ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বদলে গেছে পারাবত, বদলাননি যাত্রীরা

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৭
বদলে গেছে পারাবত, বদলাননি যাত্রীরা পারাবত এক্সপ্রেস

শ্রীমঙ্গল থেকে: ট্রেনের সময় হয়ে গেছে। পড়িমরি করে ভিড় ঠেলে ছুটে এসে জানলেন ট্রেন লেট দুই ঘণ্টা। অতঃপর স্টেশনে বিভিন্ন টাইপের মানুষের আনাগোনা দেখা, বিরক্ত হয়ে বাতচিৎ শোনা। ন’টার ট্রেন বারোটায়। কিন্তু এ অপবাদ বুঝি এবার ঘুঁচলো।
 
 

শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) সকালে ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেসের বিমানবন্দর স্টেশনে পৌঁছার সময় ছিল ৭টা বেজে ৫ মিনিট। আমাদের গন্তব্য চায়ের দেশ শ্রীমঙ্গল পর্যন্ত।


 
৬টা ৫০ মিনিটে কান ফাটানো (১৫ দিন আগেও অর্ধেক মাইক নষ্ট ছিল) মাইকে ঘোষণা এলো কিছুক্ষণের মধ্যেই ঢাকা থেকে সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে এসে থামবে। অপেক্ষমাণ যাত্রীদের থেকে তখন তীর্যক মন্তব্য, কিছুক্ষণ মানে তো বুঝি, একঘণ্টা। পারাবত এক্সপ্রেসের ভেতরে একটি বগি
 
কিন্তু সবাইকে যেন কিছুটা ভুল প্রমাণ করে পোওওওও…. হুইসেল বাজিয়ে জানান দিলো লাল-সবুজে নতুন রূপের পারাবত সত্যি এসে হাজির। সময়টা শুনবেন? ৭টা ৩ মিনিট! মানে নির্ধারিত সময়েরও ২ মিনিট আগে। যাইহোক ভিড় ঠেলে উঠে তাপানুকূল কম্পার্টমেন্টে উঠে যথারীতি আসন বিড়ম্বনা। একটি আসন কেটে চলে গেছে অন্য পাশে। আমাদের গাইগুই শুনে অন্যরাও যেন জেগে উঠলো। তাদেরও অধিকাংশের সমস্যা একই। পরে নিজেরাই সমাধান করা হলো সে সমস্যা। সবার বক্তব্য একটাই, টিকিট বিক্রির সময় একটু যত্নবান কি হওয়া যায় না!

কিন্তু সবশেষ যাত্রার সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার তৈরি নতুন এ কোচে বেশ সুখানন্দ অনুভূত হলো। যে ট্রেনে কোনো তাপানুকূল কোচ ছিলো না, সেই ট্রেনেই দু’টি তাপানুকূল চেয়ার, দু’টি তাপানুকূল স্লিপার, একটি প্রথমশ্রেণির কোচ। মোট কোচ সংখ্যা ১৬। খাবারের কোচও বাড়িয়ে করা হয়েছে দু’টি। আসনগুলো আরামদায়ক, লাইট, ফ্যানের ব্যবস্থাও পর্যাপ্ত। আর অ্যাটেনডেন্টরাও বেশ হেল্পফুল।
 
ট্রেনের খাবারের মান নিয়েও সবসময় অভিযোগ ছিলো যাত্রীদের। ঠাণ্ডা কাটলেট ছিঁড়তেই হতো দাঁতভাঙা অবস্থা। মাঝে মধ্যে চিকেন দিলেও তা হয় ছিলো আধাকাঁচা, ঠাণ্ডা নয়তো ব্যাসনের দলার মতো। এখন খাবারের দায়িত্বে থাকা এস আর ক্যাটারিং মান বাড়ানোর যে কিছুটা চেষ্টা করছে সেটা বোঝা গেলো স্যান্ডউইচ মুখে দিয়ে। মুরগি ফ্রাইয়ের সাইজ আগের চেয়েও বড়, কাটলেটও খারাপ নয়। এছাড়া চা-কফি, অন্য শুকনো খাবারও রয়েছে পর্যাপ্ত। ট্রেনের ভেতরে পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন পরিবেশ

পেছনের আসনে বসা যাত্রী সাদিকুল পরিবার নিয়ে যাচ্ছিলেন সিলেটে। তাকে দেখা গেলো সব ধরনের খাবার কিনে খেতে। জিজ্ঞেস করতেই এ ব্যবসায়ী বললেন, এখন অন্তত খাবার কিনে খাওয়া যায়। আগের খাওয়ার কথা মনে উঠলেও কষ্ট হয়।
 
২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে চালু হওয়ার পর থেকে ইতিবাচক বলা যায় প্রায় সবদিক দিয়ে। কিন্তু কিছু সমস্যা যেটা রয়ে গেছে সেটা যাত্রীদের। সিটে বসা যাত্রীদের ঘাড়ে ব্যাগ-পোটলা নিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়া, সরতে বলে তেড়ে আসা, সিগারেট খাওয়া, যত্রতত্র ময়লা ফেলা বন্ধ হয়নি এখনও। তাপানুকূল কোচেও এটা কম নয়। আর শোভন শ্রেণীতে তো ভিড় ঠেলে হাঁটাই দায়।
 
আর স্টেশনে ট্রেন থামার পর কিংবা ঠিক ছেড়ে যাওয়ার মুহূর্তে মোবাইল, মানিব্যাগ, হাতব্যাগ ছিনতাই কমেনি একটুও। এ বিষয়টি শুধু যাত্রীদের একটু সচেতনতাই এড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন পারাবতে দায়িত্ব পালন করা রেলপুলিশের কনস্টেবল আমিনুল ইসলাম। তিনি খাবারের কোচে বসে বলেন, চোরেরা অভিনব পদ্ধতিতে চুরি করে। ট্রেনের উপর থেকে তিনজন একজন আরেকজনের পা উপর থেকে ধরে ঝুলিয়ে রাখে। ট্রেন ছাড়লেই জানালায় টার্গেট করা ব্যক্তির মোবাইল, ব্যাগ টান মেরে দে ছুট! পুলিশের এখানে কি করার আছে বলেন। উন্নত হয়েছে খাবারের মান
 
সিগন্যাল বাতির পোস্টে উঠে হাত বাড়িয়েও নাকি ছিনিয়ে নেওয়া হয় বিভিন্ন জিনিস। তবে সবচেয়ে ভয়ংকর তথ্য, দু’দিন আগেও খাবারের কোচে নাকি ব্যাগ নিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে বসেছিলেন এক যাত্রী। বাইরে থেকে পাথর ছুড়ে গ্লাস ভেঙে নাকি ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে তার ব্যাগ।
 
তার মতে, স্টেশনগুলোতে জানালার পাশে বসে একটু সচেতন হলেই এ দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব।
 
সার্বিক বিষয়ে ট্রেনটির পরিচালক মো. ফজলুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, পারাবতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। সেটি আপনি দেখেও বুঝতে পারছেন। শুধু সিটে বসা যাত্রীদের গায়ে পড়া বন্ধ করা যাচ্ছে না। কারণ স্ট্যান্ডিং টিকিট দিলে আমরা তো কিছু করতে পারি না। আর শুক্রবার এ সমস্যা বেশি হয়।
 
আর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও খাবারের বিষয়ে বলেন, একটি ট্রেনে একহাজারের বেশি যাত্রী। আমরা কজনকে ঠেকাবো। ট্রেনে সব ব্যবস্থাই আছে। কিন্তু যাত্রীরা যদি না মানে কে কি করবে। যাত্রীদের মানসিকতা বদলালে আমাদের ট্রেনও উন্নত দেশের মতো হয়ে যাবে ভবিষ্যতে। আর খাবারের মান, মেন্যুতেও আগের চেয়ে পরিবর্তন এসেছে। এটি নিয়ে আরও ভাবা হচ্ছে।
 
পরিচালকের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই জানালা দিয়ে বাইরে দেখা দিলো সবুজ চা-বাগান। মানে আমরা চায়ের দেশে এসে গেছি। পৌঁছানোর সময় কত জিজ্ঞেস করতেই বললেন, ১১টা ২৩ মিনিট। বলে বিদায় নিলেন। ট্রেন শ্রীমঙ্গল স্টেশনে পৌঁছে দিলো এর পাঁচ মিনিট আগেই!
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৭
এএ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।