সিলেট: দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ইতিহাসের পাতায় প্রবেশ করছে আরেকটি বছর। তেমনি ২০১৫ সালটি জুড়ে নানা কারণে আলোচনায় ছিল দেশের অন্যতম বিদ্যাপীঠ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)।
ছাত্রলীগের সংঘর্ষের জেরে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ক্যাম্পাস খুলে দেওয়া, দীর্ঘ দু’বছর পর ছাত্রলীগের কমিটির ক্যাম্পাসে ফেরা, উপাচার্য বিরোধী আন্দোলন, শিক্ষক লাঞ্ছিতের মতো ঘটনায় বছরজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল এ বিশ্ববিদ্যালয়।
পাশাপাশি ওয়েব ম্যাট্রিক্সের র্যাংকিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশ সেরা অবস্থান, প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা, সিএসই কার্নিভাল, অলিম্পিয়াড উৎসব, রোবোশাস ও বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সফলতাও ছিল উল্লেখযোগ্য।
হলে অস্ত্র উদ্ধার, বন্ধ বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া:
২০১৪ সালের ২০ নভেম্বর ছাত্রলীগের নতুন কমিটির ক্যাম্পাসে প্রত্যাবর্তন ইস্যুকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দুই পক্ষ।
এর জের ধরে কয়েকমাস বন্ধ রাখে শাবিপ্রবি কর্তৃপক্ষ।
পরে চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি আবাসিক হলে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। ২০ জানুয়ারি খুলে দেওয়া হয় আবাসিক হল এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
শাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কমিটিঃ
দীর্ঘদিন হল এবং ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থানের পর গত মার্চে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন ছাত্রলীগের কমিটির নেতাকর্মীরা।
২০১৩ সালে কমিটি ঘোষণার পর থেকে হল এবং ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে দীর্ঘ অচলাবস্থার পর ২০১৪ সালের ২০ নভেম্বর সংঘর্ষ হয়।
ওয়েবম্যাট্রিক্সে দেশসেরা শাবিপ্রবি:
বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নিয়ে গবেষণাকারী সংস্থা ওয়েবমেট্রিক্স ইনফোর র্যাংকিংয়ে গত মার্চে দেশের প্রথমস্থান অর্জন করে শাবিপ্রবি।
যা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখার মান, গবেষণা ও শিক্ষার পরিবেশকে আরও নতুন মাত্রায় নিয়ে যায়।
বছরজুড়ে উপাচার্য বিরোধী আন্দোলন:
শিক্ষকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির ‘অভিযোগ’ তুলে উপাচার্যের পদত্যাগে আন্দোলন শুরু করেন মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষকরা।
গত ১৩ এপ্রিল উপাচার্যের অসদাচরণের অভিযোগে পদত্যাগ করেন পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সৈয়দ বদিউজ্জামান ফারুক ও ভূগোল বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শরীফ মোহাম্মদ শরাফ উদ্দিন।
ওইদিন থেকে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, যা ক্রমান্বয়ে কঠোর আন্দোলনে রূপ নেয়। এ দাবিতে ৩৫টি পদ থেকে ৩৭জন শিক্ষক পদত্যাগ করেন।
শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ:
শিক্ষকদের আন্দোলন চলাকালে সবচেয়ে বিতর্কিত ঘটনা ঘটে গত ৩০আগস্ট। এদিন উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষকবৃন্দের’ ওপর ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ ওঠে।
তবে বিষয়টি অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। অন্যদিকে উপাচার্য অধ্যাপক আমিনুল হক ভূঁইয়া দাবি করেন, তাকে আন্দোলনকারীরা লাঞ্ছিত করেছেন। এ ঘটনায় পুরো দেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন লেখক ও অধ্যাপক জাফর ইকবাল।
পরবর্তীতে আন্দোলনের নানা পথ পরিক্রমায় অক্টোবরে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলন স্থগিত করেন আন্দোলনকারী শিক্ষকরা।
শিক্ষকদের বিভিন্ন ‘গ্রুপ’ ও শিক্ষক সমিতিতে বিভেদ:
আন্দোলনের এক পর্যায়ে উপাচার্যের পক্ষে আওয়ামী ও বাম সমর্থিত ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তচিন্তায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ’ অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেন।
পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত শিক্ষক ফোরামও উপাচার্যের সমর্থনে মাঠে নামেন। এ ইস্যুকে কেন্দ্র করে শিক্ষকদের বিভিন্ন গ্রুপ এবং শিক্ষক সমিতিতে প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব দেখা দেয়।
সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও প্রতিযোগিতায় সাফল্যঃ
আন্দোলনসহ বিভিন্ন কারণে শাবিপ্রবির পরিবেশ উত্তপ্ত থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জনও ছিল উল্লেখযোগ্য। এরমধ্যে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ধারাবাহিক সাফল্য, প্রোগ্রামিং কনটেস্ট, রোবোশাস, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, অলিম্পিয়াড আয়োজন, সিএসই কার্নিভালে বেশ সফলতা দেখিয়েছে শাবিপ্রবি।
বাংলাদেশ সময়: ০১৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৫
এমএ/