ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

লক্ষ্মীপুরে যে কারণে ধীরে নামছে বন্যার পানি

মো. নিজাম উদ্দিন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২৪
লক্ষ্মীপুরে যে কারণে ধীরে নামছে বন্যার পানি

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। বুধবার (২৮ আগস্ট) রাত থেকে বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) সকাল পর্যন্ত এক থেকে দুই ইঞ্চির মতো পানি কমেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

যদিও যেভাবে হুহু করে পানি বেড়েছে, সেভাবে পানি কমছে না।  

আবার বন্যার পানির সঙ্গে বৃষ্টিপাতে কারণে পানির পরিমাণ বাড়তে থাকে। বুধবার ভোরে ভারী বৃষ্টিপাতে পানি কিছুটা বাড়লেও সকালের পর থেকে আস্তে আস্তে কমতে থাকে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) হিসেব মতে লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর হাট স্লুইস গেট দিয়ে যে পানি মেঘনায় নেমেছে, এতে ১০ সেন্টিমিটার উচ্চতা কমেছে।  

এদিকে বন্যার পানি কমে গেলেও জেলাবাসীকে দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতার কবলে থাকতে হবে খাল-বিল দখল ও নানা প্রতিবন্ধকতা থাকায় পানি প্রবাহ বন্ধ রয়েছে। দ্রুতই পানি নামার কোনো উপায় দেখছেন না বাসিন্দারা।  

পানি কমতে শুরু করলেও কোথাও দুর্ভোগ কমেনি, বরং বেড়েছে। খাদ্য সংকট, সুপেয় পানির অভাব, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, রান্না-বান্না নিয়ে চরম ভোগান্তিতে বন্যাদুর্গত বাসিন্দারা।

বন্যায় শতভাগ ক্ষতি হয়েছে মৎস্য ও কৃষি খাতে।

গত ২৪ আগস্ট থেকে জেলাতে প্রবল বেগে বন্যার পানি ঢুকতে শুরু করে। নোয়াখালী এবং ফেনী জেলার বন্যার পানি লক্ষ্মীপুরের রহমতখালী খাল, ওয়াপদা খাল ও ভূলুয়া খাল হয়ে পানির চাপ অতিমাত্রায় বাড়তে থাকে। তখন থেকেই মূলত বন্যার ভয়াবহতা শুরু হয়। এর আগে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ভারী বৃষ্টিপাতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। একদিকে ভারী বর্ষণ, অন্যদিকে উজানের ঢলের পানি, সব মিলিয়ে পানির উচ্চতা দ্রুত গতিতে বেড়ে গিয়ে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।  

জেলার প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে আছে। তবে মেঘনা নদী সংলগ্ন কয়েকটি এলাকায় বন্যার পানি তেমন লক্ষ্য করা যায়নি।

স্থানীয় লোকজন জানায়, মেঘনার উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুর। উজানের পানি শেষ পর্যন্ত লক্ষ্মীপুরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মেঘনা নদী হয়ে বঙ্গোপসাগরে নেমে যায়।

কমলনগরের চারমর্টিন এলাকার বাসিন্দা আবদুর রহমান মেঘনা নদীর তীর পরিদর্শন করে জানান, নদীতে পানির উচ্চতা অনেক নিচে। ভাটার সময় খাল দিয়ে অনেক পানি নামে। তবে খাল দখল, মাছ শিকারিদের ফাঁদসহ নানা প্রতিবন্ধকতা থাকায় দ্রুত গতিতে পানি নামতে পারে না। খালে পানি প্রবাহ কমে গেছে।

জেলার কমনগর এবং রামগতির উপজেলা পূর্ব অংশ বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করে আছে। এ দুই উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়ন, চরবাদাম, চর পোড়াগাছা ইউনিয়ন বন্যা কবলিত। ভূলুয়া খালের পানির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় দুই পাড়ের বাসিন্দারা পানির নিচে তলিয়ে আছে। খালে পানির উচ্চতা বাড়লেও মেঘনায় পানি নামতে পারছে না। অবৈধভাবে দখল হয়ে খালটির পানি প্রবাহ একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও প্রতিবন্ধকতা দূর না হলে দীর্ঘ মেয়াদি বন্যা ও জলাবদ্ধতার মধ্যে আটকা থাকবে এ তিন ইউনিয়নের লাখো বাসিন্দা।  

বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) স্থানীয় লোকজন এ দুই উপজেলার ভূলুয়া, জারিরদনা খালসহ ছোট-বড় সব খালে উচ্ছেদ অভিযান চালাতে মানববন্ধন পালন করেন।  

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার যে রহমত খালটি আছে, সেটি দখল ও নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়ে আছে। বিশেষ করে মান্দারী, জকসিন এবং পৌর শহরের বিভিন্ন স্থানে দখল হয়ে খালটি সংকুচিত হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে মাছ শিকারিরা অবৈধ জাল এবং বেল জাল বসিয়ে পানি প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি করছে। ফলে যেভাবে পানি প্রবাহ থাকার কথা, তার থেকে কম গতিতে পানি নামছে।

মেঘনা নদীতে যখন ভাটা পড়ে, তখন মজুচৌধুরীহাটের দুটি রেগুলেটর দিয়ে বন্যার পানি সরাসরি মেঘনায় চলে যায়। তাই পানি প্রবাহ ঠিক রাখতে খালের প্রতিবন্ধকতা দূর করার উপর জোর দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।  

জেলার রামগঞ্জ উপজেলার বন্যার পানি প্রবাহিত হয় বীরেন্দ্র খাল দিয়ে। কিন্তু সেটিও দখল হয়ে সংকুচিত হয়ে গেছে। স্থানীয় লোকজনের উদ্যোগে প্রশাসনের সহায়তায় বুধবার খালের কিছু অংশের প্রতিবন্ধকতা দূর করা হয়৷ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ উজ জামান বাংলানিউজকে বলেন, পানি নামছে। বৃহস্পতিবার পানির উচ্চতা ১০ সেন্টিমিটার কমেছে। বৃষ্টি না হলে এবং বন্যাকবলিত পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে পানি না এলে পরিস্থিতি উন্নতি হবে বলে আশাবাদী তিনি।

খাল দখল এবং প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে তিনি জানান, মেঘনার পানি অনেক নিচে। কিন্তু খাল দিয়ে ঠিকমতো পানি নামতে পারছে না। বিভিন্ন স্থানে পানি প্রবাহ বন্ধ করে স্থাপনা বা রাস্তা ঘাট নির্মাণ করা হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে এগুলো করা হয়নি। যে কোনো স্থাপনা নির্মাণ এবং রাস্তা-ঘাট করতে হলে পানি প্রবাহ ঠিক রেখেই করতে হয়। লোকজনের মধ্যে সচেতনতা ছিল না। এ মুহূর্তে এগুলো অপসারণ করতে হলে প্রয়োজন সকলের সমন্বিত উদ্যোগ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২৪
এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।