ঢাকা: সৌদি আরবের আল রাবওয়া এলাকায় সেনাবাহিনীর একটি ক্যাম্পে গত ৩১ সেপ্টেম্বর কর্মরত অবস্থায় হঠাৎ মারা যান বাংলাদেশি শ্রমিক আবদুল বাতেন। কিন্তু ইয়েমেন ও সৌদি আরবের সীমান্তবর্তী যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত ওই এলাকাটি থেকে গত পাঁচ মাসও ফেরত আনা যায়নি তার মরদেহ।
এখন শোকস্তব্ধ স্বজনরা শেষবারের মত প্রিয়জনের মরদেহটি দেখার জন্য অপেক্ষায় আছেন। যদিও ইয়েমেনের সংঘাত পরিস্থিতির কারণেই এতো দীর্ঘ সময় লাগছে বলে জানাচ্ছে সৌদিতে বাংলাদেশের দূতাবাস ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়। বাতেনের মরদেহ ফেরাতে তার নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের গাফিলতিকেও দোষ দেওয়া হচ্ছে।
বাতেন লক্ষীপুরের সদর উপজেলার নন্দীগ্রামের বাসিন্দা। তিনি দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে সৌদি আরবে কাজ করছিলেন।
তার স্ত্রী ফেরদৌস বেগম বাংলানিউজকে বলেন, “সংঘাতপূর্ণ এলাকায় থাকলেও বাতেন তার কোনো বিপদের আশঙ্কা নেই বলে পরিবারকে আশ্বস্ত করেছিলেন। প্রতিদিন ২-৩ বার ফোনে কথা বলতেন। হঠাৎ একদিন ফোনে যোগাযোগ বন্ধ। নানাভাবে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন স্বজনরা। সংঘাতপূর্ণ এলাকা, সেজন্য নেটওয়ার্ক নেই বলে অনেকেই সান্ত্বনা দিতে থাকেন। কিন্তু এর প্রায় এক মাস ছয় দিন পর সৌদি আর্মি এক বাংলাদেশিকে দিয়ে আমার শাশুড়ির ফোনে জানান, আমার স্বামী আর নেই। ”
দুই কিশোরের মা ফেরদৌস আক্ষেপ করে বলেন, “আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে এ খবরে। এক মাস পরে মৃত্যুর খবর পেলাম, আর ছয় মাসেও লাশ পেলাম না। দেখার মতো আর কি কিছু থাকবে?”
চার মাস পরে দেশে ফেরার কথা ছিল বাতেনের। এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “দীর্ঘ দিন বিদেশ করলেও তেমন কোনো সঞ্চয় নেই। বসবাসের ঘরও বাঁধা হয়নি। এবার দেশে ফিরে পাকা ঘর তোলার কথা দিয়েছিলেন তিনি। দুই সন্তানকে মানুষ করবো কিভাবে এখন। ”
তার বিশেষ কোনো রোগ ছিল না দাবি করে ফেরদৌস প্রশ্ন রাখেন, “সুস্থ মানুষ, কী কারণে তার মৃত্যু হয়েছে আমরা বুঝতে পারছি না?”
এমন পরিস্থিতিতে যেন আর কোনো পরিবারকে পড়তে না হয়, সে ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানান তিনি।
তার মৃত্যুর বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে লেখা এক চিঠিতে সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস জানায়, স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন আবদুল বাতেন। তার নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান রিয়াদের মেসার্স ফাহাজ আদুর রহমান আল রশিদ গ্রুপ কোম্পানি।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, আল রাবওয়া এলাকাটি সৌদি আরব ও ইয়েমেনের সীমান্তবর্তী যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত এবং সেখানে প্রতিনিয়ত সামরিক ও বেসামরিক লোকজন হতাহত হচ্ছেন। এ কারণে বাতেনের কোম্পানি ও থানা কর্তৃপক্ষ তার মৃত্যু সংক্রান্ত তথ্যাদি যথাসময়ে কনস্যুলেটকে সরবরাহ করতে পারেনি।
তবে সংবাদ পাওয়ার পর এ সংক্রান্ত তথ্যাদি সংগ্রহ করে মরদেহ বাংলাদেশে পাঠাতে কনস্যুলেটের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট থানায় যোগাযোগ করা হয়।
সেসময় আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়নি অভিযোগ করে দূতাবাস জানায়, এ অবস্থার মধ্যে গত ১১ ডিসেম্বর জেদ্দা কনস্যুলেটের একজন প্রতিনিধি ও দূতাবাসের আইন সহকারীকে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের সদরদপ্তরে পাঠানো হয়। এই প্রচেষ্টায় থানা প্রধানের সহায়তায় বাতেনের মৃত্যু সংক্রান্ত সব তথ্যাদি সংগ্রহ করে তার মরদেহ বাংলাদেশে পাঠানোর ছাড়পত্র সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
তারপরও বাতেনের মরদেহ না আসার বিষয়ে জেদ্দার বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কাউন্সেলর মো. আলতাফ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, দ্রুত সময়ের মধ্যে মরদেহ বাংলাদেশ পাঠাতে চাপ সৃষ্টির জন্য বাতেনের নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে। কনস্যুলেটের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত একটি মৌখিক প্রতিবাদও (নোট ভারবাল) সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মরদেহ আনার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কনস্যুলেট, বাংলাদেশ দূতাবাস ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কাজ করছে। আশা করা হচ্ছে শিগগির বাতেনের মরদেহ দেশে আসবে। পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার বিষয়েও দূতাবাসের পক্ষ থেকে কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৬
জেপি/এইচএ/