ঢাকা: রাজধানীর ফার্মগেট খামারবাড়ি সংলগ্ন আনোয়ারা উদ্যান বা ফার্মগেট পার্ক। শীতের পড়ন্ত বিকেল।
মধ্যবয়সী কয়েকজন মানুষের শারিরীক ব্যায়াম। সঙ্গে পার্ক জুড়ে বাদাম, চানাচুর বিক্রেতাসহ নানা পেশার মানুষের কোলাহল।
তবে এসব ছাপিয়ে ফার্মগেট পার্কে রয়েছে একটি উপদ্রব। তা হলো- প্রকাশ্যে গাঁজা বিক্রি ও গাঁজাখোরদের আড্ডা। আর এ গাঁজার যোগান দিচ্ছেন পার্কে ঠাঁই নেওয়া কিছু ভাসমান মানুষ। ফলে পার্কে ঢুকতেই যে কারো নাকে ফ্রেশ বাতাসের পরিবর্তে আসবে গাঁজার উৎকট গন্ধ। আর এ উৎকট গন্ধ পুরো পার্কের বাতাসকে বিষিয়ে তুলেছে। ফলে, পার্কের ভেতর ও পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় অনেকেই গালিগালাজসহ বিভিন্ন ধরনের কথা বলে তাদের বিরক্তি প্রকাশ করছেন।
সোমবার (১২ ডিসেম্বর) ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডের পুরনো এ পার্কে সরেজমিনে ঘুরে প্রকাশ্যে গাঁজা বিক্রি ও সেবনের বিভিন্ন চিত্র দেখা যায়।
ত্রিশোর্ধ্ব নারী লাবনী ২০ বছরের এক যুবকের সঙ্গে গাঁজার দাম নিয়ে দর-কষাকষি করছিলেন। সাদা কাগজে মোড়ানো গাঁজার পুড়িয়ার মূল্য ৩০ থেকে ৪০ টাকা। যুবকটি ২০ টাকার নোট ধরিয়ে দিতে গেলে, ‘হইবো না, আরও লাগবো’- বললে বাধ্য হয়ে যুবকটি আরও ১০ টাকা বাড়িয়ে দিয়ে গাঁজার পুড়িয়া নিয়ে গেলেন।
দেখা গেছে, পার্কটিতে দিন-দুপুরে চলছে গাঁজার কেনা-বেচা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সামনেই অবাধে চলছে মাদক বিক্রি ও সেবন। মাঠের কোণায় ফুঁস ফুঁস করে গাঁজা টানার দৃশ্যে সাধারণ মানুষকে অস্বস্তিতে পড়তে দেখা যায়।
মাদক বিক্রেতা ও সেবনকারীদের কারণে পার্কটিরও বেহালদশা।
নিয়মিত পার্কে হাটতে আসা ইন্দিরা রোডের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব আল রহমান ক্ষোভ ও বিরক্তি প্রকাশ করে বাংলানিউজকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ডায়বেটিসে ভুগছি, ডাক্তার হাঁটতে বলেছেন। বয়স্ক মানুষ কই যাবো? বাসার কাছে এমন মাঠ, তাই এখানেই আসি। কিন্তু গাঁজার ধোঁয়া ও গন্ধ টেকা যায় না। পুরো পার্কে নেশাখোরদের আড্ডা। পুলিশ জেনেও কিছু বলে না। কয়েকদিন আগে চোখের সামনে একজনের ব্যাগ নিয়ে পালিয়েছে এক নেশাখোর’।
‘রাজধানীতে খোলা জায়গার বড় অভাব। যেগুলো আছে, তার পরিবেশও ভালো না’।
পার্কে বসবাসকারী ভাসমান মানুষের কাছে গাঁজার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা একে অন্যকে দেখিয়ে দেন।
লাবনীর কাছে গাঁজা বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘আমার কাছে এসব থাকে না’। আরেকজনের দিকে আঙ্গুল তুলে দ্রুত চলে যান তিনি।
পার্কটির এমন বেহালদশা নিয়ে জানতে চাইলে তেজগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, ‘এখানে কিছু বখাটে ছেলেপুলে নেশা করে জানি। কিন্তু গাঁজা যে বিক্রি হয়, এটা জানি না। বিক্রি হলেও এদের ধরা মুশকিল। এরপরও আমরা কয়েকদিনের মধ্যে অভিযান চালাবো’।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৬
এমসি/ওএইচ/এএসআর