ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মস্তিষ্কে টিউমার, অপারেশনে রাজি না জিন্নাত আলী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০১৮
মস্তিষ্কে টিউমার, অপারেশনে রাজি না জিন্নাত আলী

ঢাকা: দেশের সবচেয়ে লম্বা মানুষ মো. জিন্নাত আলী বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। তার মস্তিষ্কের টিউমার বড় আকার ধারণ করেছে। এর জন্য অপারেশন লাগবে। জিন্নাত চাইলে আগামী সপ্তাহেই তার অপারেশন করা হবে। কিন্তু তিনি রাজি হচ্ছেন না। 

রোববার (৪ নভেম্বর) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ডা. মিল্টন হলে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া।

তিনি বলেন, ২২ বছরের জিন্নাত প্রায় ৪ বছর আগে প্রফেসর ফরিদ উদ্দিনের অধীনে এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগে ভর্তি হন।

তখন তার মস্তিষ্কে এক ধরনের টিউমার পাওয়া যায়, ওই সময়ই তাকে অপারেশনের পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি অপারেশনে অসম্মতি জানিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে যান। গত ২২ অক্টোবর জিন্নাত আবার বিএসএমএমইউতে ভর্তি হন। তার সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর তার ডায়াবেটিস, ডিসলিপিডিমিয়া, অস্টিওআথাইটিস এভিং সেলুলেটিস অব রাইট লেগ ধরা পড়ে। তার মূল সমস্যা হলো অ্যাক্রোজাইজেন্টিজম যা মস্তিষ্কে পিটিওটারি টিউমারের জন্য। এ পর্যন্ত আমাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা বলছে, তার অপারেশন লাগবে। এখন পর্যন্ত তিনি অপারেশনে রাজি হননি৷ আমরা তাকে কাউন্সিলিং করছি।

এ ধরনের অপারেশন কতটা নিরাপদ-সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১৯৭৮ সালে আমি যখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিউরোসার্জারি বিভাগে কাজ করি তখন থেকেই এই টিউমারের অপারেশন হয়৷ কিন্তু তখন অতটা সাক্সেস ছিল না। এখন এই অপারেশন আগের চেয়ে অনেক নিরাপদ। তবে তার অপারেশনের সময় কিছু জেনারেল ফ্যাক্টর খেয়াল রাখতে হবে যেমন রক্তক্ষরণ, ইনফেকশন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এই অপারেশনের পর একজন রোগীর শরীরে পানি ধরে রাখার হরমোন কাজ করে না। ফলে প্রচুর প্রস্রাব হয়। দিনে ১৮ থেকে ২০ লিটার প্রস্রাব হতে পারে। এটাই আমাদের চিন্তা।  

অপারেশনের পর কি পুরোপুরি সুস্থ হবে জিন্নাত? সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, অপারেশনের পর আবার টিউমার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেক্ষেত্রে তাকে রেডিও থেরাপি দেওয়া হবে।

জিন্নাতের চিকিৎসা ব্যয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, এই রোগে টিউমার অপারেশনে ওটি চার্জ ১২ হাজার, ৩০ দিন হাসপাতালে থাকার খরচ (কেবিনে ১০২৫ টাকা দিন), অপারেশনের সময় প্রায় ১০ হাজার টাকার ওষুধ। প্রি-অপারেটিভ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসায় জিন্নাতের ২০ হাজার খরচ হয়েছে। তবে তার চিকিৎসার সম্পূর্ণ দায়ভার নিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

বিএসএমএমইউ'র এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, সে আমাদের বিভাগে ভর্তি থাকলেও তার প্রধান চিকিৎসা সার্জারি। তাই তাকে আমরা নিউরোসার্জারি বিভাগে স্থানান্তর করবো।  

বিএসএমএমইউ'র নিউরোসার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ টি এম মোশাররফ হোসেন বলেন, এই রোগীর মূল চিকিৎসা অপারেশনের মাধ্যমে টিউমার রিমুভ করা। তার পূর্ণ চিকিৎসা ও অপারেশন দেশেই সম্ভব। আমরা সব বিভাগ একসঙ্গে হয়ে তার চিকিৎসা করছি।

জিন্নাত আলী গত ২২ অক্টোবর থেকে বিএসএমএমইউ'র ৪০৪ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন।

জিন্নাত আলীর বাড়ি কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়া বড়বিল গ্রামে। বৃদ্ধ বাবা আমীর হামজার এক মেয়ে, তিন ছেলের মধ্যে জিন্নাত তৃতীয়। জিন্নাতের বয়স যখন ১২ সেসময় থেকেই দ্রুত উচ্চতা বাড়তে থাকে। প্রতি বছর দুই থেকে তিন ইঞ্চি করে আকৃতি বাড়তে থাকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১৮
এমএএম/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।