ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ঈশ্বরগঞ্জে ৭৫ হাজার অভিভাবককে ইউএনও’র খোলাচিঠি 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০২৪
ঈশ্বরগঞ্জে ৭৫ হাজার অভিভাবককে ইউএনও’র খোলাচিঠি 

ময়মনসিংহ: পরীক্ষার রেজাল্টই জীবনে সফলতার একমাত্র সংজ্ঞা নয়- বলে মন্তব্য করেছেন ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সারমিনা সাত্তার।  

উপজেলার প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং মাদরাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থীর অভিভাবককে খোলা চিঠি দিয়ে এই বার্তা জানিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) সকাল থেকে উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে ৭৫ হাজার অভিভাবককে এই খোলা চিঠি বিতরণ শুরু করা হয় বলে জানিয়েছেন এই ইউএনও।

চিঠিতে ইউএনও উল্লেখ করেন, ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে আপনার সন্তানের বার্ষিক পরীক্ষা। সব বাবা মায়েরই স্বপ্ন থাকে, সন্তান খুব ভালো রেজাল্ট করবে, ক্লাসের টপার হবে। আপনার সন্তান যদি পরীক্ষায় খুব ভালো নম্বর পায় তবে সেটি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত আনন্দের। কিন্তু যদি না পায়, তাহলে অনুরোধ থাকবে, তাদের ওপর নিজের বিশ্বাসটুকু হারাবেন না। সন্তানকে আশ্বস্ত করুন, তার নিজের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার ওপর তাকে আস্থা রাখতে বলুন। সে চাইলেই সামনে আরও ভালো করতে পারবে একটুকু আত্মবিশ্বাস তাকে দিন। তাকে বুঝিয়ে বলুন, পরীক্ষার নম্বর নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই, এটি কেবলই একটি ক্লাস পরীক্ষা। জীবনের আরও বহু পথ পাড়ি দিয়ে বহু পরীক্ষার মুখোমুখি তাকে হতে হবে। ক্লাসের এই পরীক্ষাগুলি দিয়ে তাকে ধাপে ধাপে প্রস্তুত করা হচ্ছে কেবল।  

চিঠিতে তিনি আরও উল্লেখ করেন- কেবল পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর দিয়েই সন্তানকে বিচার করা থেকে বিরত থাকুন। আপনার সন্তান নিঃসন্দেহে বহু সুপ্ত প্রতিভার অধিকারী। তার সুপ্ত গুণাবলীগুলো বিকাশের সুযোগ করে দিন। একদিন তার প্রতিভা দিয়েই সে বিশ্বজোড়া খেলোয়াড় হবে অথবা হবে কিংবদন্তী শিল্পী অথবা স্বনামধন্য কোনো উদ্যোক্তা! পুরো বিশ্ব জয় করে একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আপনার সামনেই সে বলবে, আমি পেরেছি! তোমাদের সন্তান পেরেছে! সে পর্যন্ত তার হাত ধরে তাকে সুন্দর আগামীর পথে আপনিই এগিয়ে নিয়ে চলুন।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এবং মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের দপ্তর থেকে সবগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা যুক্ত করে এই চিঠি প্রস্তুত করা হয়েছে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।  

তারা জানান, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী সংখ্যা অনুযায়ী অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে লেখা চিঠিগুলো পাঠানো হচ্ছে। পরে প্রতিষ্ঠানগুলো অভিভাবকদের কাছে চিঠিগুলো পৌঁছে দিবে শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে।  

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সারমিনা সাত্তার বলেন, অনেক সময় পরীক্ষায় কোনো শিক্ষার্থী একটু খারাপ করলেই মা-বাবা মন খারাপ করে তাদের কঠোর শাসনে নিয়ে আসেন। এটা ঠিক নয়। আমাদের মনে রাখতে হবে সবাই ক্লাসের ফাস্ট হয় না। ৮০ রোল নম্বরের ছেলে বা মেয়েটাও জীবনে কোনো একদিন সফল হবে না, তা এখনই বলা যাবে না। তাই তাদের পড়াশোনার পাশাপাশি নিজ নিজ প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দেওয়া প্রতিটা অভিভাবকের কর্তব্য। এই উদ্যোগটা নেওয়ার উদ্দেশ্য আমাদের অভিভাবকরা যেন তাদের সন্তানকে কেবল পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর দিয়ে বিবেচনা না করে। কারণ পরীক্ষার রেজাল্টই জীবনে সফলতার একমাত্র সংজ্ঞা নয়। তাই ভালো রেজাল্টের প্রত্যাশার চাপে নয় বরং পড়াশুনার পাশাপাশি সন্তান বেড়ে উঠুক তার নিজস্ব প্রতিভার সবটুকু বিকাশের ডানা মেলে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০২৪
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।