ঢাকা: পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নে রামনাবাদ চ্যানেলের পশ্চিম তীরে বাংলাদেশের তৃতীয় বাণিজ্যিক সমুদ্রবন্দর হিসেবে গত ১৩ আগস্ট আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে পায়রা। এর আগে ২০১৩ সালের ১৮ নভেম্বর ১৬ একর জমিতে পায়রা সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ শুরু হয়।
বন্দরটি নির্মাণের মূল কাজটি চীন করলেও অবকাঠামোগত অনেক কাজ এখনো বাকি। এরই মধ্যে ঢাকা থেকে পায়রা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের কাজ পেয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ডিপি-রেল।
বাকি থাকা কাজ পেতে এখনো আগ্রহ দেখাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জার্মানি ও ভারতসহ বহু দেশ। বন্দর নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সরবরাহের আগ্রহ দেখিয়েছে বাংলাদেশের আরেক বন্ধুপ্রতীম দেশ রাশিয়া। তাদের আগ্রহে প্রাথমিক সাড়াও দিয়েছে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র এর সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে প্রথমে কক্সবাজারের সোনাদিয়াকে বেছে নিয়েছিল সরকার। কিন্তু ভারত ও চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করতে পরে তা পটুয়াখালীর পায়রায় নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে শেষ পর্যন্ত বন্দর নির্মাণের মূল কাজটি চীনকে দেওয়া হয়।
সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ অন্যতম। শুরুতে কক্সবাজারের সোনাদিয়ায় সমুদ্রবন্দরটি নির্মাণ করার কথা যখন চলছিল, তখন নির্মাণের ব্যাপারে ভারত ও চীনের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, জার্মানিসহ বেশ কিছু দেশ আগ্রহ দেখায়।
পরে পায়রায় সমুদ্রবন্দরটি নির্মাণের মূল কাজটি চীনকে দেওয়া হলেও বন্দরের বিভিন্ন অংশের নির্মাণ কাজে অংশ নিতে ওই সব দেশ এখনো একই রকম আগ্রহ দেখাচ্ছে।
এ ব্যাপারে দেশগুলো যেসব প্রস্তাব দিয়েছে, সেগুলোও বিবেচনা করছে সরকার।
নির্মাণ সরঞ্জাম সরবরাহে রাশিয়ার আগ্রহ প্রসঙ্গে নৌ-সচিব অশোক মাধব রায় বাংলানিউজকে বলেন, ‘রাশিয়া পায়রা বন্দরের বিভিন্ন নির্মাণ-সরঞ্জাম সরবরাহে আগ্রহ দেখিয়েছে। এর ভিত্তিতে বন্দরের বিভিন্ন অংশের নির্মাণে কী কী সরঞ্জাম প্রয়োজন হবে, তার একটি তালিকা প্রস্তুত করে আমরা রাশিয়াকে পাঠিয়েছি। সে অনুসারে তাদের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবও আহবান করেছি’।
তবে ‘রাশিয়ার পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব এখনো পাওয়া যায়নি’ বলেও জানান তিনি।
পায়রা বন্দরের বাকি কাজ পেতে রাশিয়া ছাড়াও আরো যেসব দেশ আগ্রহ দেখাচ্ছে, সে প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ‘মূল কাজ চীন পেলেও সরকারের অগ্রাধিকারমূলক উন্নয়ন প্রকল্প হিসেবে পায়রা বন্দর নির্মাণের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে যুক্ত থাকতে অনেক দেশই আগ্রহ দেখিয়েছে এবং এখনো দেখাচ্ছে। তবে শুধু কাজ বিবেচনা করে নয়, ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা ও বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্কে ভারসাম্যের দিকটা মাথায় রেখেই সরকারকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে’।
জানা গেছে, এ বন্দরে কনটেইনার, বাল্ক, সাধারণ কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের অবকাঠামোর পাশাপাশি এলএনজি, পেট্রোলিয়াম ও যাত্রী টার্মিনাল রাখা হবে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক অঞ্চল, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মত্স্য প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, তৈরি পোশাক, ওষুধ শিল্প, সিমেন্ট, তেল শোধনাগার ও জাহাজ নির্মাণসহ আরো অনেক শিল্প কারখানা গড়ে তোলা হবে এখানে।
এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের পর গ্যাসের মাধ্যমে সার কারখানা চালুর পরিকল্পনাও রয়েছে সরকারের।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৬
জেপি/জেএম/এএসআর