের নামে আমাদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখার কোনো মানেই হয় না। তাদের দাবি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে। তাহলে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকেও কেন অবরুদ্ধ করে রাখলো? এমন চিত্র আগে কখনো দেখিনি।
এদিকে, সন্ধ্যায় সচিবালয়ের পেছনের ওয়াচ টাওয়ার দিয়ে উঁচু দেয়াল টপকে এপিবিএনের সদস্যসহ কয়েকজনকে বের হতে দেখা গেছে। পরে অবশ্য আনসার সদস্যরা আর কাউকে বের হতে দেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এপিবিএনের একজন সদস্য বলেন, সকাল থেকেই ডিউটি করছি। সারাদিন খাবার খাইনি। এখন বাধ্য হয়ে দেয়াল টপকে বের হচ্ছি।
রেজওয়ান নামের এক কর্মচারী বলেন, কখন বের হতে পারব জানি না। এ এক অনিশ্চিত বিষয়। আমরা সকাল থেকে বন্দি। ভেতরে পর্যাপ্ত খাবার নেই। বাধ্য হয়ে দেয়াল টপকে বের হব।
প্রসঙ্গত, চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে আজ সকাল থেকে সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ করছিলেন আনসার সদস্যরা। একপর্যায়ে দুপুরে সচিবালয়ে ঢুকে পড়েন বিক্ষোভকারী আনসারদের একাংশ। তারা সচিবালয়ে তিন নম্বর গেট দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধা উপেক্ষা করে ঢুকে পড়েন।
পরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী তাদের প্রতিনিধিদের দাবিদাওয়া মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে আন্দোলন স্থগিত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে, তার কিছুক্ষণ পরেই আবারও আন্দোলন শুরু করেন আনসার সদস্যরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫,২০২৪
জিসিজি/এসএএইচ