গ্রামীণ জনপদে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে দৃশ্যমান কোনো উৎসবের আয়োজন না থাকলেও সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিদ্যালয় প্রাঙ্গনগুলোতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বলে দিয়েছে নতুন কিছু পাওয়ার আনন্দ কতোটা। একইসঙ্গে অভিভাবকদেরও যেন আনন্দের কোনো কমতি ছিলো না।
বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সাজিয়া সুলতানা সেতুর বাবা আব্দুর ছত্তার বাংলানিউজকে বলেন, সরকারের এই উদ্যোগের ফলে যারা বিত্তবান, মধ্যবিত্ত, হতদরিদ্র সবাই এককাতারে এসেছে। অনেকে বছরের এই সময় হয়তো সব বই কিনতে পারতো না, কিন্তু এখন সবাই বিনামূল্যে সরকারের পক্ষ থেকে বই পাচ্ছে। বছরের প্রথম দিনে বই পেয়ে পড়ালেখায় আগ্রহ বাড়ছে সকলের সন্তানদের, বাড়ছে ভালো ফলাফল ও বৃত্তির সংখ্যা। তাই অভিভাবকরাও নিশ্চিন্তে সন্তানদের পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারছেন।
বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী আঁখি আক্তারের মা পেয়ারা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, নতুন বছরে নতুন ক্লাসে উঠেই নতুন বই পাবে মেয়ে। শহুরে কোন আয়োজন না থাকলেও স্কুলের পক্ষ থেকে অভিভাবকদের মিষ্টি খাওয়ানো হয়েছে।
চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী নাদিয়া আক্তার বাংলানিউজকে জানায়, নতুন দিনে নতুন বই পাওয়াটা কতোটা আনন্দের তা বলে বোঝানো যাবে না। নতুন বই হাতে পাওয়ার জন্য কয়েকদিন আগে থেকেই মনের ভেতর আলাদা একটি আনন্দ কাজ করছিলো। তাই সকালে ঘুম থেকে উঠেই বিদ্যালয়ের আসার জন্য তৈরি হয়েছি। এখন বই পেলাম। তাই আজ থেকেই বইগুলো উল্টেপাল্টে দেখা শুরু হবে, ২/১ দিনের মধ্যেই পড়াশুনাও শুরু হয়ে যাবে।
একই ইউনিয়নের ১২৮নং চরআইচা-৩ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্যারেড গ্রাউন্ডে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসমিনা, দ্বিতীয় শ্রেণির আঁখি, সাবিহা, চতুর্থ শ্রেণির শ্রাবনীসহ অনেকেই সকাল ৯টার দিকে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলো বই পাওয়ার জন্য। বই পাওয়ার পর বড়দের মতো তারা মুখ ফুটে আনন্দের কথা বলতে না পারলেও, একচিলতে হাসি বলে দেয় তাদের আনন্দের কথা।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজী শরীফা তাজ বাংলানিউজকে বলেন, গ্রামীণ জনপদে বই উৎসবটা মনের ভেতরের আনন্দেই আলোকিত হয়। এখানে সন্তানদের সঙ্গে অভিভাবকরাও আসেন বই নিতে। কথা আর আলাপচারিতার মধ্য দিয়ে হাস্যোজ্জল হয়ে ওঠে বিদ্যালয় প্রাঙ্গন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১৮
এমএস/এনটি