খুলনা: খুলনা পাসপোর্ট অফিসে মাসের পর মাস এমন কি বছর ধরে চার হাজার ৮শ ৫২টি পাসপোর্ট বই বিতরণের অপেক্ষায় পড়ে আছে। ফোনে ও অফিসিয়াল নোটিশ দিয়ে যোগাযোগ করেও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না এসব পাসপোর্টের গ্রাহকদের।
সাধারণ ক্যাটাগরিতে নির্ধারিত ২১ কর্মদিবসের মধ্যে গ্রাহকদের পাসপোর্ট ডেলিভারি দেওয়ার বিধান থাকলেও আগে সেটি প্রায় তিন মাস এবং জরুরি ক্যাটাগরিতে নির্ধারিত সাত কর্মদিবসের মধ্যে পাওয়ার কথা থাকলেও আগে মাসের পর মাস গেলেও পাওয়া যেতো না পাসপোর্ট। তখন পাসপোর্ট অফিসে কচ্ছপ গতির সেবা দিলেও এখন সেখানে এসেছে পরিবর্তন। দ্রুত গ্রাহকরা পেয়ে যাচ্ছেন কাঙ্ক্ষিত পাসপোর্ট।
কোথায় গেলেন পাসপোর্টধারীরা
মাসের পর মাস ধরে পড়ে আছে ৪ হাজার ৮৫২টি পাসপোর্ট। কোনোভাবেই এসব পাসপোর্ট আবেদনকারীর হদিস মিলছে না। পাসপোর্টগুলো সংগ্রহ করতে আবেদনকারীর ঠিকানায় একাধিকবার চিঠি পাঠিয়েও অনেকের সাড়া মেলেনি। এসব পাসপোর্টের বেশিরভাগই জরুরি প্রয়োজনে জরুরিভিত্তিতে টাকা জমা দিয়ে আবেদন করা হয়। ইস্যু করা পাসপোর্টগুলো সংগ্রহ না করায় কোথায় গেলেন এসব পাসপোর্টধারীরা, এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে।
পাসপোর্ট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, শেখ হাসিনার সরকার পতন পরবর্তী প্রেক্ষাপটে মেডিকেল বা জরুরি কাজ বাদে বাংলাদেশিদের অন্য কোনো ভিসা দিচ্ছে না ভারত সরকার। খুলনার মানুষ বেশিরভাগই ভারতে যান। ভারতের ভিসা বন্ধ থাকায় পাসপোর্ট সংগ্রহ করছেন না অনেকে। এছাড়া সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগ নেতারা গাঁ ঢাকা দেওয়ায় পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে আসছেন না অনেকে এমনটিও বলছেন কেউ কেউ।
এক বছরে পাসপোর্ট অফিসের সংক্ষিপ্ত চিত্র
খুলনা বিভাগীয় আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত খুলনা পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্ট আবেদন জমা হয়েছে প্রায় ৭৯ হাজার। এর মধ্যে প্রায় ৭৭ হাজার পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে।
২০২৪ সালে খুলনা পাসপোর্ট অফিস থেকে প্রায় ৪৫ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। গত ১ বছরে অফিসের প্রবেশদ্বারে উন্মুক্ত স্থানে সেবাকক্ষ/কাউন্টার নির্দেশিকামূলক একটি বোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। এর ফলে আবেদনকারীরা তাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা সরাসরি সঠিক কক্ষ/কাউন্টারে গিয়ে দিতে পারেন। অফিস আঙ্গিনায় টিভি মনিটরে এবং ইউটিউবে পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণের একটি নির্দেশনামূলক ভিডিও ক্লিপ সার্বক্ষণিক প্রচারিত হচ্ছে। ফলে আবেদনকারীরা নিজেদের আবেদন নিজেরা ঘরে বসে পূরণ করতে পারছেন। পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণ নির্দেশিকা সম্বলিত লিফলেট এবং ভিজিটিং কার্ড সাইজের পকেট লিফলেট প্রস্তুত করে সেনা প্রত্যাশীদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। অফিসের বিভিন্ন স্থানে তথ্য সম্বলিত ব্যানার ও ফেস্টুন প্রদর্শন করা আছে। সেবাগ্রহিতার সুবিধার্থে ওপেন ডোর পলিসি গ্রহণ করা হয়েছে, এর ফলে সেবাগ্রহীতারা যেকোনো সময় কোনো প্রয়োজনে নির্দ্বিধায় কর্মকর্তার রুমে প্রবেশ করে সেবা নিতে পারেন।
পাসপোর্ট পরিচালকের ভাষ্য
খুলনা বিভাগীয় আঞ্চলিক পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পরিচালক মো. আবু সাইদ বাংলানিউজকে বলেন, খুলনা পাসপোর্ট অফিসে বর্তমানে অবিতরণ করা পাসপোর্টের সংখ্যা ৪ হাজার ৮৫২টি। ১ মাসের অধিক সময় পর্যন্ত অবিতরণ করা পাসপোর্টে সংখ্যা ১৭০৫টি। ছয় মাসের অধিক সময় পর্যন্ত অবিতরণ করা পাসপোর্ট নেওয়ার জন্য কল নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
পরবর্তীতে তিন মাসের অধিক সময় পর্যন্ত অবিতরণ করা পাসপোর্ট নেওয়ার জন্য ফোনকল করে পাসপোর্ট গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয় এবং ফোনকল পাওয়া না যাওয়া আবেদনকারীদের কল নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ফেসবুকে অবিতরণ করা পাসপোর্ট নেওয়ার অনুরোধ এবং পাসপোর্ট সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য স্বপ্রণোদিতভাবে আপলোড করা আছে। কয়েক মাস আগে অফিসে অবিতরণ করা পাসপোর্ট রাখার নির্ধারিত জায়গা ভরে গিয়েছিল। যোগাযোগ করা করার পর কেউ কেউ এসে পাসপোর্ট নিয়ে গেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২৫
এমআরএম/এএটি