ঢাকা, শুক্রবার, ২২ ভাদ্র ১৪৩১, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পুকুরের পর এবার সেই বিএনপি নেত্রীর বিরুদ্ধে ভবন দখলের অভিযোগ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৪
পুকুরের পর এবার সেই বিএনপি নেত্রীর বিরুদ্ধে ভবন দখলের অভিযোগ

বরিশাল: পুকুর দখলের অভিযোগ ওঠার পর দলীয় পদ স্থগিত হওয়া কেন্দ্রীয় বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট বিলকিস জাহান শিরিনের বিরুদ্ধে এবার বাড়ি দখলের অভিযোগ উঠেছে।  

এ ঘটনায় বাড়ির মালিক দাবি করা এবিএম সালাউদ্দিন খান মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে পথে পথে ঘুরছেন।

সরকারের বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দিয়েও কোনো সুরাহা করতে পারছেন না তিনি।

এ বিষয়ে এবিএম সালাউদ্দিন বলেন, বরিশাল সিটি করপোরেশনের ১৬ নং ওয়ার্ডের ব্রাউন কম্পাউন্ড রোডের বগুড়া আলেকান্দা মৌজার জেএল ৫০, এসএ ৮৬৫১ খতিয়ানের ৩ শতাংশ জমির মালিক ছিলেন আমার মা হাসিয়ারা বেগম। তার মৃত্যুর পর ওয়ারিশ অনুসারে ৩ ছেলে ও ৩ মেয়ে সম্পত্তির ভাগ পাবে। সম্পত্তি ভাগের আগেই বড় ভাই মহিউদ্দিন খান ও বোন ডালিয়া আক্তার মিলে এক শতাংশ জমি বিক্রি করেন প্রতিবেশী বিএনপি নেত্রী বিলকিস জাহান শিরিনের ছোট ভাই শহিদুল ইসলাম শামীমের স্ত্রী মারিয়া ইসলাম মুন্নির কাছে।

শর্ত থাকে জমিতে যতদিন পুরোনো বিল্ডিং থাকবে ততদিন মারিয়া আক্তার মুন্নি নিচতলা ভোগদখল করবেন। বড় বিল্ডিং করা হলে তখন অংশীদারত্ব অনুসারে সিদ্ধান্ত ও বণ্টন হবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সালাউদ্দিনের একাংশ দোতলায় ভাড়াটিয়া এবং বাকি অংশে আরেক ভাই মৃত মনিরুজ্জামান কামালের পরিবার থাকতো। ২০১৯ সালে বাড়ির ১ শতাংশ জমি কিনে নিচতলা দখলে নেওয়ার কয়েকদিন পরে সালাউদ্দিনের অংশের ভাড়াটিয়া নামিয়ে দিয়ে বাড়ি দখলে নেন মারিয়া আক্তার মুন্নি।

সালাউদ্দিন বলেন, এ ঘটনায় আমি বাধা দিতে গেলে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয় এবং হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। আমি ওই বছরের ১১ নভেম্বর থানায় জিডি করি।

তিনি বলেন, এরপর বাড়ির তিনতলা নির্মাণ শুরু করেন বিলকিস জাহান শিরিনের ভাই। সেই ঘটনায়ও আমি থানায় অভিযোগ দায়ের করি। এ নিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর, গণমান্যদের নিয়ে সালিশ হলে প্রমাণ হয় তারা পুরো বাড়ি দখলে নিতে পারেন না। কিন্তু তারা কারো কথা শোনেন না। এক শতাংশ কিনে পুরো ভবন দখলে নিয়ে আমাকে বাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েছেন তারা। এখন তিনতলা নির্মাণ করে সেখানে থাকছেন তারা, নিচতলা ভাড়া দিয়েছেন। বরিশালে এলে এখানেই ওঠেন বিএনপি নেত্রী বিলকিস জাহান শিরিন।

সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহর শ্বশুরের বাড়ি আর শিরিনের বাসা পাশাপাশি হওয়ায় তাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক ছিল জানিয়ে সালাউদ্দিন বলেন, বিগত সরকারের আমল থেকে আমি সিটি করপোরেশনসহ সব দপ্তরে অভিযোগ দিয়ে আসছি। অথচ সিটি করপোরেশনে থেকে আমাকে বলা হতো শিরিনের সঙ্গে আপসে যেতে। কিন্তু আমি তা করিনি। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে বরিশালে একক আধিপত্য বিস্তার করছেন শিরিন।

তিনি বলেন, বিগত পাঁচটি বছর ধরে আমি পথে পথে ঘুরছি। নিজের ঘরে ফিরতে পারছি না। আমার বাড়ি দখল হয়ে যাওয়ার পরে বরিশালেও থাকতে দিচ্ছে না। পালিয়ে আসি আবার পালিয়ে চলে যাই। সরকারের কোনো দপ্তর থেকেও সুবিচার পাচ্ছি না। এখন তো অন্তর্বর্তী সরকার তাই বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, সেনাবাহিনীর কাছে লিখতি অভিযোগ দিয়েছি।

তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে বিলকিস জাহান শিরিন জানিয়েছেন, তিনি কোনো ভবন দখল করেননি। প্রায় ৮০ বছর পুরোনো তার বাবার বাড়ি ব্রাউন কম্পাউন্ড আরশাদ মঞ্জিল। আর সেই ভবনেই তিনি থাকেন।

শিরিন বলেন, আমিও শুনেছি একজন অভিযোগ দিয়ে বেড়াচ্ছেন—সেই অভিযোগে আমার নাম লেখেনি। আমার কোনো আত্মীয়ের নাম লিখেছে। এগুলো আমি জানি না।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে আমি দলের (বিএনপি) পাশে ছিলাম। অথচ ওই সময়ে যারা দলের পাশে ছিল না তারা আমাকে সমস্যা মনে করবেই। আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য এসব অভিযোগ একটি অপচেষ্টা।

এদিকে এবিএম সালাউদ্দিনের অভিযোগ দায়েরের বিষয়টি বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় ও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। তাৎক্ষণিক এই বিষয়ে কথা বলেননি কোনো কর্মকর্তা। তবে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন তারা।

উল্লেখ্য, এর আগে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ১১ আগস্ট দলের সব পদ-পদবি স্থগিত করা হয় বিলকিস জাহান শিরিনের। স্থানীয় বিএনপির নেতারা বলছেন, ব্রাউন কম্পাউন্ড এলাকায় পুকুর ভরাট করে দখলের চেষ্টার অভিযোগ ওঠার পরপরই তার বিষয়ে খোঁজ শুরু করে কেন্দ্র। তবে কী কারণে শিরিনের পদ স্থগিত করা হয়েছে তা এখন পর্যন্ত স্পষ্ট করেনি দলটি।

এদিকে ওই পুকুর ভরাটের পর বিএনপি নেত্রী বিলকিস জাহান শিরিন ও তার ভাই শহীদুল ইসলাম শামীমসহ ৭ জনকে নোটিশ করে পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশাল জেলা কার্যালয়। কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শেখ কামাল মেহেদী স্বাক্ষরিত ১১ আগস্টের ওই পত্রে ১৪ আগস্টের মধ্যে বালু অপসারণ করে পুকুরটিকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য বিএনপি নেত্রী বিলকিস জাহান শিরিন ও তার ভাই শহীদুল ইসলাম শামীমসহ ৭ জনকে বলা হয়।  তবে এখন অবধি পুকুরটি আগের অবস্থাতেই রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুজন ভবন মালিক জানিয়েছেন, পুকুর ভরাটের তথ্য সেনাবাহিনীকে জানালে তারা রাতেই ঘটনাস্থলে আসেন। তবে তারা চলে যাওয়ার পর শিরিন তার সহযোগীদের নিয়ে এসে এলাকার মানুষকে গালিগালাজ করেন। শিরিনের ভয়ে কেউ কথা বলতে পারে না।  আর যে বাড়িটির মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে, সেখানে কাগজেকলমে তার ভাইয়ের স্ত্রীর নাম থাকায় শিরিন স্বচ্ছই থাকছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০২৪
এমএস/এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।