ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

উদ্বোধনী দিনে লোকারণ্য সিলেট বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৮
উদ্বোধনী দিনে লোকারণ্য সিলেট বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র সিলেট চিড়িয়াখানায় দর্শনাথীদের ভিড়, ছবি: বাংলানিউজ

সিলেট: সিলেটে চিড়িয়াখানা! আর কি ঘরে বসে থাকা যায়? তাই সন্তানদের নিয়ে দেখতে ছুটে গেলেন নগরের সুবিদবাজারের বাসিন্দা গৃহবধূ রাবেয়া আক্তার।

বন্যপ্রাণী দেখতে এভাবে হাজার-হাজার লোকজন উদ্বোধনী দিনেই ঘুরে এলেন সিলেটের উপকন্ঠ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রে, তথা দেশের তৃতীয় সরকারি চিড়িয়াখানায়।  উদ্বোধনী দিনে লোকে লোকারণ্য ছিল সিলেটের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রটি।

সিলেট চিড়িয়াখানায় দর্শনাথীদের ভিড়, ছবি: বাংলানিউজইটপাথরের দালানে বন্দি মানুষগুলোর ব্যস্ত বিকেল কেটেছে শুক্রবারে (২ নভেম্বর)। ছুটির দিনের সব ব্যস্ততাকে পিছু ফেলে নারী-শিশুদের নিয়ে ছুটে চলা ছিল প্রকৃতির আচ্ছাদনে মোড়ানো টিলাগড় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রে।

শুক্রবার বিকেলে দেশের তৃতীয় সরকারি এই চিড়িয়াখানার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রীর সহোদর জাতিসংঘের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ড. একে আব্দুল মোমেন। উদ্বোধনের পর উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান ফটক। তখন মানুষের উপচেপড়া ভিড় সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে হয় বন কর্মচারিদের। সিলেট চিড়িয়াখানায় দর্শনাথীদের ভিড়, ছবি: বাংলানিউজসময় গড়ানোর সঙ্গে যেনো লোক সমাগম হাজার ছাড়িয়ে লাখের কোটায়। ফলে টিকিট কেটে লোকজন ঢোকানোর সুযোগও নিতে ব্যর্থ হন ফটকের দায়িত্বশীলরা। তবে পর্যটকরা ঘুরতে গিয়ে পর্যাপ্ত প্রাণী না থাকায় নিতান্তই হতাশ হয়েছেন। এতো বড়ো প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র দু’চারটি হরিণ’দু’টি জেব্রা, একটি অজগর, ১২টি ময়ূর আর বিভিন্ন ধরনের কিছু পাখি দেখে যেনো অতৃপ্ত মনেই ফিরেছেন অনেকে।

তাছাড়া বনের ভেতরে চলাচলের সড়ক দিয়ে বিকট শব্দে হর্ণ বাজিয়ে দ্রুত গতিতে মোটরসাইকেল আরোহীদের উৎপাত বিরক্তির ভাবটা বাড়িয়ে তোলে পর্যটকদের। বনের ভেতর দ্রুত গতিতে বাইকারদের উৎপাত পর্যটকদের দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে। সিলেট চিড়িয়াখানায় দর্শনাথীদের ভিড়, ছবি: বাংলানিউজসিলেটের রায়নগরের বাসিন্দা আবুল কালাম বাংলানিউজকে বলেন, তৃতীয় চিড়িয়াখানায় বন্যপ্রাণী দেখতে সন্তানদের নিয়ে ঘুরতে আসেন। কিন্তু যেভাবে ঢোল পেটানো হয়েছে, তার কিছুই নেই। তার মতে, দেখার মতো আগে পর্যাপ্ত বন্যপ্রাণী সংগ্রহ করে, তারপর দ্বার খুলে দেওয়া উচিত ছিল।

সালমান ফরিদ বলেন, বনের ভেতর সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো মোটরসাইকেল আরোহীদের উৎপাত। উচ্চস্বরে হর্ণ বাজিয়ে বেপোরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চালানো বন্ধ না করলে মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবে ঘুরতে পারবেন না। এখন যে অবস্থা, তাতে সব সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়।

সিলেটের প্রধান বন সংরক্ষক আর এস এম মনিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৭ সালে অবকাঠামোর কাজ শেষ করলে প্রশিক্ষিত জনবলের এটা চালু করা যায়নি। অর্থমন্ত্রীর ঐকান্তিক চেষ্টায় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রটি চালু করা হয়েছে। আমাদের দায়িত্ববোধ থেকেই সীমিত লোকবল দিয়ে দ্রুত শুরু করেছি। বিভিন্ন ধরনের প্রাণী নিয়ে এসেছি। লোকজনের উপস্থিতি তাদের আরো অনুপ্রাণিত করেছে। যে কারণে কিছুদিনের মধ্যে আরো বন্যপ্রাণী নিয়ে আসবেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা দিনে দিনে চিড়িয়াখানাটি আরো সমৃদ্ধ করবো। বাঘ-সিংহ নিয়ে আসবো। শিশুদের বিনোদনের জন্য বড় রকমের অ্যাকুরিয়াম করে রঙিন মাছ আনা হবে। চিত্রাল হরিণ কম রয়েছে, এটা দিনে দিনে বাড়াবো।

নগরীর উপকন্ঠে টিলাগড় ইকোপার্ক বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রের ১১২ একর জায়গা নিয়ে যাত্রা করলো চিড়িয়াখানাটি। প্রথম অবস্থায় গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্ক থেকে সংগৃহীত ৫৭ প্রজাতির প্রাণী ও শ্রীমঙ্গল থেকে একটি অজগর এনে এই চিড়িয়াখানার জন্য সংরক্ষণ করেছে সিলেট বনবিভাগ।

এরইমধ্যে দু’টি জেব্রা (মাদি ও পুরুষ), দু’টি হরিণ, একটি অজগর, ১২টি ময়ূর, ৩টি ম্যাকাও (এক ধরনের পাখি), মানুষের মতো কথা বলতে পারা আফ্রিকান গ্রে প্যারট ৪টি, সেনকো কোনারি (এক প্রজাতির প্যারট) ৪টি, সিলভার সিজেন্ট (বড় ধরনের ময়ূরের মতো পাখি) ৩টি, গোল্ডেন সিজেন ১টি এবং ৩০ লাভ বার্ড আনা হয়েছে।

উদ্বোধনের পর শিক্ষার্থীদের দেখার জন্য টিকিট মূল্য রাখা হয়েছে মাত্র ২ টাকা, অপ্রাপ্তদের জন্য ৫ টাকা এবং প্রাপ্তদের জন্য টিকিট ফি নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ১০ টাকা।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২, ২০১৮
এনইউ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।