সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য যেন দক্ষতার পরিচয় দিতে পারে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে গড়ে ওঠা এ সেনাবাহিনী যে কোনো অশুভ শক্তিকে দৃঢ়ভাবে প্রতিহত করতে আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রস্তুত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শনিবার (০৭ জানুয়ারি) বিকেলে নোয়াখালীর স্বর্ণদ্বীপ (জাহাইজ্জার চর) এলাকায় সেনাবাহিনীর ম্যানুভার অনুশীলন মহড়া পরিদর্শন শেষে প্রীতিভোজ পরবর্তী এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি এসময় বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ একটি দক্ষ, সুশৃঙ্খল ও সুসংগঠিত বাহিনী হিসেবে সারাবিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে গড়ে ওঠা স্বর্ণদ্বীপে ১১ পদাতিক ডিভিশনের রণকৌশল অনুশীলনের মহড়া দেখে আমি অভিভূত।
একই সঙ্গে স্বর্ণদ্বীপ প্রশিক্ষণ এলাকার সুপরিকল্পিত ব্যবহার দেখে আনন্দিত। আমি নিশ্চিত এ প্রশিক্ষণ এলাকা সেনাবাহিনীর দক্ষতা বৃদ্ধিতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আজকের এ মহড়া সেনাবাহিনীর দক্ষতা ও পেশাদারিত্বেরই প্রতিফলন।
তিনি বলেন, আজকের মহড়ায় সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে নতুন সংযোজিত এপিসি, ট্যাংক, মেইনটেন্যান্স, সেল্ফ প্রোপেল্ড, রাডার ভেহিকেল ট্যাংক বিধ্বংসী মিসাইলের ব্যবহার, আর্টিলারি গান ও অন্যান্য কোর এর পেশাদারিত্ব ও সেনাবাহিনীর সার্বিক সক্ষমতায় আমার আস্থা রয়েছে। গোলন্দাজ, সাজোয়া ও পদাতিক বাহিনীর নতুন যুদ্ধ সরঞ্জাম প্রদর্শনী নিঃসন্দেহে আমাদের দেশ রক্ষায় নিয়োজিত সেনাবাহিনীর প্রতি আমাদের আস্থাকে আরো সুদৃঢ় করেছে।
সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সমন্বিত অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এ মহড়া সেনাবাহিনীর প্রতি আমার আস্থা আরো সুদৃঢ় করেছে। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী দেশের সম্পদ, দেশের মানুষের ভরসা ও বিশ্বাসের প্রতীক। তাই পেশাদারিত্বের গুণগত মান ও উন্নয়ন অর্জনের জন্য সেনাবাহিনীকে পেশাগত ভাবে দক্ষ, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে মঙ্গলময় জীবনের অধিকারী হতে হবে, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
পবিত্র সংবিধান এবং দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সেনাবাহিনীকে ঐক্যবদ্ধ থেকে আভ্যন্তরীণ কিংবা বাহ্যিক যে কোনো হুমকি মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে হবে। ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের প্রতি আস্থা, পারস্পরিক বিশ্বাস, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ, কর্তব্য পরায়ণতা, দায়িত্ববোধ এবং সর্বোপরি শৃঙ্খলা বজায় রেখে কর্তব্য পালনে একনিষ্ঠভাবে কাজ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
এসময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, নোয়াখালীর স্থানীয় সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী, এমপি মোর্শেদ আলম, এমপি এইচ এম ইব্রাহীম, এমপি মামুনুর রশিদ কিরণ, এমপি আয়েশা ফেরদৌস, সেনাবাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবু বেলাল মো. শফিউল হক, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যক্ষ খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, নোয়াখালীর দক্ষিণে মেঘনা নদী থেকে প্রায় ২০ বছর আগে জেগে ওঠে এই চর। নোয়াখালী জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্যানুযায়ী প্রায় লক্ষাধিক একর জায়গায় জেগে ওঠা এই চরের বেশিরভাগ জায়গা হচ্ছে হাতিয়া উপজেলার। এছাড়া এ চরে জেলার সূবর্নচর ও চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপের কিছু অংশ রয়েছে।
মূলত তিনটি উপজেলার ভূমি নিয়ে এ চরের উৎপত্তি। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে তিন মিটার উচ্চতায় অবস্থতি ৩৬০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ চরটি ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তর করা হয়। এরপর এর নাম করা স্বর্ণদ্বীপ। স্বর্ণদ্বীপের উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ত্রিমুখী পরিকল্পনা করেছে। পরিকল্পনাগুলো হলো-প্রশিক্ষণের জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বনায়ন ও স্থানীয় জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়ন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০১৭
এসআই