আশুলিয়া (সাভার): আশুলিয়ার তৈরি পোশাক শিল্পে অরাজক পরিস্থিতি তৈরিতে সহায়তা আর শ্রমিকদের উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে বেসরকারি টিভি চ্যানেল একুশে টেলিভিশনের সাভার প্রতিনিধি নাজমুল হুদাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) রাতে আশুলিয়ার বাইপাইল থেকে গ্রেফতার করা হয় তাকে।
নাজমুল হুদার বাড়ি থেকে জব্দ করা হয় তার মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ও ব্যক্তিগত গাড়িটি। আশুলিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) নাজমুল হাসান ফিরোজ বাংলানিউজকে জানান, শুক্রবার রাতেই আশুলিয়া থানায় পুলিশ বাদী হয়ে নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা করেছে। মামলায় তার বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন ও ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলে মিথ্যা তথ্য প্রচারের অভিযোগ আনা হয়।
তিনি আরো জানান, গত ১৩ ডিসেম্বর নাজমুল হুদা মালয়েশিয়ায় যান। ফিরে আসেন ১৮ ডিসেম্বব। সেখান থেকে ষড়যন্ত্র করে বহুবার গার্মেন্টস শ্রমিকনেতা রফিকুল ইসলাম সুজন ও শামীমের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন নাজমুল। কি বিষয়ে এতো কথা বলেছেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ঢাকার পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান বাংলানিউজকে জানান, ‘সাংবাদিকতার মতো মহান পেশায় থেকে একজন কি করে দেশের রফতানি আয়ের প্রধান খাত গার্মেন্টস সেক্টরে নাশকতা সৃষ্টির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন, তা দেখে আমরা স্তম্ভিত’।
তিনি বলেন, ‘নাজমুল হুদা গার্মেন্টস সেক্টরকে অশান্ত করতে এমন সব তৎপরতা চালিয়েছেন। যা অনেকের কাছেই রীতিমতো অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয়’।
‘আমরা ইটিভি কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে তার জীবন বৃত্তান্ত আর শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ জানতে চাইবো’।
তিনি জানান, ২০১৩ সালে জামগড়া এলাকায় একটি তৈরি পোশাক কারখানার সামনে রাস্তা পারাপারের সময় গাড়ি চাপায় আহত হন এক নারী পোশাক শ্রমিক। সেবার নাজমুল হুদা উদ্দেশ্যমূলকভাবে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই নারী তৈরি পোশাক শ্রমিক নিহত হয়েছেন বলে মিথ্যে তথ্য পরিবেশন করলে গোটা শিল্পাঞ্চলে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। বেশ কয়েকটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ছুটি ঘোষণা করা হয় কারখানায়।
এছাড়াও রানা প্লাজার পর বিভিন্ন পোশাক কারখানা ঝুঁকিপূর্ণ। শিল্প মালিকদের তা প্রচারের ভয়-ভীতি দেখিয়ে হাতিয়ে নেন মোটা অংকের অর্থ। পাশাপাশি বিদেশি কিছু এনজিও ও গণমাধ্যমে গাইড হিসেবে দেশের গার্মেন্টস সেক্টরের স্পর্শকাতর ও নাজুক তথ্য তুলে দেন তাদের হাতে। একাধিক তৈরি পোশাক মালিক এ ধরনের অভিযোগ করে সে সময় আশুলিয়া থানায় জিডি করেছিলেন নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে’। পুলিশ সুপার আরো জানান, রানা প্লাজা ধসে পড়ার পর ঝুঁকিপূর্ণ ভবন- এমন ভয় দেখিয়ে সাভারের রাজ্জাক প্লাজা নামের বহুতল ভবনে থাকা গার্মেন্টস ও ভবন মালিকদের কাছে অর্থ দাবি করেন নাজমুল। না পেয়ে মিথ্যা রিপোর্ট করলে প্রশাসন ভবনটি নিরাপত্তার কারণে বন্ধ করে দেন।
পরে বুয়েটের পরীক্ষায় ঝুঁকিমুক্ত প্রমাণিত হলে ব্যবসায়ীরা তাকে গণপিটুনি দেন। তবে সে যাত্রায় পুলিশের চেষ্টায় রক্ষা পান তিনি।
এছাড়াও বিআলআরআইতে কম মূল্যে কোরবানির গরু কেনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয়রা তাকে গণপিটুনি দেন।
পরে মামলার ভয় দেখিয়ে গ্রামবাসীর কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেন তিনি।
অন্যদিকে রাজধানীর কাফরুল থানায় এক ব্যবসায়ীর ভক্সি গাড়ি চুরির মামলার চার্জশিটভূক্ত আসামি ছাড়াও নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে সাভারের গেন্ডা এলাকার পুলিশের এসআই সাত্তারের স্ত্রীর করা শ্লীলতাহানীর মামলা, ২০১৩ সালে আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে হওয়া মামলা ও জিডির তথ্য তুলে ধরেন পুলিশ সুপার।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৬
এএসআর