মাদারীপুর: দালালের খপ্পরে পড়ে ও নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন মাদারীপুরের রাকিব মহাজন (২৬) নামে এক যুবক। দীর্ঘ তিন বছর লিবিয়ার গেমঘরে দালাল চক্রের ভয়াবহ অমানবিক নির্যাতন শিকার হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পেয়েছে তার পরিবার।
বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাকিবের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন তার পরিবার।
নিহত রাকিব মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের পখিরা গ্রামের নাজিম উদ্দিন মহাজনের ছেলে।
জানা গেছে, তিন বছর আগে উন্নত জীবনের আশায় মাদারীপুর সদর উপজেলার মৃত ফটিক মৃধার ছেলে জাহাঙ্গীর মৃধার প্রলোভনে পড়েন রাকিব। জাহাঙ্গীর তার ভায়রা শরীয়তপুরের পালং থানার ধানুকা ইউনিয়নের ছোট বিনোদপুর গ্রামের সোহাগ মাতুব্বরের মাধ্যমে ২৭ লাখ টাকায় ইতালিতে পৌঁছে দেওয়ার চুক্তি করেন। পরে ২৭ লাখ টাকা দিয়ে তিন বছর আগে লিবিয়ায় পাড়ি জমান রাকিব। তবে লিবিয়ার নেওয়ার পরে গেমঘরে রেখে আরও টাকার জন্যে নির্যাতন চালাতে থাকেন সোহাগ মাতুব্বর। পরে রাকিবের বাবা নাজিম উদ্দিন ধার-দেনা করে আরও ৫ লাখ টাকা দেন সোহাগকে। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। লিবিয়ায় দুবছর চার মাস অসহ্য যন্ত্রণা-নির্যাতন সহ্য করে কাটিয়েছেন রাবিক।
আরও জানা গেছে, দুবছর চার মাস পরে সোহাগের গেমঘর থেকে বেরিয়ে আরেক দালাল সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের ব্রাক্ষ্মন্দী গ্রামের মাজেদ খলিফাকে ধরে রাকিবের পরিবার। তাকেও আট মাস আগে ১৫ লাখ টাকা দেওয়া হয় গেম করার জন্যে। কিন্তু টাকা নিয়ে তিনিও গেমঘরেই নির্যাতন চালান সোহাগকে। এক পর্যায়ে রাকিব গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে লিবিয়ার একটি হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যু হয় রাকিবের। মৃত্যুর খবর দালাল মাজেদ খলিফাই রাকিবের পরিবারকে জানান। মৃত রাকিবের কয়েকটি ছবি-ভিডিও পাঠান পরিবারের কাছে! এতে শোকের ছায়া নেমে আসে পুরো পরিবারসহ এলাকাবাসীর মধ্যে।
নিহত রাকিবের বাবা নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘দফায় দফায় টাকা দিয়ে আমি সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি। এ পর্যন্ত সোহাগ আর মাজেদকে ৪৫ লাখ টাকা দিয়েছি। তারপরে এখন আমার ছেলের মৃত্যুর খবর শুনতে হলো। আমার ছেলেকে না খাইয়ে মেরে ফেলছে। কয়েকদিন আগেও আমার ছেলে ভিডিওতে তার নির্যাতনের কথা বলেছে। আর বাঁচার জন্যে আকুতি করেছে। কিন্তু আমার ছেলেকে বাঁচাতে পারলাম না। ’
নিহতের ছোট চাচা শাহজালাল মহাজন বলেন, ‘নির্যাতন করে আমার ভাতিজাকে হত্যা করেছে দালালরা। কিন্তু দালালরা তা অস্বীকার করে বলছে, অসুস্থ হয়ে রাকিবের মৃত্যু হয়েছে। আমরা রাকিবের হত্যার বিচার চাই। এভাবে যেন আর কোনো মায়ের বুক খালি না হয়। ’
তবে অভিযোগের বিষয়ে স্থানীয় দালাল জাহাঙ্গীর মৃধা বলেন, ‘আমার ভায়রা সোহাগের মাধ্যমে যাওয়ার কারণে আমাকে জড়ানো হচ্ছে। কেউ বলতে পারবে না যে, আমি তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছি। আর ওই ছেলে অসুস্থ হয়ে লিবিয়ায় মারা গেছে। আমার ভায়রা বরং সেখানে রাকিবের চিকিৎসা করিয়েছে। এর বেশি কিছু জানি না। ’
অন্যদিকে, মাজেদ খলিফার বাড়িতে কাউকে পাওয়া যায়নি।
স্থানীয়রা বলছেন, মৃত্যুর বিষয়টি জানার পরে তার পরিবার বাড়ি থেকে পালি গেছে।
মাদারীপুর জেলা পুলিশের তথ্য মতে, মাদারীপুরে গত বছর লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে জেলার অন্তত শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় ২০০ মামলা দায়ের হয়েছে ৫ শতাধিক দালালের বিরুদ্ধে। কিন্তু মামলায় জামিন পেয়ে পুনরায় দালালিতে যুক্ত হন দালালরা।
মাদারীপুর পুলিশ সুপার (এসপি) মো. সাইফুজ্জামান বলেন, বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি মাদারীপুরে দালাল চক্রের বিরুদ্ধে। আমরা জেলা পুলিশ এসব বিষয়ে জিরো টলারেন্সে আছি।
বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২৫
এসআরএস