ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘স্যার, অবরোধ শেষ অইবো কবে’

খন্দকার সুজন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৫
‘স্যার, অবরোধ শেষ অইবো কবে’ ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মানিকগঞ্জ: অবরোধ আর হরতালে কোনো রহমের কাম নাই। ঘরে খাওনের কোনো চাইল নাই।

সন্ধ্যায় ঘরে গেলে সৎ মায় বকা দেয়। ছোট ভাইড্যা না খাইয়া থাকে। স্যার এই হরতাল অবরোধ কবে শেষ অইবো, এইডা কি কইতে পারেন?

শুক্রবার (২৩ জানুয়ারি) বিকেলে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ার মাঝ পদ্মায় রো রো ফেরি শাহ্ মখদুমে বাংলানিউজের এ প্রতিবেদককে কথাগুলো বলছিলেন সুজন সরকার (১৩) নামে এক শ্রমজীবী কিশোর।

পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটের বিভিন্ন ফেরিতে প্রায় পাঁচ বছর ধরে জুতা সেলাই ও পালিশের কাজ করে আসছেন সুজন সরকার।

বিএনপির ডাকা অবরোধ আর হরতালে ফেরি পারাপারে তেমন কোনো যাত্রী না থাকায় তার ব্যবসাতেও ভাটা পড়েছে। ফলে কাজ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি। তার এখন একটাই চিন্তা কবে এ অবস্থার পরিবর্তন হবে কবে।

সুজন সরকার বলেন, চার ভাই আর এক বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। সবার বড় সুচরিতা সরকারের বিয়ে হয়েছে শেরপুর জেলায়। চার ভাইয়ের মধ্যে সুজন সবার বড়। মরনব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মা নলিতা রানী সরকার বিনা চিকিৎসায় ছয় মাস আগে মারা গেছেন। এরপর বাবা সচীন সরকার আবার বিয়ে করেছেন।

নিজস্ব কোনো জায়গা জমি না থাকায় পাটুরিয়া ফেরি ঘাট এলাকার চার নম্বর ঘাট পল্টুন এলাকায় সৎ মা আর বাবার সঙ্গে একত্রে ভাড়া একটি বাড়িতে বসবাস করেন তারা। সুজন সরকারের বাবাও একই কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। ফলে সংসারের অভাব অনটনের কারণে স্কুলে যাওয়ার ভাগ্য হয়নি তার।

লেখাপড়া বলতে কোনো রকমে নিজের নামটি লিখতে পারেন সুজন। বাবার দেওয়া তিন শত টাকা দিয়ে জুতা পালিশের বিভিন্ন সরঞ্জাম কিনে বিভিন্ন ফেরিতে জুতা পালিশ করে কোনো রকমে কেটে যাচ্ছিল তার দিন।

কিন্তু বিএনপির টানা অবরোধ আর হরতালে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে যাত্রী পারাপার তেমন একটা নেই বলে কাজ বিহীন রয়েছেন তিনিও। আগে সুজন প্রায় প্রতিদিনই ২৫০/৩০০ টাকা আয় করতেন। কিন্তু বর্তমানে সারাদিনে তার ১০০ টাকাও হয় না। কাজেই বাড়িতে গেলেই এখন সৎ মায়ের গালি-গালাজ খেতে হয় বলেও জানান তিনি।  

বিএনপির টানা এ অবরোধে শুধু সুজন নয়, ওই ফেরি ঘাট এলাকার কয়েক’শ হকার পরিবার অসহায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। ফেরির মধ্যে অলস সময় কাটছে তাদের। ফেরিতে যানবাহন আর যাত্রী না থাকায় তাদের এ বেহাল পরিণতি।

দুপুরে সরেজমিনে রো রো ফেরি শাহ্ মখদুমে পদ্মা পাড়ি দেওয়ার সময় দেখা যায় ফেরিতে একটি বড় ও একটি ছোট ট্রাক, দু’টি প্রাইভেটকার ও দু’টি মোটরসাইকেল নদী পার হচ্ছে।

শাহ্ মখদুম ফেরির খাবার ক্যান্টিনে দায়িত্বরত মেসিয়ার মজিবুর রহমান জানান, যেখানে প্রতিদিন ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা বিক্রি হতো। সেখানে এখন বিক্রি হয় ৩/৪ হাজার টাকা। ক্যান্টিনে সব মিলে ১৩/১৪ জন শ্রমিক কাজ করে। এ টাকায় তাদের খাবার যোগানোই এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।

পাটুরিয়া ঘাট শাখা সূত্র বাংলানিউজকে জানায়, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে বর্তমানে সাতটি রো রো ফেরি, ছয়টি ইউটিলিটি এবং তিনটি কে-টাইপ চলাচল করছে। আগে যেখানে এ নৌরুটে প্রতিদিন দুই হাজারের উপরে যানবাহন নদী পার হতো। এখন সেখানে প্রায় হাজার খানেক যানবাহন নদী পার হচ্ছে। এতে করে সরকার প্রতিদিন প্রায় ১৫ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।