ঢাকা: সদ্যগঠিত জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন কমিটি পুনর্গঠনসহ তিন দফা দাবি জানিয়েছেন বিসিএস ক্যাডাররা।
শনিবার (৫ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনী হলে ‘আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের’ ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিসিএস তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা মনির হোসেন। তিনি বলেন, জনবান্ধব রাষ্ট্র গঠনে ক্যাডার বৈষম্য নিরসনের লক্ষ্যে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গত ৩১ আগস্ট আপনাদের (সাংবাদিক) মাধ্যমে জনপ্রশাসন সংস্কারের জন্য আমাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছিলাম। পরবর্তীতে সব মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টাদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের জন্য আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ লিখিত আবেদন জানায়। ইতোমধ্যে পাঁচজন সম্মানিত উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়। কেমন জনপ্রশাসন হওয়া উচিত- দীর্ঘদিন সিভিল প্রশাসনের বিভিন্ন সেক্টরে কাজের অভিজ্ঞতায় আমরা উপদেষ্টামণ্ডলীর সামনে লিখিতভাবে উপস্থাপন করি এবং সবাই আমাদের দাবিকে যৌক্তিক বলে মতামত দেন। বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে ইতোপূর্বে জনপ্রশাসন সংস্কারের জন্য যেসব কমিটি গঠন করা হয়েছিল, সেগুলো তাদের দিয়েই করা হয়েছিল, যারা নিজেদের সুবিধার্থে বৈষম্য আরও বাড়িয়ে। অতীত অভিজ্ঞতা এবং অসমর্থিত সূত্রের বরাত দিয়ে আমরা সবাইকে অবগত করেছিলাম যে, এবারও তেমন কমিটি গঠন হতে পারে। বিষয়টি খেয়াল রেখে সব পেশার সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করে কমিটি গঠনের জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করি। সেই সঙ্গে সব পেশার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে ২৫টি ক্যাডারের সদস্যদের সংগঠন ‘আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’কে অন্তর্ভুক্ত করে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিটি করতে সব উপদেষ্টাকে লিখিতভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। সাক্ষাতে বিষয়টি উপস্থাপন করলে উপদেষ্টামণ্ডলী আমাদের আশ্বস্তও করেছিলেন। আমরাও আশা করেছিলাম, প্রকৃত জনসেবা ব্যবস্থাপনায় প্রজাতন্ত্রের সব কর্মচারীর মতামতের ভিত্তিতে এবার একটি আধুনিক জনসেবা ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার সুযোগ হবে।
কিন্তু গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম ‘জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন’ যে আট সদস্যের কমিটি গঠন করেছে, সেখানে ২৫টি ক্যাডারের কোনো সদস্য নেই। বরং কমিশন প্রধানসহ ছয়জন সদস্য একটি ক্যাডারের, যারা সিভিল প্রশাসনের বৈষম্য সৃষ্টিকারী। এছাড়া ইতোপূর্বেও বৈষম্য নিরসনে তাদের দিয়েই কমিটি গঠিত হয়েছিল এবং তারা সেই সুযোগে বৈষম্য আরও বাড়িয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এভাবে জনমুখী সেবা ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। জনপ্রশাসন শব্দের মধ্যেই লুকিয়ে আছে মানুষকে শাসন, শোষণ ও নির্যাতনের বীজ। তাই আমরা আধুনিক বাংলাদেশের সেবা ব্যবস্থাপনা থেকে ‘জনপ্রশাসন’ শব্দটিই বাতিল করতে চাই। জনগণের টাকার বেতনভুক্ত ব্যক্তি কোনোভাবেই জনগণের প্রশাসক হতে পারেন না। তাই জনপ্রশাসন শব্দটি যথাযথ নয়। সময় এসেছে এসব চিন্তা করার এবং ভ্রান্তনীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার। কিন্তু এসব চিন্তা যেন করা না যায়, জনসেবার প্রকৃত রূপরেখা যেন প্রকাশ না পায়, সে জন্য একটা স্বার্থান্বেষী মহল বাংলাদেশে সব সময় ক্রীড়ানকের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ দেশের ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে ২৫টি ক্যাডারের প্রতিনিধিত্ব করে। প্রায় ৬০ হাজার কর্মকর্তার মধ্যে ২৫টি ক্যাডারে প্রায় ৫৩ হাজার কর্মকর্তা চাকরি করেন। দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি, জনসেবা এ ২৫টি ক্যাডারের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। তাই ২৫টি ক্যাডারকে পাশ কাটিয়ে শুধু একটি ক্যাডারের প্রতিনিধি দিয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার সম্ভব নয়।
তাদের দাবিগুলো হলো:
১. বিদ্যমান জনপ্রশাসন সংস্কার কমিটি পুনর্গঠন করতে হবে।
২. আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের মাধ্যমে সব ক্যাডারের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।
৩. সিভিল সার্ভিসের বাইরে জনপ্রশাসন বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞকে কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিসিএস এর কৃষি ক্যাডার মো. আরিফ হোসেন, শিক্ষা ক্যাডার ড. মুহাম্মদ মফিজুর রহমান, রেলওয়ে ক্যাডার মো. শহিদুল ইসলাম, গণপূর্ত ক্যাডার মো. জামিলুর রহমান, পশুসম্পদ ক্যাডার ড. মুহাম্মদ আহসান হাবীব, সমবায় ক্যাডার মোছা. নূর-ই-জান্নাত প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০২৪
এসসি/আরআইএস