বরিশাল: বাবুগঞ্জের মাধবপাশা চন্দ্রদ্বীপ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রনব কুমার ব্যাপারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ উন্নয়নের নামে অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি।
জানা গেছে, অধ্যক্ষ প্রনব কুমার ব্যাপারীর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে গত ২৫ আগস্ট বিক্ষোভ করেছিল শিক্ষার্থীরা।
তদন্ত কমিটি প্রনবের বিরুদ্ধে সাতটি দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে। তার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সই জাল করে বরাদ্দ পেতে চিঠি পাঠানোর অভিযোগও রয়েছে। তিনি পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ব্যাপক দাপট দেখাতেন বলেও অভিযোগ আছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, ২০০৫ সালে চন্দ্রদ্বীপ হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন প্রনব কুমার ব্যাপারী। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে তিনি স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ হন। এরপর থেকে দেখাতে শুরু করেন ক্ষমতার দাপট।
চলতি বছর ৫ আগস্ট পর্যন্ত অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থ লোপাট, স্বজনপ্রীতি, শিক্ষার্থী নির্যাতনসহ নানা অপকর্ম করেছেন প্রনব কুমার ব্যাপারী। পট পরিবর্তনের পর থেকে তিনি কলেজে আসা বন্ধ করে দেন। এরপর তার পদত্যাগের দাবিতে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। তাদের কর্মসূচিতে সমর্থন দেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও অভিভাবকরা।
এসব ঘটনার মধ্যে একবার চন্দ্রদ্বীপ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে আসার চেষ্টা করেন প্রনব। এ ব্যাপারে জানতে পেরে শিক্ষার্থীরা তার অনিয়ম, দুর্নীতিসহ নানা অপকর্মের লিখিত অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে জমা দেন। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। সেই কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, অধ্যক্ষ প্রনব কুমার ব্যাপারী চন্দ্রদ্বীপ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের অগ্রণী ব্যাংকের কাশিপুর শাখার হিসাব নম্বর থেকে ২০২২ সালের ২৫ জুলাই ১ লাখ, ২০২৩ সালের ১৪ মে ৫০ হাজার ও সোনালী ব্যাংকের গুঠিয়া শাখা একই দিনে ২০ হাজার টাকা উঠিয়েছেন। ওই টাকা কোথায় খরচ করেছেন, তার কোনো ভাউচার তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জমা দেননি।
চন্দ্রদ্বীপ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে প্রতিমাসে ৬২০০ ও প্রধান শিক্ষক পদের জন্য ৫৫০০ টাকা বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন। লাইব্রেরির জন্য প্রায় এক লাখ মূল্যের ৩২৮টি বই ক্রয় করা ভাউচার জমা দেন। কিন্তু সেখানে বই পাওয়া গেছে মাত্র ৫৪টি। যার দাম সর্বোচ্চ ১৬ হাজার টাকা বলে তদন্ত কমিটি জানিয়েছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়ে খরচ দেখিয়েছেন। কিন্তু কোনো ভাউচার ও খাত উল্লেখ করেননি। নিলাম প্রক্রিয়া না মেনে প্রতিষ্ঠানের পুকুর ইজারা দিয়েছেন। ইজারার টাকাও বিদ্যালয়ের ফান্ডে জমা দেননি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাত শতাধিক শিক্ষার্থীর পরীক্ষার খাতা বিক্রয়ের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। দুইটি ভাউচারের মাধ্যমে ৭০টি চেয়ার ও পাঁচটি টেবিল কিনেছেন উল্লেখ করলেও তদন্ত কমিটি মাত্র ২০টি চেয়ার পেয়েছে। সহকারী শিক্ষক মো. আল আমিন শেখের স্বাক্ষর জাল করার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এছাড়া, প্রনব কুমার ব্যাপারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাকিলা রহমানের সই জাল করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানাগারের জন্য যন্ত্রপাতি ক্রয় করার জন্য এক লাখ টাকা বরাদ্দের প্রত্যয়নপত্র মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন।
এসব ব্যাপারে জানতে প্রনব কুমার ব্যাপারীর মোবাইলে কয়েকবার কল করা হয়। কিন্তু তিনি বার বার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাকিলা রহমানের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টাও করা হয়। কিন্তু তিনি ব্যস্ত থাকায় সেটি সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৬, ২০২৪
এমএস/এমজে