ঢাকা: নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ এবং সেবা কার্যক্রম জোরদারের লক্ষ্যে সরকারের ১৪টি মন্ত্রণালয় একজোট হয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেন নারী ও শিশুর বিরুদ্ধে যেকোনো নির্যাতন তাৎক্ষণিকভাবে রুখে দেওয়া সম্ভব হয়।
মন্ত্রণালয়গুলো হলো- স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, স্বরাষ্ট্র, তথ্য, সমাজকল্যাণ, আইন, বিচার ও সংসদ, ধর্ম, শিক্ষা, যুব ও ক্রীড়া, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়, ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি, শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ১৪টি মন্ত্রণালয় জোটগতভাবে দেশব্যাপী বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে। যেসব জেলা উপজেলায় নারী ও শিশু নির্যাতন বেশি হচ্ছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ- সেসব জেলা দ্রুততম সময়ে চিহ্নিত করা হবে।
কক্সবাজার, দিনাজপুর, বগুড়া, পাবনা, কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, যশোর ও নোয়াখালীসহ বিভাগীয় ও জেলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে ১৭টি ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার স্থাপন করা হবে।
প্রাথমিকভাবে ৪৭টি জেলা সদর হাসপাতাল ও ২০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে ৬৭টি ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেল দ্রুততম সময়ে গঠন করা হবে। ঢাকার ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরি, আটটি বিভাগীয় ডিএনএ স্ক্রিনিং ল্যাবরেটরি, বিভাগ ও জেলা মেডিকেল হাসপাতালগুলোতে থাকবে ৯টি আঞ্চলিক ট্রমা কাউন্সিলিং সেন্টারও।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিদ্যমান ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরি, সাতটি বিভাগীয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিদ্যমান রিজিওনাল ডিএনএ স্ক্রিনিং ল্যাবরেটরির কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে। এর পাশাপাশি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিজিওনাল ডিএনএ স্ক্রিনিং ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হবে।
ঢাকার জাতীয় ট্রমা কাউন্সিলিং সেন্টার, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ ন্যাশনাল হেল্পলাইন সেন্টার, ন্যাশনাল সেন্টার অন জেন্ডার বেইজড ভায়োলেন্স এবং মন্ত্রণালয়গুলোর সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোও একযোগে কাজ করবে।
১৪টি মন্ত্রণালয় আরও সুনির্দিষ্ট কিছু উদ্দেশ্যও বাস্তবায়ন করবে। এর আওতায় মন্ত্রণালয়গুলো নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে সমন্বিত গুণগত মানসম্পন্ন দক্ষ ও টেকসই সেবা দেবে। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি ও তা প্রতিরোধে নেওয়া কাজগুলোও সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। বুকলেট, লিফলেট, পোস্টারসহ জনসচেতনতামূলক প্রকাশনা তৈরি এবং সরকারি-বেসরকারিভাবে বিলি করা হবে।
নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে ‘নলেজ হাব’ তৈরি করা হবে। মোবাইল অ্যাপস ‘জয়’, হেল্পলাইন ১০৯২১ নম্বরে বাল্যবিবাহ, নারী নির্যাতন ও শিশু পাচার রোধ বিষয়ক প্রচারণা চালানোর উদ্যোগ নেবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় ও সংস্থার দক্ষতা বৃদ্ধিসহ সমন্বিত ন্যাশনাল সেন্টার অন জেন্ডার বেইজড ভায়োলেন্সের মাধ্যমেও নানা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
১৪টি মন্ত্রণালয় গঠিত সেলের মাধ্যমে নারী ও শিশু নির্যাতন রোধকল্পে সুযোগ সুবিধা ও অ্যাকশন কর্ম পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যা তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়ন করবে মন্ত্রণালয়গুলো।
বহুমূখী এসব সমন্বিত কৌশলের মাধ্যমে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ও প্রতিকারের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট আইন ও পদ্ধতি তৈরিতে সহায়তা দেবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়গুলো সমন্বিত এসব কাজের নাম দিয়েছে ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রাম’। ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন নাগাদ কর্মসূচিটি এগিয়ে নিতে ১১৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। এর মধ্যে ডেনমার্ক সরকার অনুদান দেবে ২৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
সমস্ত কাজের সমন্বয় করবে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ সমন্বিত কাজের সফলতার বিষয়ে দুই মাস পর পর প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির সভাপতিত্বে সভাও অনুষ্ঠিত হবে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মিজানুর রহমান বাংলানউজকে বলেন, ‘নারী ও শিশুর পরিধি পরিমাপ করা কঠিন। এটি একটি ব্যাপক বিষয়। যেমন- শিশুর শিক্ষা নিশ্চিত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আর নারী নির্যাতন প্রতিরোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এগিয়ে আসে। সুতরাং, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একার পক্ষে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ সম্ভব নয়। তাই মন্ত্রণালয়গুলোকে নিয়ে সমন্বিতভাবে সেল গঠন করবো। এ সেল ঐক্যবদ্ধভাবে নারী ও শিশু নির্যাতন রোধে কাজ করবে’।
‘সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করলে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ সম্ভব। তাই আমরা এক হয়ে কাজ করবো’।
তিনি বলেন, ‘২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি’র মোট লক্ষ্যমাত্রা ১৭টি। এর মধ্যে আছে জেন্ডার সমতা অর্জন এবং সব নারী ও তরুণীর ক্ষমতায়ন। এ লক্ষ্য অর্জন করতে মন্ত্রণালয়গুলোকে এক হয়ে কাজ করার প্রয়োজন ছিলো। সে লক্ষ্যেই আমরা সমন্বিত উদ্যোগ নিয়েছি’।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৬
এমআইএস/এএসআর