সোমবার (২ জানুয়ারি) দিনগত রাত আড়াইটার দিকে সূত্রপাতের সাত ঘণ্টা পর মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) সকাল পৌনে ১০টায়ও মার্কেটের ভেতর থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলি বের হচ্ছে। থেকে থেকে আগুনের হল্কা লেলিহান জিহ্বার মতো বেরিয়ে আসছে বাইরে।
আগুনের সর্বগ্রাসী বিস্তার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ফায়ার সার্ভিসের বেশ কিছু ইউনিট কাজ করছে। তবে ইউনিটসংখ্যা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদারদের মধ্যে পৃথক বক্তব্য রয়েছে।
সকাল পৌনে ৯টার দিকে ডিএনসিসির মেয়র আনিসুল হক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এখানে ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি গাড়ি ও ডিএনসিসির বেশ কয়েকটি গাড়ি কাজ করছে।
এ বক্তব্যের পর মেয়রের মুখের ওপরই ডিএনসিসি মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি রিজভী বলেন, আপনি মিথ্যে বলছেন। ফায়ার সার্ভিসের এতোগুলো গাড়ি এখানে নেই। এটা অসত্য তথ্য। তাৎক্ষণিকভাবে মেয়র বলেন, ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে আমাকে এই তথ্যই জানানো হয়েছে।
তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা মেয়র আনিসুল হকের কথাই সঠিক বলে মনে করছেন। তারা বলছেন, দোকান মালিকরা মার্কেটের সামনে ভিড় জমানোয় চারপাশে পানির উৎসগুলোতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িগুলোর অবস্থান হয়তো টের পাচ্ছেন না। তাছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিকরা উত্তেজনাবশত সবকিছুই নেতিবাচক অবস্থান থেকে দেখছেন।
সকাল ৯টায় ডিএনসিসি মার্কেটের ধসে পড়া অংশে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। সেখানে পানি ছোড়া হলে আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু কুণ্ডলি পাকানো ধোঁয়া ভেতরে ভয়াবহ আগুনের অস্তিত্ব জানান দেয়।
পৌনে ১০টার দিকে ডিএনসিসি মার্কেটের কাঁচা বাজারের পেছন দিকে ফের আগুনের হল্কা দেখা যায়। এ সময় উৎসুক জনতাকে সরিয়ে দিয়ে সেখানে পানি ছোড়েন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। পানি ছোড়ার পর ভেতরে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ শোনা যায়।
দোকান মালিক ও কর্মচারীরা বলছেন, তেল, কসমেটিকস, রং, কেমিক্যালসহ বিভিন্ন রকম দাহ্য পদার্থ মজুদ ছিল দোকানগুলোতে। সেগুলোর কৌটা হয়তো বিস্ফোরিত হচ্ছে।
এর আগে, সোমবার রাত আড়াইটায় মার্কেটটিতে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানান, মার্কেটের পূর্ব দিক থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। এরপর পর্যায়ক্রমে পুরো মার্কেটে ছড়িয়ে পড়ে।
আগুনের তাপে মার্কেটের অবকাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ায় গভীর রাতে একাংশ ধসেও পড়ে। এ অংশে কাঁচামালের প্রায় আড়াইশ’ দোকান ছিল।
মধ্যরাতে আকস্মিক আগুনের ঘটনায় ব্যবসায়ীরা দিশেহারা হয়ে পড়েন। মার্কেটের কর্মচারীদের কাছ থেকে খবর পেয়ে ভিড় জমাতে থাকেন তারা। এ সময় তাদের আর্তনাদে এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। যে যার মতো আগুনে বেঁচে যাওয়া সরঞ্জাম বাঁচানোর চেষ্টা করেন।
মার্কেটের কোনো কোনো ব্যবসায়ী অগ্নিকাণ্ডকে ইচ্ছাকৃত বলে অভিযোগ করেন। তবে এনডিসিসি মার্কেটের সভাপতি রিজভী বলেন, আগুনের ঘটনা আকস্মিক, এর সঙ্গে কারো কোনো হাত নেই।
মার্কেটে এক হাজারের মতো দোকান রয়েছে। যার সবগুলোই এখন ঝুঁকির মুখে। তবে মেয়র আনিসুল হক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, মার্কেটের পশ্চিমাংশে যে ধোঁয়ার কুণ্ডলি দেখছেন, তাতে শংকিত হওয়ার কিছু নেই। পূর্ব দিকের ধোঁয়া পশ্চিমে যাচ্ছে। পশ্চিমাংশ এখনো অক্ষত আছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১৭
এজেড/এইচএ/
আরও পড়ুন
** ডিএনসিসি মার্কেটজুড়ে আগুন, বাহিরে ব্যবসায়ীদের আর্তনাদ আহাজারি
** ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ওপর চড়াও ব্যবসায়ীরা
** বৈদ্যুতিক ত্রুটি থেকে ডিএনসিসি মার্কেটে আগুন, ধারণা মেয়রের
** আগুনের কথা শুনে ভেবেছিলাম দুঃস্বপ্ন দেখছি!
** এখনো পুড়ছে ডিনসিসি মার্কেট, ধসে পড়েছে একাংশ
** গুলশান ডিসিসি মার্কেটে ভয়াবহ আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১৭ ইউনিট