সাততলা বস্তি ঘুরে: মোছা. সোনাবানু বেগম (৬৪)। গ্রামের বাড়ি ভোলা সদর উপজেলায়।
সরেজমিনে সোমবার (১২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর সাততলা বস্তিতে গেলে এভাবেই বাংলানিউজের প্রতিবেদককে কেঁদে কেঁদে বলেন সোনাবানু।
সোনাবানু বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিয়্যা কইরা স্বামী হামারে এইহানে নিয়া আইছিলো। তারপর থেইক্যা প্রায় ৪০টি বছর এইহানে বসবাস করছি। কহনো এমন নিঃস্ব হামি হই নাই। আগুন হামার বেবাক কাইড়া নিলো। ’
তিনি আরও বলেন, ‘বাবা কিচ্ছু নাই হামার। হুদু দেখলাম আগুন ডা দাওদাও করে কাছে চইল্যা আইলো। আমি গরিব মানুষ আমার চারডা পোলা আছে। তারমধ্যে একডা প্রতিবন্ধী। এই পোলাগোরে নিয়া কাজ কর্ম কইরা খাই। স্বামী বুড়া। আগে ভাঙ্গাড়ি ও আচার বিক্রি করত, তাও এহন আর বিক্রি করতে পারে না। হামার সব শেষ হইয়্যা গেল রে বাবা। ’
পরনের কাপড় ছাড়া কিছুই আনতে পারেননি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘চারদিক থেকে আগুন আগুন চিৎকার শুনলাম। ঘরের বাইরে আইস্যা দেহি চারদিকে আগুন আর আগুন। এক কাপড়ে ঘর থেইক্যা বাইর হইয়্যা আইতে হইছে। কিছু্ই আনতে পারেনি। ঘরের মধ্যে সারাজীবনের সম্বল হাজার পঞ্চেশ টেহা ছিলো তাও আনতে পারেনি। আমি এহন কি করব আমার সব শেষ হইয়্যা গেল। আমি নিঃস্ব হইয়্যা গেলাম,ফকির হইয়্যা গেলাম। ’
রোববার (১১ ডিসেম্বর) রাত আনুমানিক ১টায় লাগা আগুনে শুধু সোনাবানু বেগম নয়, তার মতো প্রায় ১৫০টি পরিবার ও ১৩০টি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
সহায় সম্বল ও সবকিছু হারিয়ে নিজের ঘরের সামনে বসে কাঁদছেন আমেনা বেগম(২৬)। তাদের গ্রামের বাড়ি পিরোজপুর জেলার হুলার হাটে।
তিনি বাংলানিউজকে জানান, ‘দীর্ঘ ২০টি বছর ধরে এই সাততলা বস্তিতে বসবাস করছেন। স্বামী আনোয়ার ইসলাম পেশায় একজন কারখানার শ্রমিক। ছোট ছোট ২ ছেলে ও ১ মেয়েকে নিয়ে এখানেই ছিলেন। কিন্তু ২৯ মিনিটের আগুন তার সহায় সম্বল বলতে যা ছিলো সবই কেঁড়ে নিয়েছে। এখন পথের ভিখারী হয়ে খোলা আকাশের নিচেই রাত্রিযাপন করছেন।
আগুনের হাত থেকে কিছু রক্ষা করতে পেরেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জীবন নিয়ে কোনোমতে ঘর থেকে বের হয়ে এসেছি। এখানে একটি ব্রাকের স্কুল ছিলো। সেই স্কুলের উত্তরপাশ থেকেই আগুন লেগেছে। আর তার দক্ষিণ পাশে ছিলো আমাদের ঘর। আমার যেসব শেষ হয়ে গেল। কিছুদিন আগে কিস্তিতে একটি ফ্রিজ কিনেছি। যার অর্ধেক দামও এখনো পরিশোধ হয়নি। কিন্তু সেটিও আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ’
বাংলাদেশ সময়: ০০২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৬
এসজে/পিসি