ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

প্রধানমন্ত্রীর এই সফরেই তিস্তা চুক্তি চায় সরকার

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৬
প্রধানমন্ত্রীর এই সফরেই তিস্তা চুক্তি চায় সরকার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগামী নয়াদিল্লি সফরেই ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানি সমস্যার সমাধান চায় সরকার। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের সময়ই তিস্তা চুক্তি সম্পাদনের জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। 

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগামী নয়াদিল্লি সফরেই ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানি সমস্যার সমাধান চায় সরকার। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের সময়ই তিস্তা চুক্তি সম্পাদনের জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

 

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকার সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, এ ব্যাপারে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বিষয়টি নিয়ে ভারতের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে তৎপরতা চলছে। আগামী ফেব্রুয়ারির দিকে শেখ হাসিনার ভারত যাওয়ার আগেই তিস্তা চুক্তির বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। সেভাবেই ভারতের সঙ্গে আলোচনা চালানো হচ্ছে।

প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে তিস্তা নদীর পনি বণ্ঠন চুক্তি সম্পাদনের বিষয়টি দীর্ঘ দিন ধরে ঝুলে রয়েছে। ভারতের দিক থেকে তিস্তার ব্যাপারে বার বার আশ্বস্ত করা হলেও এখন পর্যন্ত সেটি ঝুলে রয়েছে। ভারতের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিই এই চুক্তি বিলম্বিত হওয়ার একমাত্র কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।  

ভারতের দুই প্রধানমন্ত্রীর পর পর দুই দফায় ঢাকা সফরের সময় তিস্তা চুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হলেও, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বিরোধিতা করায় সম্ভব হয়নি। বিষয়টিকে আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বিধান সভার নির্বাচনের আগে মমতা ব্যানার্জি তিস্তা চুক্তি করতে দিতে চাননি। তবে এ বিষয়ে মমতা তার উপর আস্থা রাখতে বলেছিলেন।

গত মে মাসে এই নির্বাচনের পর তিস্তার ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হয়। এই প্রেক্ষাপটে চলতি ডিসেম্বরের ১৭-১৮ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরের কথা ছিলো। কিন্তু এই সফরে তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি। পরে প্রধানমন্ত্রীর সফর পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। পেছানোর ক্ষেত্রে কিছু কারণের মধ্যে তিস্তা চুক্তির নিশ্চয়তা না পাওয়ার বিষয়টিও রয়েছে বলে ওই সূত্রগুলো জানায়।

সূত্রগুলো আরও জানায়, তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ইতিবাচক অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সমর্থন থাকতে হবে। সম্প্রতি ভারতে ৫শ ও এক হাজার টাকার নোট বাতিলের পর মোদি সরকারের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মমতা সরকারের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা অব্যাহত রেখেছেন মমতা। এর পর পশ্চিমবঙ্গে সেনাবাহিনীর মহড়া নিয়েও মোদি সরকারের উপর মমতা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এই প্রেক্ষাপটে তিস্তা চুক্তির বিষয়টি নিয়ে ভারতের ধীরগতি রয়েছে বলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকার সশ্লিষ্টরা মনে করছেন।  

গত ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংহের ঢাকা সফরের সময় তিস্তা চুক্তির সবকিছু নির্ধারিত ছিলো। কিন্তু মমতার বাধার কারণে চুক্তি হয়নি। পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থের কথা বলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এরপর গত বছর জুনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময়ও এই চুক্তির ব্যাপারে প্রস্তুতি ছিলো। কিন্তু মমতার আপত্তির কারণে তা হয়নি।  

যদিও ২০১৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মমতা ঢাকায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে, তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে নমনীয় মনোভাব প্রকাশ করেন এবং তার উপর আস্থা রাখতে বলেন।  

চলতি বছর পশ্চিমবঙ্গের বিধান সভা নির্বাচনে বিপুল বিজয় নিয়ে পুনরায় ক্ষমতায় আসেন মমতা ব্যানার্জি।  

গত ১৯ মে নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল পেয়েই এক সংবাদ সম্মেলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, এই জয়ে দায়বদ্ধতা বেড়ে গেলো, দায়িত্ব বেড়ে গেলো। আমরা চাই, সব প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক দৃঢ় করতে, এর মাধ্যমে আমরা আমাদের নিজস্ব সম্পর্ক আরও বাড়িয়ে তুলতে পারি।  

আওয়ামী লীগ ও সরকার সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো আরও জানায়, বিগত কয়েক বছর ধরে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও উন্নত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের মেয়াদ আর দুই বছর রয়েছে। সরকার এর আগেই তিস্তার পানি সমস্যার সমাধান করতে চায়। আর এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগামী দিল্লি সফরই উপযুক্ত সময় বলে সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন। আগামী ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রীর সফরের সম্ভাবনা রয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৬ 
এসকে/এসএনএস  
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।