ঢাকা: অভিবাসীদের সুরক্ষায় বৈশ্বিক কাঠামো তৈরি বিষয়ে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো একমত হলেও, এর ধরণ নির্ধারণ নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা চলছে মাত্র। এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে এখনও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।
গত তিন মাস আগে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ‘রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেন্টস’ শীর্ষ বৈঠকে বিশ্ব নেতারা নিউইয়র্ক ডিক্লারেশন ফর রিফউজি অ্যান্ড মাইগ্রেন্টস গ্রহণ করেন। বিশ্ব সম্প্রদায় অভিবাসন ইস্যুতে একটি গ্লোবাল কাঠামো প্রণয়নে ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। ২০১৮ সালে বিশ্ব নেতারা এ চুক্তিটি অনুমোদন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তবে এবারের সম্মেলনে এখনও সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি সদস্য দেশগুলো।
এ বিষয়ে সম্মেলনে অংশ নেওয়া একজন প্রতিনিধি বাংলানিউজকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ এ বিষয়ে এখনও স্পষ্ট কোনো মন্তব্য দেয়নি। এর অন্যতম কারণ, সম্প্রতি দেশটির শাসনভার বদলাচ্ছে। তাই এখনই তারা জোর দিয়ে কোনো কিছুতেই মতামত দিচ্ছে না। এমন অনেক দেশই রয়েছে, যারা অভিবাসীদের সুরক্ষা চাইলেও কঠিন আইন তৈরিতে সম্মত নয়।
তবে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আগামী ২০১৮ সালের আগে এ বিষয়ে অন্তত ডজনখানেক বৈঠক হবে। আশা করি সেসব বৈঠকের মাধ্যমে সদস্য দেশগুলো কাঠামোর বিষয়ে ঐক্যমতে আসতে পারবে।
রোববার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায়ও সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এমন আভাস দেন জিএফএমডি সভাপতি ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক।
জানা যায়, এই বৈশ্বিক কাঠামো গঠনের বিষয়ে তিন ধরনের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। সেসব প্রস্তাবের বিষয়ে দিনভর আলোচনা করেছে সদস্য দেশগুলো।
শহীদুল হক বলেন, আমরা তিন ধরনের কাঠামো হতে পারে বলে প্রস্তাব রেখেছি। কনভেশন, যা সব সদস্য দেশের ওপর বাধ্যতামূলক হবে। এছাড়া কমপ্যাক্টটি এমডিজি মডেলে হতে পারে- যেখানে মাইগ্রেশন লক্ষ্য ও সূচক থাকবে। এটা বাধ্যতামূলক নয়, তবে সবাই এই শর্ত পালন করবে; যেভাবে এসডিজি, এমডিজি’র ক্ষেত্রে করছে। এছাড়া এই দুটি (কনভেনশন ও এমডিজি মডেল) মিলিয়েও হতে পারে। যার কিছু কিছু নিয়ম পালন বাধ্যতামূলক থাকবে।
এই তিনটি ধরনের মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে ভালো জিনিসটেই চায় বলে জানান তিনি।
সম্মেলনে দিনভর চলা বৈঠকগুলোর সূত্রে জানা যায়, এসব বিষয়ে আলোচনা করতে সদস্যদেশগুলো এখনও একমত হতে পারেনি। অনেক দেশই এখনও অভিবাসীদের সুরক্ষায় কম্প্যাক্ট তৈরির বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট মতামত দিতে প্রস্তুত নয়।
দ্বিতীয় দিনের আলোচনায় অভিবাসন ও উন্নয়নের অর্থনীতি, সামাজিক প্রেক্ষাপট ও সুশাসন- এই তিনটি বিষয়ে অভিবাসন খরচ, মানুষে মানুষে যোগাযোগ, অভিবাসীদের গন্তব্য, অভিবাসীদের স্বার্থ রক্ষা, সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি ও দুর্যোগ চলাকালে কীভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা হবে, নিরাপদ অভিবাসনের জন্য করণীয় আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সোমবার (১২ ডিসেম্বর) সম্মেলনের শেষ দিনেও এসব বিষয়ে আলোচনার পরে সম্মেলন থেকে কিছু সুপারিশ আসবে। সেসব সুপারিশ সভাপতির পক্ষ থেকে জাতিসংঘ মহাসচিবের দফতরে পাঠানো হবে। আগামী বছর এসব বিষয়েই জার্মানিতে (১০ম জিএফএমডি সম্মেলনে) আলাপ হবে।
শহীদুল হক বলেন, অভিবাসীদের সুরক্ষায় কম্প্যাক্ট তৈরির বিষয়ে আমি আশাবাদি। দেখা যাক কী হয়। এটি দেওয়া-নেওয়ার মাধ্যমে হবে। তবে লম্বা আলাপ আলোচনার মাধ্যমে করতে হবে, ফলে এখনও অনেক লম্বা রাস্তা আমাদের সামনে।
অভিবাসন খরচ কমানো নিয়ে বিশেষভাবে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, অভিবাসন ও কানেকটিভিটি এবং অভিবাসনের সুশাসন বিষয়টি বাংলাদেশের দেওয়া প্রস্তাব। যা ইতোমধ্যে খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আলোচনা থেকে সুপারিশ আসবে। সেটি সভাপতির উপসংহার বক্তব্যে আনা হবে এবং পরে সেসব সুপারশি জাতিসংঘ সেক্রেটারি জেনারেলের কাছে পৌঁছানো হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অভিবাসন খরচের বিষয়ে শ্রমিক প্রেরণকারী ও গ্রহণকারী উভয় দেশের দায়িত্ব রয়েছে। এর সঙ্গে বিশ্বের ব্যবসায়ী কমিউনিটি জড়িত। আর এ সম্মেলনে প্রথমবার ব্যবসায়ীরা অংশ নিয়েছেন। অভিবাসন খরচ কমাতে তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে আলাপ হয়েছে।
সম্মেলনে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে গভীর আলোচনা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুও খুব একটা আসেনি। ছোটখাট গ্রুপে আলোচনা হলেও হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৬
জেপি/আইএ