ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

অনলাইনে চাকরির নামে প্রতারণার ফাঁদ, চীনা নাগরিকসহ গ্রেপ্তার ৩

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪
অনলাইনে চাকরির নামে প্রতারণার ফাঁদ, চীনা নাগরিকসহ গ্রেপ্তার ৩ চীনা নাগরিকসহ গ্রেপ্তার ৩

ঢাকা: অনলাইনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এক চীনা নাগরিকসহ তিনজন গ্রেপ্তার হয়েছেন।  ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরখান থানা পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে।

তারা হলেন, মো. মোর্শেদ আলম (৩৮), জামাল উদ্দিন (৪৩) ও চীনা নাগরিক কুকি (৩৫)।

মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

এর আগে সোমবার রাতে উত্তরখান ও গুলশান থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে প্রতারণার নগদ নয় লাখ ৪৩ হাজার টাকা, চার হাজার ডলার, বেশ কিছু বিদেশি মুদ্রা, চারটি মোবাইল ফোনসেট ও কয়েকটি চেকবইয়ের পাতা উদ্ধার করা হয়।

উত্তরখান থানা সূত্রে জানা যায়, গ্রেপ্তাররা জনৈক নাহিদুল ইসলামকে (২৮) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন উপায়ে অনলাইনে ‘পলারস্টেপ সফটওয়্যারে’ চাকরির জন্য প্রস্তাব দেন। তিনি সরল বিশ্বাসে তাদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে ‘পলারস্টেপ সফটওয়্যারে’ অনলাইনে কাজ শুরু করেন।  

কাজের শুরুতে তারা নাহিদুল ইসলামকে ৮২০ টাকা কমিশন দেন। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন অফারের প্রলোভন দেখিয়ে তারা  নাহিদুল ইসলামের কাছ থেকে ডাচ বাংলা ব্যাংকের আনাস এন্টারপ্রাইজ নামে একটি চলতি অ্যাকাউন্টে কয়েক দফায় চার লাখ ৪৩ হাজার ৩৭৭ টাকা দেন।

এরপরও বাদী নাহিদুল ইসলামেকে আর কোনো কমিশন না দিয়ে পুনরায় তিন লাখ ১৯ হাজার ১৩০ টাকা চাইলে তার সন্দেহ হয়। তখন তিনি ডাচ বাংলা ব্যাংকে গিয়ে জানতে পারেন অ্যাকাউন্টটি  উত্তরখানের বাবুর্চি বাড়ির আনাস এন্টারপ্রাইজের নামে। তখন বাদী বিষয়টি উত্তরখান থানায় জানান।

ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে এবং আইনগত সহায়তা দিতে উত্তরখান থানা পুলিশের একটি দল আনাস এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. মোর্শেদ আলমকে পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন এবং পুলিশকে জানান জামাল উদ্দিন নামের একজনের সহযোগিতায় তার নিজ নামের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২২ ডিসেম্বর প্রায় ৩২ লক্ষ টাকা যোগ হয়েছে।  

এর মধ্যে নয় লাখ ৪৩ হাজার টাকা মোর্শেদের নিজের এবং অবশিষ্ট টাকা জামাল উদ্দিনের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়। থানা পুলিশ তখন মো. মোর্শেদ আলমকে হেফাজতে নেয় এবং তার কাছ থেকে নয় লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা, দুটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন এবং কিছু চেকের পাতা জব্দ করে।

মোর্শেদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাবুর্চি বাড়ির গফুর মুন্সী রোডের একটি বাসা থেকে জামালকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনিও ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। থানা পুলিশ তার কাছ থেকে চার হাজার ডলার ও অন্যান্য বিদেশি মুদ্রা, দুটি মোবাইল ফোন এবং ব্যাংকের চেকবইয়ের কিছু পাতা জব্দ করে।

পরে জামালের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দক্ষিণখান জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. নাসিমের নেতৃত্বে উত্তরখান থানার একটি দল সোমবার বিকেল আনুমানিক সাড়ে ৪টার দিকে গুলশান থানা পুলিশের সহায়তায় গুলশান-১ থেকে চীনা নাগরিক কুকিকে গ্রেপ্তার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য সম্পর্কে থানা সূত্রে আরও জানা যায়, কুকি নামক ওই চীনা নাগরিকের সঙ্গে জামালের এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে চীনে গিয়ে পরিচয়। পরিচয়ের একপর্যায়ে কুকি জানায়, কিছুদিন পরে তিনি বাংলাদেশে আসবেন এবং তাকে একটি লাভজনক ব্যবসা দেবেন।  

১৫-২০ দিন আগে উত্তরায় একটি রেস্তোরাঁয় কুকির সঙ্গে জামালের সাক্ষাৎ হয়। সেখানে তিনি জামালকে কয়েকটি বিজনেস অ্যাকাউন্ট নম্বর দিতে বলেন। এসব নম্বরে বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা আসবে। কুকির দেওয়া নম্বরে জামালকে ওই টাকা ট্রান্সফার করতে হবে।

কুকি জানান এর বিনিময়ে জামাল কমিশন পাবেন। জামাল প্রস্তাবে রাজি হয়ে মোর্শেদ আলমের আনাস এন্টারপ্রাইজের বিজনেস অ্যাকাউন্ট নম্বরর কুকিকে দেন।  

গ্রেপ্তার কুকি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঙ্গে নিজে জড়িত থেকে তার সহযোগীদের সহায়তায় বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে বিশ্বাস ভেঙে প্রতারণামূলকভাবে অর্থ আত্মসাৎ করে মর্মে স্বীকার করেন।  

ভুক্তভোগী নাহিদুল ইসলামের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ডিএমপির উত্তরখান থানায় গ্রেপ্তার তিনজনসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের হয়েছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও ঘটনায় জড়িত অন্যান্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪
এজেডএস/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।