ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

স্কুল পুইড়া ছাই, এহন পড়মু কনে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৬
স্কুল পুইড়া ছাই, এহন পড়মু কনে ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

‘দেখছোছ বই-খাতা সব পুড়ছে, খেলানাগুলান পুইড়া গেছে, স্কুলে বসার পাটি পুড়ছে, পুরা স্কুল পুইড়া ছাই হইয়া গেছে, এহন আমরা পড়মু কনে!’

ঢাকা: ‘দেখছোছ বই-খাতা সব পুড়ছে, খেলানাগুলান পুইড়া গেছে, স্কুলে বসার পাটি পুড়ছে, পুরা স্কুল পুইড়া ছাই হইয়া গেছে, এহন আমরা পড়মু কনে!’

 

রাজধানীর মহাখালীর সাততলা বস্তিতে লাগা আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ে গেছে একটি এনজিও’র দু’টি স্কুল। রোববার (১১ ডিসেম্বর) রাতে এই স্কুল থেকে বস্তিতে আগুনের সূত্রপাত হয়।

পুড়ে যাওয়া স্কুল দেখতে ভিড় জমিয়েছে বকুল, মায়া, আফসান, সুমন, শাওন রনিসহ আরও বেশ কয়েকজন স্কুল শিক্ষার্থী। শুরুর এ আক্ষেপ তাদেরই।

সবাই পুড়ে যাওয়া স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছিল। পুড়ে যাওয়া বই-খাতা, খেলনা হাতিয়ে দেখছিল তারা।

একজোট হয়ে সবাই বাংলানিউজকে জানায়, দরিদ্র হওয়ায় অবিভাবকরা তাদের ভালো স্কুলে পড়াতে পারেন না। তাই এই স্কুলই তাদের শেষ আশ্রয়। স্কুল পুড়ে যাওয়ায় তাদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে।

শিক্ষার্থীরা আরও জানায়, তারা আবারও এই স্কুলে পড়তে চায়। তাদের স্কুলটি যেনো আবার নতুন করে নির্মাণ করে দেওয়া হয়।

সোমবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে মহাখালীর সাততলা বস্তিতে গিয়ে দেখা যায়, বস্তির ভেতরে ওই দু’টি স্কুল ও আশেপাশের ঘরগুলো যেনো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। মাটিতে পড়ে রয়েছে আধাপোড়া বইয়ের অংশ। টিনগুলো আগুনের তাপে বাকা হয়ে গেছে। ঘরের আসবাবপত্র পুড়ে কয়লা।

পুরো এলাকাজুড়ে কেবল পোড়া গন্ধ। আগুন নেভানোর জন্য দেওয়া পানি জমে গেছে। আগুন না থাকলেও রয়ে গেছে পোড়া ছাই। অসহায় এই মানুষগুলো শেষ সম্বল হারিয়ে শুধু বিলাপ করছে।

স্কুল দু’টির জন্য ঘর ভাড়া দেন নাজমা বেগম। তিনি বাংলানিউজকে জানান, ঘর দু’টি তিনি স্কুলের জন্য ভাড়া দিয়েছিলেন। এখন তার শেষ সম্বল বলে কিছুই নেই। তিনি নিঃস্ব হয়ে গেছেন। ঘর দু’টি ভাড়া দিয়ে তিনি মাসে প্রায় চার হাজার টাকার মতো আয় করতেন।

তিনি বলেন, কী দেখতে আইছেন আপা। মাথা গোজার ঠাঁইটুকু নাই। আগুনে সব কাইরা নিছে।

স্কুল দু’টি পুড়ে যাওয়ায় এখানে পড়তে আসা শিশুরাও বিপাকে পড়েছেন বলে জানান নাজমা।

তিনি আরও জানান, দু’টি স্কুলে দুই শিফটে শিশুদের ক্লাস নেওয়া হতো। প্রতি শিফটে পাঠদান করা হতো প্রায় ৩০ জন শিশু শিক্ষার্থীকে। দু’টি স্কুলে মোট শিক্ষার্থী ছিলো প্রায় ২শ জনের বেশি।

এই স্কুলের দুই শিক্ষার্থী আফসানা ও মায়ার দাদি খোদেজা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা গরিব মানুষ। তিনবেলা খাওয়ার কষ্ট। সেখানে নাতনিদের লেখাপড়া করাবেন কী করে! এখন স্কুল পুড়ে গেছে। লেখাপড়া তো বন্ধ হইয়া যাইবো।

রোববার দিনগত রাত ১টার দিকে মহাখালীর সাততলা বস্তিতে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট রাত আড়াইটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে পুড়ে যায় বস্তির শতাধিক ঘর।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৬
আরএটি/এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।