ঢাকা: ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার শারীরিক প্রতিবন্ধী আরশাদ (৪৫), স্ত্রী ফরিদা খাতুনকে সঙ্গে নিয়ে নগরীতে ভিক্ষা করেন। গত শনিবার (১০ ডিসেম্বর) সকালেও তেজগাঁও সাতরাস্তা টিঅ্যান্ডটি গেট পাবলিক টয়লেটে এসেছেন গোসল ও প্রাকৃতিক কাজ সারতে।
এখানে আসার পর থেকেই আরশাদকে ১০ টাকার রশিদ সংগ্রহ থেকে স্যান্ডেল খুলে প্রবেশ করা, টয়লেট ব্যবহারের সব ধরনের নিয়ম কানুন শেখাচ্ছেন টয়লেটের তত্ত্বাবধানকারী বিউটি। সাধারণ মানুষকে খুব বেশি শেখানো না হলেও প্রতিবন্ধী মানুষদের টয়লেট ব্যবহারের ধারণা দেন তিনি।
বিউটি বাংলানিউজকে বলেন, পাবলিক টয়লেটে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আসেন। প্রতিবন্ধীরা টয়লেট ব্যবহারে অভ্যস্ত না হওয়ায় তাদের নিয়ম-কানুন শেখানো হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে এসব মানুষ টয়লেট ব্যবহারে সচেতন হবেন।
তিনি বলেন, টয়লেট ব্যবহারকারীরা জুতা-স্যান্ডেল না খুলে সরাসরি ভেতরে চলে যান। আবার ভেতরে গিয়েও নির্দিষ্ট স্যান্ডেল ব্যবহার করতে চান না। টাকা দিলেও রশিদ নিতে চান না। অনেকেই কমোডের উপর পা তুলে বসেন। তারা বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পা তুলে না বসার বিষয়টিও বোঝানো হয়।
বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার জরিপের তথ্য মতে, প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল ও অপরিচ্ছন্নতার কারণে এক সময় রাজধানীতে চলাচলকারী মানুষের আতঙ্কের নাম ছিল পাবলিক টয়লেট বা গণশৌচাগার। মানুষের সেই আতঙ্ক কাটাতে এবং পাবলিক টয়লেট ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সিটি করপোরেশন এবং ওয়াটার এইড বাংলাদেশ নতুন টয়লেট স্থাপন শুরু করে।
ইতোমধ্যে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ১৫টি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে।
টয়লেট ব্যবহার করতে আসা পঞ্চাশোর্ধ্ব আবদুল হালিম বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক অনেক ভালো কাজ করেছে। তিনি রাস্তাঘাটের পাশাপাশি পাবলিক টয়লেটগুলো উন্নত করেছেন। আবার টয়লেটগুলো থেকে মানসম্মত সেবার পাশাপাশি ব্যবহারকারীদের সচেতনও করা হচ্ছে।
এদিকে টয়লেটের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা বিউটি জানান, প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে টয়লেটটি। ব্যবহারকারীদের চাপ থাকে সকাল ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত, দুপুর ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত। আবার সন্ধ্যার পর থেকে রাত আটটা পর্যন্ত। অন্যান্য সময়ে ভোর থেকেই মানুষের চাপ থাকে।
এখানে একসঙ্গে মোট ১৪ জনের টয়লেটের ব্যবহারের ব্যবস্থা আছে। এর মধ্যে ৬টি নারী, ৬টি পুরুষ ও দু’টি নারী-পুরুষ প্রতিবন্ধীদের জন্য। প্রতিবন্ধীদের দু’টি টয়লেটই হাই কমোড। সাধারণ মানুষের ১২টি টয়লেটের মধ্যে নারী ও পুরুষের জন্য একটি করে হাইকমোড রয়েছে।
টয়লেট ব্যবহারের পর হাত ধোঁয়ার জন্য হ্যান্ডওয়াশ ও মোছার জন্য আছে টিস্যুর ব্যবস্থা। আছে বিনামূল্যে সুপেয় পানির ব্যবস্থাও। এজন্য কেবল ওয়ান টাইম গ্লাসের দাম রাখা হয় একটাকা।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার দেওয়া তথ্য মতে, জনস্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা, নারীদের নিরাপত্তা ও শহরের সৌন্দর্য রক্ষার জন্য এ ধরনের পাবলিক টয়লেটের বিকল্প নেই। বিষয়টি বিবেচনা করেই এসব পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে।
পাবলিক টয়লেটে তিন বছরের জন্য এ সেবা দেওয়ার কাজ পেয়েছে ক্রিস্ট্রাল ক্লিনার লিমিটেড। একজন সুপারভাইজারের নেতৃত্বে পাঁচ জন পরিচ্ছন্নকর্মী সেবা দিচ্ছেন। প্রতিদিন পাবলিক টয়লেটগুলো ১৬ ঘণ্টা সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
এছাড়াও শহরের পাবলিক টয়লেটের সমস্যা দূর করতে প্রতিটি পেট্রোল পাম্পেও পাবলিক টয়লেট বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে বাস্তবায়নকারী সংস্থার।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা ছাড়াও ওয়াটার এইডের দেশি-বিদেশি কর্মকর্তারা প্রতিমাসে দুই-তিনবার এসব টয়লেটের কার্যক্রম দেখভাল করেন।
এ বিষয়ে ওয়াটার এইড বাংলাদেশের দেশীয় প্রতিনিধি ড. মো. খায়রুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা চেষ্টা করছি একটি মডেল তৈরি করে দিতে। এ উদ্যোগ দেখে ঢাকার পাশাপাশি অন্য সিটি করপোরেশনগুলো একই ধরনের পাবলিক টয়লেট তৈরি করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৬
এসই/জেডএস