ঢাকা: মামা, মামা- ডাক দিলেন চালক, রেললাইনের উপর দিয়ে ইউ-টার্ন নেওয়ার জন্য লেগুনার স্টিয়ারিং ঘুরালেন, চালকের সহকারী সাধলেন ১০ টাকার নোট। লাঠি দেখিয়ে তাড়ালেন ট্রাফিক কনস্টেবল আতিউর।
মহাখালী রেল ক্রসিংয়ের উপর যত্রতত্র গাড়ি ইউ-টার্ন নেওয়া ঠেকাতে ট্রাফিক পুলিশের রশি থেরাপি কাজ দিলেও লেগুনাগুলোই আইন ভাঙছে, আইন ভাঙতে পুলিশকেও সাধছে টাকা!
রশি থেরাপি কাজ দিলে রেললাইনের উপর ঝুঁকিপূর্ণভাবে যাত্রী উঠা-নামায় যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে জানাচ্ছিলেন ট্রাফিক পুলিশ এবং রেলওয়ের কর্মচারীরা।
আবার ট্রেন চলাচলের জন্য ‘গেট বেরিয়ার’ নামানো থাকলে পথচারী এবং মোটর সাইকেল চালকরা বেরিয়ার তুলে ঢুকে পড়ে। এতেও দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়।
মহাখালী রেল ক্রসিংয়ে সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) সকাল নয়টা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা অবস্থান করে দেখা গেছে পথচারী, লেগুনা এবং মোটর সাইকেল চালকদের ঝুঁকিপূর্ণ চলাচল।
৯টা ৫৪ মিনিটে গাবতলী থেকে মহাখালী রুটে যাতায়াতকারী একটি লেগুনা রেল ক্রসিংয়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক কনস্টেবল আতিউর রহমানকে মামা ডেকে তার সহকারী ১০ টাকার নোট সাধলেও তিনি যেতে দেননি।
আতিউর রহমান বলেন, এখানে পুলিশকে টাকা দিলে কাজ হয় না। লেগুনাগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ ইউ-টার্ন করা ঠেকাতে কয়েখ মাস আগে রশি দিয়ে বেধে দেওয়া হয়েছে বলে জানান আতিউর।
আরও কিছু সময় দূর থেকে দাঁড়িয়ে থেকেও লেগুনা চালকদের পুলিশকে টাকা বাবা মামা ডাক দিয়ে প্রভাবিত করার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার চিত্রই দেখা যায়।
আতিউর রহমান বললেন, আগে লাইনের উপর দিয়ে ইউ-টার্ন করায় সিগন্যাল চালু হলেও সরতে চাইতো না লেগুনাগুলো। এজন্য রশি বেঁধে একেবারে লেগুনা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অনেক সময় নিষেধ করার পরও জোর করে যেতে চায়।
তবে মহাখালী ফ্লাইওভার ব্রিজের নিচ দিয়ে আমতলী হয়ে ঘুরে আসা লেগুনাগুলোই আবার রেললাইনের উপর যত্রতত্র যাত্রী উঠাচ্ছিল। সেখানে ট্রাফিক পুলিশ এবং রেলের কর্মচারীরা ঠেকানোর চেষ্টা করলেও যেন পেরে উঠছিলেন না তারা। অথচ রেললাইন থেকে নেমে একটু সামনেই স্ট্যান্ড। একটির পিছনে আর একটি ঠেকিয়ে যাত্রী তুলছিল লেগুনাগুলো। ফলে পিছনের যানবহনগুলোও আটকে পড়ে সৃষ্টি হয় যানজট।
মহাখালী-গাবতলী রুটের একটি লেগুনার (ঢাকা মেট্রো-ছ ১১-৩৫৯০) চালক আল আমিন জানালেন, অভ্যাস হয়ে গেছে। এখানে দাঁড়ালে যাত্রী বেশি পাই।
রেল ক্রসিংয়ের গেট কিপার নুরুল আমিন বলেন, এক নম্বর সমস্যা ওই লেগুনাগুলো। তারা লাইনের উপর দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলে। এতে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
প্রতি শিফটে রেলওয়ের পাঁচজন এবং ট্রাফিক পুলিশের আরও তিনজন সদস্য দায়িত্ব পালন করলেও লেগুনাগুলোকেই ঠেকানো বড় দায় তাদের কাছে।
রেল ক্রসিংয়ের ল্যান্ডম্যান রিফাত ইসলাম জানালেন, ক্রসিংয়ের ঝুঁকির কথা বলে পাঁচ জায়গায় সাইনবোর্ড, আমরা পাঁচজন, বাঁশি, পতাকা- এতোকিছুর পরেও পথচারী, মোটর সাইকেল এবং লেগুনোর অত্যাচার।
দশটা তিন মিনিটে দু’টি ট্রেন ক্রসিংয়ের আগে ‘গেট বেরিয়ার’ তুলে বেশ কয়েকটি মোটর সাইকেল পারাপার হতেও দেখা যায়।
দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্য আতিউর বললেন, সবার আগে প্রয়োজন সচেতনতা। সচেতনতা না বাড়লে ঝুঁকি ঠেকানো সম্ভব না।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৬
এমআইএইচ/এমজেএফ