ঢাকা: ‘প্রতিবন্ধী তো কী হইছে! আমিতো মানুষ। কোনো সহায় সম্বল নাই।
শাহজাহানের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর। বাবা আব্দুল লতিফ সরদার ছিলো ভূমিহীন কৃষক। তার ছয় সন্তান। শাহজাহানের বয়স যখন তিন বছর তখন টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হন তিনি। টাকার অভাবে তার বাবা যথার্থ চিকিৎসা করতে না পারায় দুই পা’ই চিরতরে পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে যায় শাহজাহানের। তারপর থেকে হাঁটা চলা বন্ধ হয়ে যায় তার।
শাহজাহান বাংলানিউজকে বলেন, নিজে কাজ করে আয় করতে চাই, ভিক্ষা করি না। তবে পুঁজি কম তাই কাজ কইরা আগাইতে পারি না। একটু যদি মূলধন পাইতাম তাহলে হয়তো কিছু একটা করতে পারতাম। কিন্তু আমি প্রতিবন্ধী আমারে সহায়তা করবে কে আপা।
কষ্ট করে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করার পর শাহজাহানের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। তারপরও থেমে থাকেনি কঠোর মনোবল সম্পন্ন মানুষটি। শাহজাহানের বয়স যখন ২০ তখন এক আত্মীয়ের চায়ের দোকানে কাজ করতে ২০০৬ সালে ঢাকা আসেন তিনি। শুরু হয় তার নতুন জীবনযুদ্ধ। দোকানে কাজ করার সময় রাতে থাকার জন্য কোনো ঘর ছিলো না তার।
তাই রাতটা কেটে যেতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছের নিচে। প্রতিদিন খাবারের জন্য চা দোকানের মালিক তাকে মাত্র ১০০ টাকা দিতেন। ধীরে ধীরে কাজ করে পাঁচ বছরে ২০ হাজার টাকা জমা করে শাহজাহান। ১২ হাজার টাকা দিয়ে তৈরি করে পঙ্গুদের জন্য তৈরি বিশেষ ধরনে সাইকেল। আর বাকি টাকা দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নাগরদোলার পাশে দেন একটি চায়ের দোকান। সরকারি জায়গায় দোকান দেওয়া অবৈধ বলে তা ভেঙে দেয় প্রশাসন।
জীবনযুদ্ধে বারবার হোঁচট খাওয়ার পরও যেন হেরে যাননি শাহজাহান। অবশ দুই পা নিয়ে ফের যেনো যুদ্ধ শুরু। কখনও চকলেট বিক্রি কখনও চা ফেরি করা। তারপরও হাত পাতেননি কারো কাছে।
বর্তমানে টিএসসি, ছবির হাটে চা ফেরি করে বিক্রি করেন শাহজাহান। পুরান ঢাকার এক বস্তিতে থাকেন তিনি। প্রতিদিন এক ফ্লাক্স চা ৫০ টাকা দিয়ে কিনে বিক্রি করেন ১৫০ টাকা। দিনে আয় হয় ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা। এর মধ্যে মাসে দুই হাজার টাকা ঘর ভাড়া ও তার চলার বিশেষ সাইকেলটি রাখার জন্য গ্যারেজ ভাড়া দিতে হয় এক হাজার টাকা। আর খাওয়ার খরচটা কোনো রকমে চালিয়ে নেন শাহজাহান।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৬
ইউএম/আরআইএস/আরআই