ঢাকা: প্রিভিলেজ পার্সন (কূটনৈতিক সমমর্যাদার) সুবিধার অপব্যবহার করায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) এক কর্মকর্তাকে গাড়ি ও পাসবুক জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
২২ ডিসেম্বরের মধ্যে জমা দিতে সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে।
কিশোর কুমার সিংহ নামে এ কর্মকর্তা আইএলও’র বাংলাদেশ কার্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন। আইএলও কার্যালয়ে সিনিয়র স্কিল ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিস্ট হিসেবে এ কর্মকর্তা দু’বছর আগে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশ কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন।
এর আগে ৪ ডিসেম্বর একই অভিযোগে ইউএনডিপির সাবেক আবাসিক প্রতিনিধি মি. স্টিফান প্রিজনারকে তলব করা হয়। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, কিশোর কুমার সিংহ ২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ইউএনডিপি বাংলাদেশ কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। প্রিভিলেজ পার্সন হিসেবে তিনি কাস্টমস পাসবুক ( বই নম্বর-১০৫/১১) ব্যবহার ও সুবিধা ভোগ করে আসছেন। ২০১১ সালে ইউএনডিপির সাবেক এক কর্মকর্তার থেকে ২০০৭ মডেলের ১৩০০ সিসির একটি সুজুকি-মারুতি (রেজিস্ট্রেশন নম্বর এজেএস০৪৬) গাড়ি ক্রয় করেন।
গাড়িটি ২০০৯ সালে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা হয়। কিশোর কুমার সিংহ ২০১৪ সালে ইউএনডিপি বাংলাদেশ কার্যালয় থেকে আইএলও বাংলাদেশ কার্যালয়ে চাকরি নেন।
শুল্ক আইন ও এসআরও-২৩৭ অনুযায়ী, কোনো প্রিভিলেজ পার্সনের পদবি ও কর্মস্থল পরিবর্তন হলে কাস্টমস পাসবুক ও শুল্কমুক্ত সুবিধার গাড়ি এনবিআর-এ জমা দিতে হয়। কিন্তু এ কর্মকর্তা গত দুই বছরে পাসবুক ও গাড়ি জমা দেননি। রেজিস্ট্রেশন পরিবর্তনের নিয়ম থাকলেও তাও করেননি। নতুন কর্মস্থলে নতুন কাস্টমস পাসবুকও ব্যবহার করছেন।
সূত্র জানায়, যেহেতু এ কর্মকর্তা গত দুইবছর কাস্টমস পাসবুক জমা দেননি সেহেতু এ দুই বছরে এর অপব্যবহার এবং নতুন বইয়ের অপব্যবহার করছেন কিনা তা খতিয়ে দেখছে শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
তদন্তের স্বার্থে আগামী ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে কাস্টমস পাসবুক ও গাড়ি জমা দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। সোমবার এ সংক্রান্ত একটি চিঠি আএলও বাংলাদেশ কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়।
গাড়ির সন্ধান পাওয়ার পরও প্রিভিলেজ পার্সন হিসেবে সম্মান দেখিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠি অনুযায়ী গাড়ি ও পাসবুক জমা না দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, কূটনৈতিক সুবিধার অপব্যবহার করায় শুল্ক গোয়েন্দা ২৮ নভেম্বর উত্তরা থেকে ইউএনডিপির সাবেক আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফান প্রিজনারের ব্যবহৃত মিতশুবিশি পাজারো জব্দ করা হয়।
স্টিফান প্রিজনার ২০০৮ সালের ২ নভেম্বর থেকে ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আইন অমান্য করে গাড়িটি তিনি ইউএনডিপির সাবেক স্টাফ আশিকুল হাসিব তারিকের কাছে বিক্রি করে দেশ ছাড়েন। ব্যাখ্যা জানতে আগামী ২৯ ডিসেম্বর এ কর্মকর্তাকে তলব করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর।
এনবিআরের সাম্প্রতিক হিসাব অনুযায়ী, গত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশে উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করা প্রায় ২৫টি সংস্থার ৩৯৫ জন বিদেশি নাগরিক শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানি করেন।
এরমধ্যে বেশিরভাগ কর্মকর্তা ইউএনডিপির। এছাড়া বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা ডিএফআইডি, ইউএসএআইডি, ইউনিসেফ। ফেরত না নিয়ে এসব গাড়ি বিক্রি করে গেছেন। এতে সরকার বিপুল রাজস্ব হারিয়েছে। এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে এনবিআর।
কাস্টমস পাসবুক জমা না দিয়ে কোন কূটনৈতিক দেশত্যাগ করতে পারবেন না উল্লেখ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেন, বেশ কিছু ধরে কিছু সংস্থার কূটনৈতিক এর অপব্যবহার করছেন। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বলেন, কূটনৈতিক সুবিধার অপব্যবহার করায় সাম্প্রতিক সময়ে এনবিআরের নির্দেশে এ বিষয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। অনিয়ম পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রিভিলেস পার্সন (কূটনৈতিক পদমর্যাদার) কাস্টমস পাসবুক ব্যবহার করে শুল্কমুক্ত সুবিধায় একটি গাড়ি, ১০০ ডলার পর্যন্ত মদ, সিগারেট-খাবারসহ বেশ কিছু পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৬
আরইউ/এমজেএফ