রংপুর: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রংপুরে নিহত শিক্ষার্থী আবু সাঈদের শরীরে শটগানের গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে মৃত্যু হয় তার।
এদিকে আইনজীবী জানিয়েছেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রমাণ করে এটি একটি হত্যাকাণ্ড ছিল। এ ঘটনার দ্রুত বিচার দাবি করেছেন আবু সাঈদের সহপাঠী ও শিক্ষকরা। আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনাটি আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের দাবি করছেন শিক্ষকরা।
ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শটগানের গুলির আঘাতে আবু সাঈদের শরীরে অসংখ্য ছিদ্র তৈরি হয়। এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয় তার। এ ছাড়া তার মাথার মধ্যভাগ থেকে পশ্চাৎ ভাগ পর্যন্ত আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
আবু সাঈদ হত্যা মামলার প্যানেল আইনজীবী রোকনুজ্জামান বলেন, ‘মাথার আঘাতের চিহ্ন সুস্পষ্ট, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় শটগানের গুলির ক্ষত, সবকিছু মিলে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রমাণ করে এটি হত্যাকাণ্ড। ফলে এ হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের কেউ ছাড়া পাবে না। ’
এদিকে আবু সাঈদের সহপাঠীরা এ হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার দাবি করেছেন। তারা বলছেন, এ হত্যাকাণ্ডের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও দায়ী। তাদের চাওয়া, সুষ্ঠু বিচারিক প্রক্রিয়ায় দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা হোক।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য সহকারী উপ পরিদর্শক (এএসআই) মো. আমীর আলী ও সুজন চন্দ্র রায়কে গ্রেপ্তার করে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ। পরে তাদের রংপুর জেলা পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়। গত ৯ সেপ্টেম্বর (সোমবার) রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি হেডকোয়ার্টার্স আবু বক্কর সিদ্দিক ও পিবিআই পুলিশ সুপার মো. জাকির হোসেন। দুটি মামলা এখনও তদন্ত করছে পিবিআই।
রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. শওকত আলী বলেন, ‘আবু সাঈদ হত্যা মামলা যেন আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার কাজ করা হয়। যে ছেলে তার বুক পেতে দিয়ে জীবন দিল তার বিচার সঠিকভাবে হবে না এটা কখনও হতে দেওয়া যাবে না। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত দোষীদের আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। ’
উপাচার্য আরও বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. আবু সাঈদ নিহত হওয়ার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জড়িতদের (শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী) চিহ্নিতকরণ ও শাস্তির ধরন নির্ধারণের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটিতে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. মিজানুর রহমান আহ্বায়ক, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আমির শরীফ সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. ফেরদৌস রহমান সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। কমিটিকে আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। ’
উল্লেখ্য, গত ১৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে খুব কাছে থেকে নিরস্ত্র আবু সাঈদের ওপর গুলি চালায় পুলিশ। এতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ও অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাঈদের। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে গত ১৭ জুলাই তাজহাট থানায় একটি মামলা দায়ের করে। পরে ১৮ আগস্ট ১০ পুলিশ সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৪
আরএ