ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে চলছে তার ইন্টার্নশিপ। পড়াশোনাও করেছেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে।
সেবাই তার কাছে পরম ধর্ম। মানবসেবার মহান ব্রত নিয়েই একজন চিকিৎসক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলছেন সিয়াব খাজাওয়াল।
ভারতের কাশ্মীরের এই তরুণী তার ব্রত পালনে বেছে নিয়েছেন বাংলাদেশকে। এখানে শিক্ষার মান যেমন ভালো, তেমনি খরচও কম। বাংলাদেশকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ বলেও মনে করেন তিনি।
হাতে-কলমে শেখার পাশাপাশি রোগ ও রোগীর বৈচিত্র্যও থাকায় মমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের মাধ্যমেই চিকিৎসক হিসেবে নিজেকে তৈরি করছেন সিয়াব খাজাওয়াল।
খেটে খাওয়া থেকে শুরু করে সব শ্রেণীর রোগীদের সঠিক সেবা নিশ্চিত করতে ২৮ বছর বয়সী এ তরুণী দায়িত্ব সচেতনতার পরিচয় দিচ্ছেন।
সহৃদয়তার কারণে রোগীরাও তাকে পছন্দ করেন। তার সম্পর্কে সবাই জানেন, তিনি বাংলাদেশি নন, কাশ্মীরের মেয়ে। এ কারণে রোগীরা তাকে সম্মান আর আস্থার সঙ্গে সম্বোধন করেন ‘ফরেনার ডাক্তার আপা। ’ তাদের কাছে বেশ জনপ্রিয়ও সিয়াব। বর্তমানে ইন্টার্ন চিকিৎসক হিসেবে সিয়াব ছাড়াও ইরান ও কাশ্মীরের আরো দুই শিক্ষার্থী মমেক হাসপাতালে রয়েছেন।
সিয়াব বাংলানিউজকে জানান, ২০১১ সালে স্কলারশিপ নিয়ে ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন তিনি। এরপর নিজেই পছন্দ করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে চলে আসেন।
দীর্ঘ সময় থাকায় ময়মনসিংহকেও ভালোবেসে ফেলেছেন তিনি। ময়মনসিংহের মাটি, জল ও আবহাওয়াকে একান্তই আপন করে নিয়েছেন। ‘ময়মনসিংহের মানুষ অনেক বেশি আন্তরিক’- বলেন সিয়াব।
পরিবারের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকলেও বাবা-মায়ের জন্য মন কাঁদে। বছরে অন্তত একবার ছুটে যান কাশ্মীরে। দিন বিশেক অবস্থান করে ফিরে আসেন এখানে। ময়মনসিংহকেই এখন তিনি ভাবেন ‘সেকেন্ড হোম’ হিসেবে।
সিয়াব বলেন, ‘শৈশব থেকেই স্বপ্ন দেখতাম, চিকিৎসক হয়ে মানবসেবা করবো। প্রকৌশলী বাবা নাজির আহম্মেদ ও মা নাসরিনও উৎসাহ দিতেন। কঠোর শ্রম আর একাগ্রতায় ধীরে ধীরে চিকিৎসক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলছি। মানবসেবায় নিয়োজিত থেকে আমি মানসিকভাবেও সন্তুষ্ট’।
প্রতিদিন দুই শিফটে মমেক হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সিয়াব খাজাওয়াল। বছর খানেক আগে সহপাঠীদের কাছ থেকে বাংলা শিখে নিয়েছেন।
এখন শুদ্ধ বাংলাতেই তিনি কথা বলেন রোগীদের সঙ্গে। ফলে রোগীদের সমস্যাও ভালোভাবে বুঝতে পারেন বলে জানান সিয়াব।
হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন বেশ কয়েকজন রোগী জানান, ‘ফরেনার ডাক্তার আপা’র কাছ থেকে নিরন্তর সহযোগিতা মেলে। রোগীর সঙ্গে অনেকক্ষণ সমস্যা নিয়ে তিনি কথা বলেন। তার মাঝে আছে সারল্য আর মানবপ্রীতি’।
হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের রেজিস্ট্রার বিশ্বনাথ সাহা বাংলানিউজকে বলেন, কাজের প্রতি ডেডিকেটেড সিয়াব খাজাওয়াল। রোগীদের আন্তরিকতা নিয়েই শতভাগ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেন এ তরুণ ইন্টার্ন চিকিৎসক।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৬
এমএএএম/এএটি/এএসআর