ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অযত্নে-অবহেলায় সিরাজগঞ্জের ১ম প্রতিরোধ যুদ্ধ স্মৃতিফলক

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৭
অযত্নে-অবহেলায় সিরাজগঞ্জের ১ম প্রতিরোধ যুদ্ধ স্মৃতিফলক দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণ না করায় বিলুপ্ত হতে চলেছে স্মৃতিফলকটি। ছবি: বাংলানিউজ

সিরাজগঞ্জ: সবেমাত্র দেশের কিছু কিছু অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে, চলছে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ। পাবনা ও বগুড়া শহর দখলে নিয়েছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।

এ অবস্থায় একাত্তরের ২৪ এপ্রিল পাবনার ঈশ্বরদী থেকে ট্রেনযোগে সিরাজগঞ্জ মহকুমা শহর দখলে আসার পথে উল্লাপাড়া উপজেলার ঘাটিনা রেলওয়ে সেতুতে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে পাকিস্তানি সেনারা। তিন ঘণ্টা ধরে চলা সম্মুখযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে পরাজিত হয়ে পিছু হটে তারা।

এ যুদ্ধটিই সিরাজগঞ্জ জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ হিসেবে স্বীকৃত।

স্বাধীনতার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের শেষের দিকে জেলার প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধের স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে ঘাটিনা ব্রিজের পাশেই নির্মিত হয় স্মৃতিফলক। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণ না করায় বিলুপ্ত হতে চলেছে সেটি।

চলতি বছরের বন্যায় স্মৃতিফলকটির মূল অংশ ভেঙে একপাশে পড়ে গেছে। এখন পর্যন্ত সংস্কারের উদ্যোগ না নেওয়ায় মুক্তিযোদ্ধা-জনতার মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি, মহান মুক্তিযুদ্ধে ঘাটিনা ব্রিজের প্রতিরোধ যুদ্ধ সিরাজগঞ্জের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলেও বিষয়টি নতুন প্রজন্মের কাছে অজানাই রয়ে গেছে। একমাত্র স্মৃতিফলকটিও এখন জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। নতুন প্রজন্মের কাছে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে বীরত্বগাথার নিদর্শন হিসেবে জায়গাটি দ্রুত সংরক্ষণ করতে হবে।

উল্লাপাড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার গাজী খোরশেদ আলম স্মৃতিচারণ করে বাংলানিউজকে বলেন, রেলপথে পাকিস্তানি সেনারা সিরাজগঞ্জে আসছে, খবরটি আগের দিন ২৩ এপ্রিল মহকুমা প্রশাসক এ কে এম শামছুদ্দিন ও বেসরকারি সাব-সেক্টর পলাশডাঙ্গা যুবশিবিরের কমান্ডার আব্দুল লতিফ মির্জার কাছে পৌঁছে যায়। তারা ঈশ্বরদী-সিরাজগঞ্জ রেলসড়কে উল্লাপাড়া উপজেলার ঘাটিনা রেলসেতু এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিরোধের পরিকল্পনা করেন। চলতি বছরের বন্যায় স্মৃতিফলকটির মূল অংশ ভেঙে একপাশে পড়ে গেছে।  ছবি: বাংলানিউজ২৪ এপ্রিল সকাল দশটার দিকে লতিফ মির্জা ও  এ কে এম শামছুদ্দিনের নেতৃত্বে ২৫/৩০ জন মুক্তিযোদ্ধা ঘাটিনা রেলসেতুর কয়েকটি রেলপাত খুলে নদীতে ফেলে দিয়ে রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।

দুপুরের দিকে পাকিস্তানি সেনাদের বহনকারী ট্রেনটি ঘাটিনা সেতুর পশ্চিমপাশে এসে থেমে যায়। এ সময় করতোয়া নদীর পূর্বপাশে ও‍ঁৎ পেতে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন, পাল্টা গুলি চালায় পাকিস্তানিরাও।

তিন ঘণ্টা চলা সম্মুখযুদ্ধে ১১ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হলেও মাত্র দু’জন মুক্তিযোদ্ধা সামান্য আহত হন। বাধ্য হয়ে পিছু হটে পাকিস্তানি সেনারা।  

এ যুদ্ধের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি করেন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার খোরশেদ আলম।  

জেলা পরিষদের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা জানান, ঘাটিনা ব্রিজের পূর্বপাশে একটি লেক ছিল, যেখানে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন। ৭/৮ বছর আগে প্রায় ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে লেকটি মাটি ফেলে ভরাট করা হয়। এখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ ও দৃষ্টিনন্দন পার্ক করার কথা ছিল। কিন্তু অর্থ ও উদ্যোগের অভাবে হয়ে ওঠেনি।  

উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সন্দ্বীপ কুমার সরকার স্মৃতিফলকটি অবহেলায় পড়ে থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এটি নির্মাণ করেছিল। তবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। পরবর্তীতে বাজেট এলে এটির সংস্কার করা হবে।  

স্থানীয় সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম জানান, ‘ঘাটিনা রেলওয়ে সেতুর পূর্বপাড়ে স্মৃতির মিনার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। যেন আমাদের পরের প্রজন্ম ও উত্তরসূরীরা এটি দেখে জেলার প্রথম সম্মুখযুদ্ধের স্মৃতি স্মরণ করতে পারেন’।

বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।