ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

৯ মাসের আলিজার জন্য আহাজারি বাবার

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০২৪
৯ মাসের আলিজার জন্য আহাজারি বাবার বাবার কোলে হাস্যজ্জ্বল শিশু আলিজা খাতুন

নাটোর: শীতের রাতে লেপ-কাঁথা মুড়ি দিয়ে সবাই ছিলেন গভীরে ঘুমে। হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলে তারা দেখেন গোটা বাড়ি আগুনে দাউ দাউ করে পুড়ছে।

প্রাণ বাঁচাতে হুড়মুড় করে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসেন পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু ভেতরে রয়ে যায় ওই পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য ৯ মাস বয়সী আলিজা খাতুন।  

মেয়েকে উদ্ধারে শিশুটির মা আগুন টপকিয়ে ঘরে ঢোকার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। আকস্মিক অজ্ঞান হয়ে যান। তাকে ফের নিরাপদে দূরে সরিয়ে নেন বাকিরা।

আর এরইমধ্যে আসবাবপত্র, দরজা-জানালার সঙ্গে শিশু আলিজাও পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) রাত পৌনে ১টার দিকে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে নাটোরের বড়াইগ্রামের জোনাইল ইউনিয়নের শিমুলতলা গ্রামে।  

আগুনে পুড়ে প্রাণ হারানো আলিজা বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘সময় টিভি’র সিনিয়র রিপোর্টার মো. আলতাফ হোসেনের একমাত্র মেয়ে। আলতাফ হোসেন শিমুলতলা গ্রামের মো. কায়েস মোল্লার ছেলে।

এ অগ্নিকাণ্ডে আলতাফের বাড়ির ৪টি কক্ষ পুড়ে ভস্মীভূত। এতে প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে তার। তবে সন্তান হারানোর বেদনা কিছুই নয় এই ক্ষতির কাছে। তিনি বার বার আহাজারি করছেন, ‘আমার একমাত্র সন্তানকে আগুন নিয়ে নিল। এখন আমি কীভাবে বাঁচব?’

আগুনে ভস্মীভূত আলতাফ হোসেনের বাড়ি

পরিবারের বরাত দিয়ে জেলার বনপাড়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশন কর্মকর্তা আকরাম হোসেন বাংলানিউজকে জানান, শুক্রবার রাতে ওই বাড়িতে আগুন লাগে। সেসময় পরিবারের সবাই ঘুমিয়ে ছিলেন। এজন্য প্রথম দিকে আগুন লাগার ঘটনাটি বুঝতে পারেননি তারা। পরে আগুনের দাহের তীব্রতায় জেগে পরিবারের অন্য সব সদস্য ঘর থেকে বের হতে পারলেও আলিজা খাতুন ঘরেই থেকে যায়। পরে সেখানেই পুড়ে সে মারা যায়। শিশুটির মা আগুন টপকিয়ে উদ্ধার করার চেষ্টা করার সময় আকস্মিক অজ্ঞান হয়ে যান। এতে তিনিও কিছুটা আহত হয়েছেন। রাতেই স্থানীয় চিকিৎসক ডেকে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, পরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। কিন্তু এরইমধ্যে ওই বাড়ির ৪টি কক্ষ পুড়ে যায়। পরিবারটির মতে, অগ্নিকাণ্ডে আনুমানিক ১০ লাখ টাকার আসবাবপত্রসহ অন্যান্য মালামাল পুড়ে গেছে।  

বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে ধারণা এ কর্মকর্তার।

শিশু আলিজার বাবা আলতাফ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, বাড়িতে আগুন লাগা দেখে তিনি নিজেই নেভানোর চেষ্টা করতে থাকেন আর তার স্ত্রী লোকজনকে ডাকাডাকি করতে থাকে। এরই মধ্যে আগুন সারা বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে।  

সে সময় সবাই বাড়ির ভেতর থেকে বের হয়ে এলেও মেয়ে আলিজাকে উদ্ধার করতে পারেননি বলে কাঁদতে থাকেন আলতাফ।  

বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। ঘটনাটি বেদনাদায়ক।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০২৪
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।