ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সাত বছর পর খুলছে শীতলক্ষ্যায় তৃতীয় সেতুর জট

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৬
সাত বছর পর খুলছে শীতলক্ষ্যায় তৃতীয় সেতুর জট

বৈদেশিক অর্থায়ন না পাওয়া, প্রকল্প পরিচালক বদলি, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা ও রেলওয়ের জমি না পাওয়ার কারণে ৭ বছরে নারায়ণগঞ্জবাসীর বহুল প্রত্যাশিত শীতলক্ষ্যায় তৃতীয় সেতু প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ২১ শতাংশ।

ঢাকা: বৈদেশিক অর্থায়ন না পাওয়া, প্রকল্প পরিচালক বদলি, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা ও রেলওয়ের জমি না পাওয়ার কারণে ৭ বছরে নারায়ণগঞ্জবাসীর বহুল প্রত্যাশিত শীতলক্ষ্যায় তৃতীয় সেতু প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ২১ শতাংশ।
 
নারায়ণগঞ্জবাসীর স্বপ্নের এ সেতুর জট খুলেছে।

পাওয়া গেছে সৌদি উন্নয়ন তহবিলের (এসএফডি) ৩৩২ কোটি টাকা ঋণ। এখন ২০২০ সালের আগেই সেতুটি নির্মিত হবে বলে বাংলানিউজকে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
 
শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম প্রান্তে সৈয়দপুর ও পূর্ব প্রান্তে মদনগঞ্জ সংযোগ করে চারলেন বিশিষ্ট সেতু নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। সৌদি আরবের আর্থিক অনুদানে নির্মিত সেতুটি ১ হাজার ২৯০ মিটার দীর্ঘ। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর।
 
সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ) সূত্র জানায়, সৌদি উন্নয়ন তহবিল (এসএফডি) সেতুটি নির্মাণে ৩৩২ কোটি টাকা দেবে। অথচ সংস্থাটি অর্থছাড়ে নানা গড়িমসি করছে। ফলে মূল সেতু নির্মাণে বার বার কালক্ষেপণ হচ্ছে।  

তবে ২০২০ সালের আগেই শীতলক্ষ্যা নদীর উপরে তৃতীয় সেতু নির্মাণ করা হবে বলে জানায় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। যেহেতু এসএফডি ঋণ পাওয়া গেছে এখন আর সেতুটি নির্মাণে কোনো বাধা নেই বলে জানা গেছে।  

প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ ইকবাল বাংলানিউজকে বলেন, এসএফডি’র ফান্ড না পাওয়ার কারণেই প্রকল্পের কাজ বিলম্ব হয়েছে। রেলওয়ের জমি পেতেও বিলম্ব হয়েছিল। এখন সব কিছুর অবসান হয়েছে। আমরা আশা করছি ২০২০ সালের মধেই সেতুটি নির্মাণ করতে পারবো। আমাদের সামনে আর কোনো বাধা নেই। রেলওয়ে জমি সংশ্লিষ্ট ডিসি অফিসকে বুঝিয়ে দিয়েছে। ’

অন্যদিকে সওজ সূত্র জানায়, সাত বছরে মোট ছয় বার প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তন করা হয়েছে। ২০১১ সালে সাইদুল হককে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর পর পর্যায়ক্রমে ছয়বার প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তন করা হয়। পরিমল বিকাশ সূত্র ধরকে ২০১৩ এবং ২০১৪ সালে দুই বার পরিবর্তন করা হয়। এছাড়াও এম ফিরোজ ইকবাল, দলির উদ্দিন ও মোহাম্মদ ইকবাল প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।
 
বর্তমানে মোহাম্মদ ইকবাল প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বে আছেন। ফলে ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত একই পকল্পে ছয়জন প্রকল্প পরিচালক দায়িত্ব পালন করেন। বারবার প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তনের কারণে প্রকল্পের অগ্রগতি কম হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ছয় জন প্রকল্প পরিচালক বিভিন্ন মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
যাদের কর্মকাল সর্বোচ্চ ১ বছর ৮ মাস ১০ দিন এবং সর্বনিম্ন ৩ মাস ছয় দিন। এভাবে ঘন ঘন প্রকল্প পরিচালক বদলি কাম্য নয় বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা।  

প্রকল্পের অগ্রগতির বদলে মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির মধ্যেই সাত বছর অতিক্রম করেছে।  
 
সূত্রমতে, নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি নভেম্বর ২০১০ সালে অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পের মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩৭৭ কোটি ৬২ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। তৃতীয় সেতুটি ২০১৩ সালে নির্মাণ করার কথা ছিল। অথচ সাত বছরে প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ২১ শতাংশ।  

এর পরে সেতুটি নির্মাণের সময় বৃদ্ধি করা হয় ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত। একই সঙ্গে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৫৩৯ কোটি ৬৭ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। তৃতীয়ধাপে ব্যয় ব্যতিরেকে আবারও ছয় বছর সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে।
 
সেতুটি নির্মাণে ৩২৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুসহ অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণের কথা ছিলো। এ কাজের দরপত্র প্রক্রিয়াকরণ করে ঠিকাদার নির্বাচনের জন্য উন্নয়ন সহযোগী সৌদি উন্নয়ন তহবিলের (এসএফডি) সম্মতি নেওয়া হয় ২০১৬ সালে। অথচ এখন নতুন করে এসএফডি’র সঙ্গে সম্পন্ন ঋণচুক্তির মেয়াদ ২০১৮ সাল পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।  
 
সড়ক বিভাগ ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, অথচ এর বিপরীতে প্রকৃত অর্জন মাত্র ২১ দশমিক ৫০ শতাংশ। অর্জিত ২১ দশমিক ৫০ শতাংশ অগ্রগতির মধ্যে সেতু নির্মাণের প্রাথমিক কার্যাদি থাকলেও মূল কোনো কার্যক্রম নেই। অথচ ৩৭৭ কোটি ৬২ লাখ টাকার প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে ৪৪৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
 
প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করতেই প্রায় ৩ বছর সময় লেগেছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য এলএম ম্যাপ এবং প্রস্তাব তৈরি, ইউটিলিটি অপসারণ ও নক্সা তৈরির জন্য পরামর্শক বিলম্বে নিয়োগ দেয়া হয়। ফলে সরকারি ভূমি অধিগ্রহণেও বিলম্ব হয়। বাংলাদেশ রেলওয়েকে অর্থ পরিশোধ করা হলেও তারা জমি হস্তান্তর করে বিলম্বে।  

প্রকল্পের আওতায় মোট ৩২ দশমিক ৭৭ একর ভূমি অধিগ্রহণের সংস্থান রয়েছে। ইতোমধেই ব্যক্তিমালিকানাধীন ১৯ দশমিক ৬০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ডিসি অফিসের মাধ্যমে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কাছে জমির দলিল হস্তান্তর করা হয়েছে। অথচ এক কোটি টাকা পরিশোধ করলেই ১১ একর জমি তিন বছর পরে হস্তান্তর করে রেলওয়ে মন্ত্রণালয়।  
 
সেতুটি নির্মাণ না হওয়ার কারণে এলাকার জনগণের যাতায়াত, উৎপাদিত কৃষি ও অন্যান্য পণ্যসামগ্রী পরিবহনেও অসুবিধা হচ্ছে। কংক্রিটের সেতুটি নির্মিত হলে যানজটপূর্ণ ঢাকা মহানগরীকে বাইপাস করে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-মাওয়া-খুলনা জাতীয় মহাসড়ক ব্যবহার করা যাবে। ফলে যানজট এড়িয়ে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাতায়াত সহজ হবে।  
 
শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) নব নির্বাচিত মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী । শীতলক্ষ্যা নদীতে একটি তৃতীয় সেতু নির্মাণের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী দৃষ্টি আকর্ষণ করেন আইভি। আইভিকে আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সারা বাংলাদেশের উন্নয়নে কাজ করছি। উন্নয়নের ব্যাপারে কিছু দাবি করা লাগবে না। ’

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৬
এমআইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।