ঢাকা: জেলা পরিষদ নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। রাত পোহালেই ৬১টি জেলায় প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হবে।
বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত চলবে এ ভোটগ্রহণ। এতে ভোট দেবেন স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা।
ভোট সম্পর্কে ইসি সচিব মুহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, ভোটগ্রহণের সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জেলা পরিষদ নির্বাচন করার জন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। আশা করি, নির্বাচনটি অবাধ-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। পর্যাপ্ত সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হচ্ছে।
জেলার অন্তর্ভুক্ত সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান এবং ইউপির চেয়ারম্যান ও সদস্যরা প্রত্যক্ষ ভোটে জেলা পরিষদ প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন।
এদিকে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২৬ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে নির্বাচনী এলাকায় সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনা বিধির ৭৪(১) বিধি অনুযায়ী, ভোটের ৩২ ঘণ্টা আগে থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে উক্ত নির্বাচনী এলাকায় কোনো জনসভা আহ্বান, অনুষ্ঠান বা এতে বিজয়ী কিংবা পরাজিত প্রার্থী কেউ অংশ নিতে পারবেন না।
এছাড়া ২৫ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে মোটরসাইকেলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৭ ডিম্বেবর) মধ্যরাত থেকে বেবি ট্যাক্সি, অটোরিকশা, ট্যাক্সি ক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিক আপ, কার, বাস, ট্রাক ও টেম্পো চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
ইসি সূত্রে জানা যায়, জেলা পরিষদ নির্বাচনে তিন স্তরের নিরাপত্তায় প্রায় ২০ হাজারের বেশি র্ফোস দায়িত্ব পালন করবে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্র পাহারায় থাকবে ২০ জন পুলিশ, আর্মস পুলিশ ব্যাটালিয়ন, ব্যাটালিয়ন আনসার ও আনসার ভিডিপির সদস্য। এর মধ্যে একজন পুলিশ (কনস্টেবল) অস্ত্রসহ, আনসার একজন অস্ত্রসহ, আনসার একজন অস্ত্রসহ এবং আনসার ১৫ জন লাঠিসহ। এর মধ্যে পুরুষ আটজন ও নারী সাতজন।
কেন্দ্রের বাইরে স্ট্রাইকিং র্ফোস থাকবে বিজিবি ও ৠাব। প্রতিটি উপজেলায় বিজিবির ২টি মোবাইল টিম (প্লাটুন ২টি, প্রতি প্লাটুনে সদস্য সংখ্যা ৩০ জন) এবং ১টি স্ট্রাইকিং র্ফোস (এক প্লাটুন)।
প্যাট্রোলিং ও স্ট্রাইকিংয়ের দায়িত্বে থাকবে ৠাব। এছাড়া ৯শ ১৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ৯১ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জনসংযোগ শাখার পরিচালক এমএম আসাদুজ্জামান আরজু বাংলানিউজকে জানান, জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান, সাধারণ ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর এই তিন পদে মোট তিন হাজার ৯শ ৩৮ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ইতোমধ্যে বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২১ জন চেয়ারম্যান পদে নির্বাচত হয়েছেন। এতে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ৩৯ জেলায় ১শ ৪৬ জন।
সাধারন কাউন্সিলর পদে ১শ ৬৬ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬৯ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন দুই হাজার ৯শ ৮৬জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৮০৬ জন প্রার্থী।
জেলা পরিষদের ৬১ জেলায় ৬৩ হাজার ১শ ৪৩ জন ভোটার। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪৮ হাজার ৩শ ৪৩ জন এবং নারী ভোটার ১৪ হাজার ৮শ জন। ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৮শ ৩৬টি। আর কক্ষ থাকছে এক হাজার ৮শ ৩০টি। প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় ওয়ার্ডভিত্তিক ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
এ নির্বাচনে আটটি পর্যবেক্ষক সংস্থার তিন হাজার ২শ ২৫ জন পর্যবেক্ষককে অনুমোদন দিয়েছে ইসি।
১৯৮৮ সালে এইচ এম এরশাদের সরকার প্রণীত স্থানীয় সরকার (জেলা পরিষদ) আইনে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে সরকার কর্তৃক নিয়োগ দেওয়ার বিধান ছিলো। পরবর্তীতে আইনটি অকার্যকর হয়ে পড়ে। ২০০০ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচিত জেলা পরিষদ গঠনের জন্য নতুন আইন করে।
এরপর ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর সরকার ৬১ জেলায় আওয়ামী লীগ জেলা পর্যায়ের নেতাদের প্রশাসক নিয়োগ দেয়। অনির্বাচিত এই প্রশাসকদের মেয়াদ শেষেই ডিসেম্বরে নির্বাচন হচ্ছে।
২০ নভেম্বর তিন পার্বত্য জেলা বাদে প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৪১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৬
এমসি/এসএনএস