সিলেট: ‘বিড়াল ইঁদুরকে নিয়ে খেলতে খেলতে এক পর্যায়ে মেরে ফেলে। শিশু সামিউল আলম রাজনের বেলায় তেমনটিই হয়েছিল।
নৃশংস, বর্বরোচিত! সব বিশেষণ ছাপিয়েছিলো সিলেটে শিশু রাজন হত্যা। সিলেট সদর উপজেলার বাদেআলী গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান শিশু সামিউল আলম রাজন (১৩)।
সে ছিল কিছুটা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি ধরনের। এরপরও অভাবের সংসারে নিত্য সহযোগিতা তার। যে বয়সে বিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা, সে বয়সেই মায়ের সঙ্গে সবজি চাষ করতে হয়েছে। গত ৮ জুলাই সকালেও অন্যান্য দিনের মতো সবজি বিক্রি করতে বাজারে নিয়ে যায় সে। চুরির অপবাদ দিয়ে সেই বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি শিশুকে নির্যাতন করে কামরুল, চৌকিদার ময়না ও তার সহযোগীরা।
নির্যাতনের এক পর্যায়ে মারা যায় শিশু রাজন। মৃত্যুর পূর্বে পানি খেতে চেয়েছিল। পানির বদলে তাকে ঘাম খেতে বলে ঘাতকরা! হত্যার ভিডিওচিত্রে দেখা যায় একটি কালো লাঠি দিয়ে রাজনের বুকে, নাভিতে খুচানো হচ্ছিল এবং ১৬ সেকেন্ডে ২১টি চড় মারে চৌকিদার ময়না।
হত্যার পর মরদেহ গুম করতে গিয়ে ধরা পড়ে কামরুলের সহোদর মুহিত হাসান (দণ্ডপ্রাপ্ত)। ঘটনার পর কামরুল ধরা পড়লেও তাদের রক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন মহানগরীর জালালাবাদ থানার তিন পুলিশ (বরখাস্ত হওয়া)।
তখনও ঘাতক, পুলিশ, রাজনের গ্রামের কতিপয় লোক ছাড়া তেমন কেউ জানতেন না বিষয়টি। সংবাদমাধ্যমেও গুরুত্বহীনভাবে ছাপা হয়- হত্যার পর কিশোরের মরদেহ গুমের চেষ্টার খবর। গত ১০ জুলাই ইন্টারনেটে ভিডিওচিত্র ছড়িয়ে পড়ার টক অব দ্য কান্ট্রি হয়ে যায় বিষয়টি।
গত ১১ জুলাই (২০১৫ সাল) মিডিয়াগুলোর প্রধানতম খবর ছিল রাজন হত্যা ও তার ভিডিওচিত্র। এমনকি বিশ্ব মিডিয়ায়ও। বাকিটা ইতিহাস...।
এরপর টনক নড়ে প্রশাসনের। সরকারের বড় বড় মন্ত্রী-এমপিরাও রাজনের বাসায় আসেন, কথা বলে যান তার বাবা-মার সঙ্গে। ব্যক্তি, সংস্থা, সামাজিক সংগঠন এগিয়ে আসে রাজনের পরিবারের সাহায্যে। সঙ্গে চলতে থাকে বিক্ষোভ। গত ৮ নভেম্বর শিশু রাজন হত্যাকারীদের ফাঁসিসহ বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডাদেশের রায়ের মাধ্যমে জনতার দাবি পূরণ হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১৬
এনইউ/আইএ