ঢাকা: প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেলো বেতন। তাই সরকারি চাকুরেদের বৃহস্পতি এখন তুঙ্গে।
ঘরের আলাপে ঘুরে ফিরে বর্ধিত বেতনের ক্লান্তিহীন যোগ-বিয়োগ। কর্মস্থলেও কাজ ভুলে একই আলোচনা বারবার। সবাই যেনো বুঁদ নতুন বেতনের নেশায়। বর্ধিত বেতনের ভাঁজে ভাঁজে জমা হচ্ছে নানা রঙা ভবিষ্যত। বর্ণিল সেই ছটার হাওয়া এসে লেগেছে বাংলানিউজ অফিসেও।
এরই মধ্যে সবার ব্যাংক একাউন্টে চলতি বেতন যাওয়া শুরু হয়েছে। ১ ও ২ জানুয়ারি সাপ্তাহিক ছুটি হওয়ায় কারো কারো বেতন পেতে আরো গোটা দুই দিন লাগবে বটে, কিন্তু সঙ্গে থাকবে বকেয়া ৩ মাসের বেতন। জুলাই থেকে শুরু হওয়া বকেয়ার বাকি অংশ ব্যাংক একাউন্টে ঢুকবে ফেব্রুয়ারি নাগাদ। এরপর পহেলা বৈখাশ থেকে শুরু নববর্ষ ভাতা।
১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়া নতুন বেতন কাঠামোতে আর একটি অন্যতম ইতিবাচক দিক হলো শ্রেণী প্রথা বিলুপ্ত হওয়া। ২০ গ্রেডের নতুন কাঠামোর সর্বোচ্চ বেতন ৪০ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৮ হাজার টাকা, সর্বনিম্ন ৪ হাজার ৯শ’ থেকে বেড়ে ৮ হাজার ২শ’।
২০ থেকে ৬ নম্বর গ্রেড পর্যন্ত বেতন বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশ, ৫ নম্বর গ্রেডে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ, ৩ এবং ৪ নম্বর গ্রেডে ৪ শতাংশ, ২ নম্বর গ্রেডে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
নতুন কাঠামোতে সিলেকশন গ্রেড বা টাইম স্কেল বিলুপ্ত হলেও আগেই যারা এই গ্রেডে পৌছেছেন সুবিধা বহাল থাকছে তাদের। টাইম স্কেলে বেতন যে হারে বৃদ্ধি পেতো তার চেয়েও বেশি হারে বাড়বে নতুন স্কেলে। তাই থাকছে না সাবেকি ইনক্রিমেন্ট পদ্ধতি।
নতুন কাঠামোতে গ্রেড-দুইয়ের ইনক্রিমেন্ট প্রতি বছর দেয়া হবে তিন দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে। গ্রেড-তিন এবং গ্রেড-চারের ইনক্রিমেন্ট হবে চার শতাংশ হারে, গ্রেড-পাঁচের ইনক্রিমেন্ট হবে চার দশমিক পাঁচ শতাংশ হারে, গ্রেড-ছয় থেকে ২০ পর্যন্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ইনক্রিমেন্ট হবে পাঁচ শতাংশ হারে।
দুই ধর্মীয় উৎসব ভাতার পাশাপাশি মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে যোগ হচ্ছে বাংলা নববর্ষ ভাতা। পেনশন বা অবসর ভাতাও মূল বেতনের ৮০ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৯০ শতাংশ। তবে নির্ধারিতই থাকবে বিশেষ ভাতা। আর বিশেষ অবদানের জন্য বিজ্ঞানীদের জন্য থাকবে অপরিসীম সুবিধা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চলতি বাজেটের ২০ শতাংশই ব্যয় হচ্ছে নতুন বেতন কাঠামো কার্যকরে। বিদায়ী ২০১৫ সালে ১৫ হাজার ৯শ’ ৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে বেতন এবং ভাতা উভয়ই মিলিয়ে অতিরিক্ত খরচ দাঁড়াবে ২৩ হাজার ৮২৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকায়।
কোন গ্রেডে কত বেতন
গ্রেড ১- ৭৮ হাজার (নির্ধারিত), গ্রেড ২- ৬৬ হাজার, গ্রেড ৩- ৫৬ হাজার ৫শ, গ্রেড ৪- ৫০ হাজার, গ্রেড ৫- ৪৩ হাজার, গ্রেড ৬- ৩৫ হাজার ৫শ, গ্রেড ৭- ২৯ হাজার, গ্রেড ৮- ২৩ হাজার, গ্রেড ৯- ২২ হাজার, গ্রেড ১০- ১৬ হাজার, গ্রেড ১১- ১২ হাজার ৫শ, গ্রেড ১২- ১১ হাজার ৩শ, গ্রেড ১৩- ১১ হাজার, গ্রেড ১৪- ১০ হাজার ২শ, গ্রেড ১৫- ৯ হাজার ৭শ, গ্রেড ১৬- ৯ হাজার ৩শ, গ্রেড ১৭- ৯ হাজার, গ্রেড ১৮- ৮ হাজার ৫শ, গ্রেড ১৯- ৮ হাজার ৩শ, গ্রেড ২০- ৮ হাজার ২৫০ টাকা।
নির্ধারিত বেতন থাকছে- সচিব-৭৮ হাজার, মেজর জেনারেল-৭৮ হাজার, সিনিয়র সচিব-৮২ হাজার, লে. জেনারেল- ৮২ হাজার, মুখ্য সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব-৮৬ হাজার এবং তিনবাহিনী প্রধান-৮৬ হাজার।
অনেক যাচাই-বাছাই শেষে ২০১৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে নুতন পে-স্কেলের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। এতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেতন বৃদ্ধির বিধান থাকায় আগামীতে কোনো স্থায়ী পে-কমিশন না গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৫
এসএমএ/জেডএম/