ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ছেলেবেলার স্মৃতিময় ‘ফুজিফিল্ম’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৭
ছেলেবেলার স্মৃতিময় ‘ফুজিফিল্ম’ এক সময়ে ছবিতে ব্যবহার হওয়া ফুজি ফিল্মের কাভার, ছবি: মো. জাহাঙ্গীর আলম

মৌলভীবাজার: চলে যায় সময়। সে সময় ফিরে আসে না আর। ফিরে আসে না চলে যাওয়া সময়ের সেই মানুষগুলো। চলে যাওয়া নানা রঙের প্রেক্ষাপটগুলো। শিক্ষাজীবন অথবা কর্মমুখর জীবনের টুকরো টুকরো নানান স্মৃতিকণাগুলো। 

শিশুকাল, কৈশোর কিংবা তরুণ্য, জীবনের সবকটি পর্বের কেবল স্মৃতির ঘনঘটা। কর্মমুখর সকাল, ক্লান্ত দুপুর, অবসন্ন বিকেল, মায়াবী সন্ধ্যা কিংবা নিঃস্তব্ধ রাত –সবগুলোই জীবনস্মৃতির বর্ণিল মুহূর্ত জীবনের এই নানান বিরল মুহূর্তগুলোর অভ্যন্তর থেকে বেরিয়ে আসে ক্যামেরার আলো-ছায়ার দারুণ খেলা।

 

আমরা প্রত্যেকেই জীবনের নানান টুকরো টুকরো মুহূর্তগুলো ধরে রাখতে চাই ক্যামেরায়। আর সেটা যদি হয় বিশেষ প্রিয় কোনো মানুষ অথবা বিশেষ প্রিয় কোনো স্থানের ছবি – তবে তো চিরকালের স্বার্থকতাটুকু ফুটে উঠে তাতে।
 

পঁচিশ-ত্রিশ বছর পূর্বে আজকের দিনের মতো থ্রি-জি বা ফোর-জি মোবাইল, স্মার্ট ফোন বা ডিজিটাল ক্যামেরা এগুলো কিছুই ছিল না। ছিল না ‘সেলফি’ নামক ব্যক্তিগত ছবি তোলার বিশেষ কোনো সুবিধে। আমরা নির্ভরশীল ছিলাম ‘ফুজিফিল্ম’এর উপরই। এটি হারিয়ে যাওয়া আলোকচিত্রের বিশেষ একটি প্রযুক্তির নাম।  

অতীত জীবনের এই বিরল মুহূর্তগুলোকে যে একদিন তার বুকে ধারণ করে রেখেছিল তার নাম ‘ফুজিফিল্ম’। বহু আগেই তার দিন ফুরিয়ে গেছে। এখন তাকে কোথায়ও আর খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে একটা স্থানে সে ঠিকই রয়ে গেছে। গৌরবময় আসনে স্মৃতিময় উজ্জ্বলতাটুকু নিয়ে। তা হলো হৃদয়ের মণিকোঠরে।
আগরবাতির স্ট্যান্ড হিসেবে এখন এটি ব্যবহৃত হচ্ছে, ছবি: মো. জাহাঙ্গীর আলমবিশেষ প্রিয় কোনো মানুষটির মুখ কল্পনা করা মাত্রই স্বস্তি! গভীর প্রশান্তি। একান্ত নির্জন কল্পনায় সেই প্রিয়মুখ দোলা দেয়া মৃদু ঢেউয়ের মতো। হঠাৎ জীবনের কোনো এক মহা সন্ধিক্ষণে সেই প্রিয়মুখটির ছবি ধারণ করার বিরল সুযোগ হয়তো সবার হয় না। যাদের হয় তারা সৌভাগ্যবান। ব্যক্তিগত ক্যামেরার এই ফুজিফিল্মে সেই ‘বিশেষ’টিকে ধারণ করার পরের মুহূর্তটি আসলেই যুদ্ধ জয়ের মতো।  

বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) শ্রীমঙ্গল ফুজি ডিজিটাল স্টুডিওতে হঠাৎ টেবিলের উপর অবহেলার পড়েছিল একটি ফুজিফিল্ম। কর্তৃপক্ষের সাথে আলোপকালে জানা যায়, এটি এখন তারা ব্যবহার করেন আগরবাতি রাখার স্ট্যান্ড হিসেবে।

হায়রে, কী দিন ছিল! একশত বিশ টাকায় তখন একটি ফুজিফিল্ম কিনতে পাওয়া যেত। আর ছবির সংখ্যা মাত্র পঁয়ত্রিশটি। ক্যামেরায় ফিল্মটি ভর্তি করার সময় দুটি ছবি ধারণের ঘরে নষ্ট হয়ে অবশিষ্ট থাকতো তেত্রিশটি।

এ তেত্রিশটা ছবির নিয়ে কত পরিকল্পনা! কোনো কোনো জায়গার ছবি তোলা হবে, কার কার ছবি তোলা হবে, কয়টি করে ছবি তোলা হবে –এ নিয়ে কত প্ল্যান! বনভোজন বা ভ্রমণের কোনো পরিকল্পনা থাকলে আগের দিন কি কি কোনো কোনো বিষয়ের ছবি তোলা হবে তা নিয়ে লেগেই থাকতো বিশাল পরিকল্পনার ঢেউ।

আর এখন একটি ডিজিটাল ক্যামেরায় কত অসীম সুযোগ-সুবিধে। মাত্র তেত্রিশটি নয়, বলা যায় তেত্রিশ হাজার ছবি তোলার দারুণ কার্যক্ষমতা। এখানে এখন আর নেই ছবি তোলার কোনো পূর্ব পরিকল্পনা।
তবে অধিক প্রাপ্তিতে মেটে না তৃষ্ণা। ভরে না স্মৃতির চমকলাগা ভান্ডার। সেই তেত্রিশটা ছবির মাঝে সবগুলোই যে স্বচ্ছ ও সুন্দর হতো তা নয়; কিন্তু মাঝে মাঝে সেই ঝাপসা ছবির মাঝেও যে আনন্দ লুকায়িত ছিল তা আজকের দিনের ডিজিটাল ক্যামেরার অসংখ্য ঝকঝকে ছবির মধ্যে আর পাওয়া যায় না।

সেই ছেলেবেলার মাত্র তেত্রিশটি ফুজিফিল্মে ছবি তোলার আনন্দ সত্যিই বর্ণনাতীত। তার হৃদয়ের নিভৃত কোণে জমা হয়ে থাকা সারাজীবনের অর্জন। এ যেন পুরানো স্মৃতিঘেরা ছবিভুবনের একটি ছেলেবেলার টুকরো!

বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৭
বিবিবি/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।