নারায়ণগঞ্জ থেকে ফিরে: দুদকের গণশুনানিতে ভুক্তভোগীরা সেবা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ ও অভিযোগ করেছেন। তার মধ্যে অন্যতম এক বছর আগের একটি দুর্লভ ঘটনা তুলে ধরেন মো. মোশারফ হোসেন।
তিনি বলেন, দু’জন আহত মানুষকে নিয়ে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। দায়িত্বরত চিকিৎসক তাদের ‘মৃত’ বলে ঘোষণা করেন। এরপর তাদের দাফনের আগে গোসল করানোর সময় একজন নড়ে ওঠেন। তখনো তিনি জীবিত আছেন, মারা যাননি! এই যদি হয় আমাদের দায়িত্ব তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবেন বলে- দুঃখ প্রকাশ করেন মোশাররফ হোসেন।
জাহানারা বেগম নামে অন্তঃসত্ত্বা এক নারী অভিযোগ করেন, বুধবার (০৭ ডিসেম্বর) তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। এসময় হাসপাতালে দায়িত্বরত গাইনি চিকিৎসককে টাকা না দেওয়ায় তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন।
চিকিৎসক তাকে বলেন, ‘আপনার বাইরের চেহারাটা সুন্দর। কিন্তু আপনি অনেক কিপটা। ’ ফলে, উপজেলা হাসপাতালে গেলে চিকিৎসার বদলে হয়রানির শিকার বেশি হতে হচ্ছে।
জবাবে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা.তানভীর আহমেদ চৌধুরী বলেন, কিছুদিন আগে তিনি এই উপজেলায় জয়েন করেছেন। আর সাধারণত কাউকে ‘মৃত’ বলে ঘোষণা করলে তার ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। তবে, এমন ঘটনা যদি ঘটে থাকে, তাহলে দায়িত্বে অবহেলার কারণে তাদের শাস্তি হওয়া উচিত। এছাড়া সম্প্রতি ঘটনাগুলোর তদন্ত করে আগামী ৭দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেবেন।
শনিবার (১০ ডিসেম্বর) নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের সামনে দুদকের গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় এ গণশুনানির আয়োজন করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তা আবু তাহের মো. মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, সাব-রেজিস্ট্রার দুপুর ১২টার আগে অফিসে আসেন না। আর বিকেলে বিলম্ব ফি নিয়ে রেজিস্ট্রেশনের কাজ করেন। এছাড়া অর্থের বিনিময়ে তিনি বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম দলিলেরও কাজ করে থাকেন। এসময় গণশুনানিতে উপস্থিত ভুক্তভোগীরা হাত তুলে তার কথায় সমর্থন করেন।
জবাবে সাব-রেজিস্ট্রার বলেন, তিনি নিয়মিত অফিস করছেন। কোনো ধরনের দুর্নীতিমূলক কাজ করেন না। এমন কোনো প্রমাণ দিতে পারলে তিনি যেকোনো শাস্তি মাথা পেতে নেবেন।
শুনানিতে দুদকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দীন আহমেদ বলেন, সাব-রেজিস্ট্রার যদি অন্যায় করে থাকেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এজন্য স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন দুদকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সোনারগাঁও ত্রিবর্দী এলাকার আব্দুল লতিফ অভিযোগ করেন, তার ৮ শতাংশ জমি খারিজ করতে অফিসের নায়েক তার কাছে ৮০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেছেন। আর এই ঘুষ না দিলে তার জমি খারিজ হবে না বলে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন। এভাবে যদি গরিব মানুষের হয়রানি করা হয়, তাহলে তারা কোথায় যাবেন?
জবাবে সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুবায়েত হায়াত শিপলু বলেন, তিনি সেপ্টেম্বরে এখানে দায়িত্ব নিয়েছেন। আর জমি খারিজ করতে ১১শত টাকার বেশি লাগে না। যদি কেউ এর বেশি টাকা নেয়, তাহলে সরাসরি তাকে বিষয়টি জানানোর অনুরোধ করেন।
পল্লীবিদ্যুৎ নিয়ে অভিযোগ করেন, ববনাথপুর এলাকার মো.ইয়াকুব। তিনি বলেন, ২০১০ সালে তিনি বিদ্যুৎ নিতে ২ হাজার টাকা দিয়েছেন। কিন্তু এখনো অবধি তিনি বিদ্যুতের খুঁটি পাননি। আমাদের সঙ্গে এমন করলে আমাদের কোথায় যাওয়ার জায়গা আছে?
অভিযোগের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম মো.গোলাম মোস্তফা বলেন, বিদ্যুতের খুঁটি পাওয়ার জন্য আপনার আবেদন আমাদের কাছে রয়েছে। আপনি আগামী ১ মাসের মধ্যে বিদ্যুতের খুঁটি পাবেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২০১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৬
এসজে/পিসি