ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

মৌলভীবাজারে চা-শ্রমিকদের বকেয়া ভাতার দাবি 

ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪
মৌলভীবাজারে চা-শ্রমিকদের বকেয়া ভাতার দাবি  চা শ্রমিক জনগোষ্ঠীর বিক্ষোভ। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: চা-শ্রমিকদের সরকার ঘোষিত মজুরি অনুযায়ী মজুরি পরিশোধ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন চা-শ্রমিক সংঘ।  

শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) চা-শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির আহ্বায়ক রাজদেও কৈরী এবং যুগ্ম-আহ্বায়ক শ্যামল অলমিক এক যৌথ  বিবৃতিতে অভিযোগ করেন সরকার ঘোষিত নিম্ন মজুরি অনুযায়ী ১১ আগস্ট ২০২৪ থেকে চা-শ্রমিকদের মজুরি দৈনিক ১৭৮ দশমিক ৫০ টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও চা-বাগান কর্তৃপক্ষ তা মানছেন না।

তারা পূর্বের ন্যায় দৈনিক ১৭০ টাকা মজুরি পরিশোধ করছেন।  

চা-শ্রমিক নেতা শ্যামল বলেন, ২০২৩ সালের ১০ আগস্ট সরকারের নিম্নতম মজুরি বোর্ড চা-শিল্পের শ্রমিকদের জন্য মজুরি নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন (এসআরও নং ২৪৬-আইন/২০২৩) জারি করে। প্রজ্ঞাপনের শর্তাবলীর ৮(খ) নং পয়েন্টে উল্লেখ করা হয়েছে- ‘যদি একজন শ্রমিকের মূল মজুরি ১৭০ টাকা হয়, তবে এক বছর কর্মরত থাকার পর তার মজুরি বেড়ে ১৭৮ দশমিক ৫০ টাকা নির্ধারিত হবে এবং পরবর্তী বছরে ক্রমবর্ধমান হারে পুনরায় ৫ শতাংশ হারে বাড়বে অর্থাৎ মূল মজুরি ১৭৮ দশমিক ৫০ টাকার ৫ শতাংশ বেড়ে ১৮৭ দশমিক ৪৩ টাকা নির্ধারিত হবে। এ অনুযায়ী চলতি বছরের ১১ আগস্ট থেকে একজন চা-শ্রমিকের মজুরি ১৭৮ দশমিক ৫০ টাকা হলেও চা-বাগান কর্তৃপক্ষ সরকারি আইন ও প্রজ্ঞাপন উপেক্ষা করে ১৭০ টাকা করে মজুরি পরিশোধ করছেন। এমন কি আলীনগর, সুনছড়া, শমসেরনগর, রাজনগরসহ বিভিন্ন বাগানের শ্রমিকরা সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ১৭৮ দশমিক ৫০ টাকা মজুরি পরিশোধ করার অনুরোধ করলেও বাগান কর্তৃপক্ষ তা আমলে নিচ্ছেন না।  

সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী মজুরি দেওয়া না হলে আসন্ন দুর্গাপূজায় উৎসব বোনাসের ক্ষেত্রেও চা-শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। চা-শ্রমিক নেতারা অবিলম্বে সরকার ঘোষিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী দৈনিক ১৭৮ দশমিক ৫০ টাকা মজুরি বকেয়াসহ পরিশোধ করার দাবি জানান। একই সঙ্গে চা ও রাবার শ্রমিকদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকা ও উৎপাদনে সক্রিয় থাকার প্রয়োজনে বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে সংগতি রেখে ছয় সদস্যের পরিবারে ভরণপোষণের খরচ হিসাব করে ২০২৩-২০২৪ মেয়াদের জন্য নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ এবং একটি পরিবারের সাপ্তাহিক প্রয়োজনের অনুপাতে চাল/আটা, ডাল, তেল, চিনি/গুড়, সাবান, চা-পাতাসহ পূর্ণ রেশন দেওয়ার দাবি জানান।  

সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন চা-বাগানে শ্রমিকদের ঠিকমতো মজুরি ও রেশন পরিশোধ করা হচ্ছে না উল্লেখ করে বিবৃতিতে নেতারা বলেন, ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) কুরমা, পাত্রখোলা, মাধপুর, মদনমোহনপুর, দেউন্দি টি কোম্পানির নয়াপাড়া, দেউন্দি, লালচাঁন, মৃত্তিঙ্গা, ব্যক্তিমালিকানাধীন ইমাম-বাওয়ানী, ফুলতলা, সিলেটের ডালুছাড়া, তারাপুরসহ বিভিন্ন বাগানে মজুরি ও রেশন পরিশোধ না করার কারণে শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি পালন করছেন। শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে জুড়ী উপজেলার ফুলতলা চা-বাগানের কর্তৃপক্ষ আগামী ৮ অক্টোবর পর্যন্ত বেআইনিভাবে বাগান বন্ধ ঘোষণা করেন।  

নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ সময়ে মজুরি ও রেশন পেয়েও শ্রমিকরা দু’বেলা ডাল-ভাত জুটাতে পারেন না। তার ওপর যদি শ্রমিকদের মজুরি ও রেশন দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে শ্রমিকদের না খেয়ে মরা ছাড়া উপায় থাকবে না।  

নেতারা অবিলম্বে সব চা-বাগানের শ্রমিকদের বকেয়াসহ মজুরি-রেশন পরিশোধ এবং ফুলতলাসহ বন্ধ সব বাগান চালু করার দাবি জানান। অন্যথায় চা-শ্রমিকরা বেঁচে থাকার তাগিদে ২০২২ সালের আগস্ট মাসের আন্দোলনের শিক্ষা নিয়ে নতুন করে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ে দাবি ও অধিকার আদায় করার পথে অগ্রসর হতে বাধ্য হবেন।  

বাংলাদেশ সময়: ০১১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০২৪
বিবিবি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।