মানিকগঞ্জ: ১৩ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মানিকগঞ্জের মাটি ছেড়ে পালিয়ে যায়।
দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে মানিকগঞ্জে শহীদ হন ৫৮ জন মুক্তিযোদ্ধা। হত্যা করা হয় প্রায় ৭ হাজার নিরীহ মানুষকে। আহত হন ৪০ মুক্তিযোদ্ধা।
২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় ক্রাক-ডাউনের খবর পাওয়ার পরপরই মানিকগঞ্জের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বৈঠক করে তৎকালীন অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন আবদুল হালিম চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি বিপ্লবী পরিষদ গঠন করে। ওই রাতেই পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মানিকগঞ্জের ট্রেজারিতে রক্ষিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ বের করে ছাত্র ও যুবকদের মাঝে বিতরণ করা হয়।
পরদিন থেকে ক্যাপ্টেন হালিম চৌধুরীর আলুর গুদামের পেছনে শুরু হয় অস্ত্র প্রশিক্ষণ। এপ্রিল মাসের ২য় সপ্তাহে হেলিকপ্টারে বিপুল সংখ্যক পাকিস্তানি সেনা মানিকগঞ্জ শহরে ঢুকে পড়ে।
মানিকগঞ্জের বিভিন্ন অঞ্চলে মুক্তি বাহিনীর সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর বেশ কয়েকটি যুদ্ধ হয়। এরমধ্যে গোলাইডাঙ্গা, সূতালড়ি, আজিমনগর বায়রা, নিরালী সাটুরিয়া, নারচি, বালিরটেক, গাজিন্দা, মানরার যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য।
তবে, গোলাইডাঙ্গার যুদ্ধ ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের সব চাইতে সফল যুদ্ধ। গোলাইডাঙ্গার খাল পাড়ে এই যুদ্ধে ৮৩ জন পাকিস্তানি সৈন্য ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এর পরদিনই পাকিস্তানি আরও সৈন্য বৃদ্ধি করে গোলাইডাঙ্গা গ্রামে হামলা চালিয়ে কয়েক’শ ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়। গুলি করে হত্যা করে ৮ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে।
মানিকগঞ্জের পিটিআইতে পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধা সন্দেহে অত্যাচার করে হত্যা করা হতো সাধারণ নিরীহ বাঙালিদের। মানিকগঞ্জ তরা ফেরিঘাটে বস্তাবন্দি করে এদের মরদেহ ভাসিয়ে দেওয়া হতো। পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মম অত্যাচারের আরেকটি দৃষ্টান্ত তেরশ্রী ট্রাজেডি।
ঘিওর উপজেলার তেরশ্রী গ্রামে ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর তারা হামলা চালিয়ে তেরশ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আতিয়ার রহমান এবং শিক্ষানুরাগী তেরশ্রী গ্রামের জমিদার সিদ্ধেশ্বর রায় প্রসাদ চৌধুরী সহ হত্যা করে ৪৩ গ্রামবাসীকে।
ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই মুক্তি বাহিনীর আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা মানিকগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে পিছিয়ে যেতে শুরু করে। ১৩ ডিসেম্বরের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের পাল্টা হামলায় মানিকগঞ্জ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় হানাদাররা।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৬
পিসি/