ঢাকা, রবিবার, ১৬ ভাদ্র ১৪৩১, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৬ সফর ১৪৪৬

জাতীয়

৩৯ দিন পর হার মানলেন বুকে গুলিবিদ্ধ শোহান

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২৪
৩৯ দিন পর হার মানলেন বুকে গুলিবিদ্ধ শোহান শোহান শাহ

মাগুরা: অল্প বয়সেই সংসারের হাল ধরেছিলেন শোহান শাহ। মা-বাবা, স্ত্রী ও স্কুলছাত্র ছোট ভাই সবার দায়িত্বই পালন করতেন তিনি।

পরিবারের সবার ভরসার শোহান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন। বুকে বুলেট নিয়ে ৩৯ দিন লড়াই করে অবশেষে মৃত্যুর কাছে হার মেনেছেন তিনি। এখন পরিবারের সদস্যরা পড়েছেন অকুল পাথারে।

শোহান শাহের (২৯) বাড়ি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলা সদরে আলতাফ হোসেন মহিলা কলেজ রোড এলাকায়। পরিবারের খরচ মেটাতেই ঢাকায় চাকরি করতে গিয়েছিলেন শোহান। স্ত্রীকে বাড়িতে মা-বাবার কাছে রেখে ঢাকায় মেসে থেকে চাকরি করছিলেন। গ্রামের বাড়িতে নতুন ঘর নির্মাণ করা হচ্ছিল। যেখানে স্ত্রী শম্পার সঙ্গে সুখের সংসার করতে চেয়েছিলেন শোহান। তবে তাদের সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। গত ১৯ জুলাই ঢাকার রামপুরা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন শোহান। এর ৩৯ দিন পর ২৭ আগস্ট ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। গত বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শোহানের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে ওই দিন বিকেলে শ্রীপুর গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।

কান্না জড়িত কণ্ঠে শোহানের মা সুফিয়া বেগম বলেন, আমার মনিডারে পুলিশ গুলি করে মেরে ফেলছে। এখন আমি আমার মনিটারে আর দেখতে পাবো না। মা বলে আর কেউ ডাকবে না আমারে। পরিবারের খরচ মেটাতেই আমার মনি ঢাকায় চাকরি করতে গিয়েছিল, আর পুলিশ তারে গুলি করে মারল।

শোহানের বাবা সেকেন্দার আলী বলেন, আমি তেমন কিছু করতে পারি না আমার বড় ছেলে সংসারের খরচের টাকা দিত তার টাকায় আমাদের সংসার চলত। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আমার ছেলে যোগ দিয়েছিল।

১৯ জুলাই সন্ধ্যায় রাজধানীর রামপুরা এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র-জনতার একটি মিছিল থেকে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয় সে।

নিহতের পারিবারিক সূত্র ও প্রতিবেশীরা জানান, পড়াশোনার পাশাপাশি একটি বেসরকারি গার্মেন্টস কোম্পানিতে চাকরি করতেন শোহান। সেদিন কোম্পানির কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে হঠাৎ একটি গুলি তার পাঁজর দিয়ে ঢুকে মেরুদণ্ডের হাড়ে আটকে যায়। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। দীর্ঘ ৩৯ দিন শরীরে বুলেট রেখে শেষ পর্যন্ত গতকাল মঙ্গলবার রাতে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক (সিএমএইচ) হাসপাতালে অস্ত্রোপচার কক্ষে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়।

এতদিন পাঁজরে গুলি নিয়ে জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করছিলেন শোহান। এই বলে কেঁদে ওঠেন বাবা শাহ সেকেন্দার আলী। তিনি বলেন, আমরা খুব কষ্টে দিন পার করতাম। বড় ছেলেটিই সব দেখত। ওর স্ত্রীও তো বার বার মূর্ছা যাচ্ছে। আমাদের পরিবারে ভয়াবহ দুর্দশা নেমে এল, কী হবে এখন আমাদের।

শোহানের স্ত্রী শম্পা বেগম বলেন, তাদের বিয়ে হয়েছিল ২০১৭ সালের ১৯ নভেম্বর। এরপর মধ্যে তিন বছর দুজন একসঙ্গে ঢাকায় সংসার করেছিলেন। বাকি সময় স্ত্রীকে গ্রামে পরিবারের সঙ্গে রেখে ঢাকায় চাকরি করেছেন শোহান।

গত মঙ্গলবার ঢাকায় সিএমএইচে স্বামীর সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল শম্পার। তখন শোহান তাকে বলেছিলেন, ‘তুমি কেঁদো না। আমার কিছুই হবে না। ’ তবে শোহান আর ফেরেননি। অস্ত্রোপচার করে শরীর থেকে বুলেট বের করা গেলেও রক্ত বন্ধ করা যায়নি। ১৮ ব্যাগ রক্ত দিয়েও বাঁচানো যায়নি শোহানকে।

সংসারে অভাব থাকলেও ভালোবাসার কমতি ছিল না উল্লেখ করে শম্পা বলেন, ‘স্বামী ছাড়া কেউ ছিল না আমার। সে সব সময় সব ধরনের পরিস্থিতিতে আমার পাশে থেকেছে।

বাংলাদেশ সময়: ২২৪৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২৪

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।